Ultimate magazine theme for WordPress.

সোলার প্যানেলে একসাথে শস্য ও বিদ্যুত উৎপাদন

0

কৃষিখবর ডেস্ক : “আমরা বছরে দুই মওসুমে চাষাবাদ করতাম। এমনকি এই মুহূর্তে যথেষ্ট বৃষ্টিও হচ্ছে না, যা সংরক্ষণ করে রাখা যেতে পারে,” বলেন এমিলিয়া লেমন্ড। তাঞ্জানিয়ার ভিয়াঞ্জি গ্রামের একজন কৃষক তিনি। তিনি নিজের চোখে দেখেছেন স্থানীয় শস্য এবং গরু-ছাগলের মতো গবাদিপশুর ওপর অনাবৃষ্টির কী ধরনের প্রভাব পড়ে। এর ফলে জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে আমাদের মতো লোকজনদের যারা কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাঞ্জানিয়ায় লেমন্ডের মতো প্রায় ৮০% কৃষকের আরো একটি সমস্যা আছে, আর সেটি হচ্ছে বিদ্যুতের সঙ্কট। খবর বিবিসি।

খরার মওসুমে এই সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। কারণ আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংস্থার ২০২০ সালের তথ্য অনুসারে দেশটির ৪০% বিদ্যুৎ আসে জলবিদ্যুতের উৎস থেকে।

তাঞ্জানিয়ায় প্রচুর সূর্যের আলো পাওয়া যায়। একারণে সৌর বিদ্যুৎ হতে পারে একটি নির্ভরযোগ্য উৎস। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ। এছাড়াও সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে জন্য প্রয়োজনীয় প্যানেল চাষযোগ্য মূল্যবান জমি দখল করে নিতে পারে।

এই সমস্যার একটি সমাধান এগ্রিভল্টাইক্স প্রযুক্তি যা লেমন্ডের মতো কৃষকদের জন্য উপকারী হতে পারে। এই পদ্ধতিতে একই জমির উপরে সোলার প্যানেল বসিয়ে সেখানে পরিবেশ-বান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন ও কৃষিকাজ করা সম্ভব।

এগ্রিভল্টাইক্স পদ্ধতিতে কয়েক মিটার উঁচুতে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়। এর ফলে নিচের জমিতে কৃষিকাজ করা যায়। শুধু তাই নয় এই পদ্ধতিতে বৃষ্টির পানিও সংরক্ষণ করা সম্ভব।
গ্রাফিক্স

বিশেষ করে শুষ্ক মওসুমের সময় এই পদ্ধতি অনেক বেশি উপকারী – যখন নদী নালা ও কূপ থেকে পানি তুলে জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য যন্ত্রপাতি ও প্রচুর বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়।

“অনেক কৃষকের জন্য এটা মারাত্মক সমস্যা কারণ তাদের কাছে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ নেই,” বলেন হামাদ এমকোপি। তিনি তাঞ্জানিয়ার গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করেন।

এমকোপির মতো লোকেরা যারা জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নিতে পারেন তাদের জন্যও বিদ্যুতের বিল আরেকটি বড় সমস্যা।

“বিদ্যুতের মূল্য কৃষকের আওতার মধ্যে নেই। আমাদের জন্য এটা একটা বোঝা। এবং এ কারণে ফসল উৎপাদনের খরচও অনেক বেড়ে গেছে।”

এমকোপি যেসব ফল উৎপাদন করেন সেগুলো শুকানোর জন্য তিনি সোলার প্যানেল বসাতে চান। এর ফলে উৎপাদিত ফলমূল তিনি দীর্ঘ সময় ধরে রেখে দিতে পারবেন, অপচয় কম হবে এবং একই সাথে এসব ফল তিনি পরে ভাল দামে বিক্রি করতে পারবেন।

তবে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বেশি জায়গার দরকার হয়।ব্রুকলিন ইন্সটিটিউশনের রিপোর্ট অনুসারে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাস-ভিত্তিক কেন্দ্রের যতোটুকু জায়গার প্রয়োজন হয়, প্রচলিত সৌর বিদ্যুৎ পদ্ধতির জন্য তারা চেয়েও অন্তত ১০ গুণ বেশি জায়গার দরকার হয়।

এর ফলে কৃষিকাজের জমি কমে যায় এবং কৃষকরাও সৌর-বিদ্যুতের ব্যাপারে আগ্রহী হয় না।

শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহযোগী গবেষক ড. র‍্যান্ডেল-বগিস বলেন, আমাদের এমন বিদ্যুৎ প্রয়োজন যা কম কার্বন তৈরি করবে। কিন্তু খাদ্য উৎপাদনের জন্য আমাদের জমিও প্রয়োজন… ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়া একটি বড় সমস্যা।

এই পদ্ধতিতে জমির অনেক উপরে প্যানেল বসানোর কারণে একইসাথে বিদ্যুৎ ও কৃষি উৎপাদন দুটোই করা সম্ভব হয়। এর ফলে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় এই পদ্ধতির ব্যাপারে কৃষকদের আপত্তি কম।

Leave A Reply

Your email address will not be published.