Ultimate magazine theme for WordPress.

দূষণের শিকার বাংলাদেশের মাটি

0

কৃষিখবর ডেস্ক : শিল্প দুষণ, প্রচুর রাসায়নিকের ব্যবহার এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে বিশ্বজুড়ে দূষণের কবলে পড়েছে মাটি। একই কারণে বাংলাদেশের মাটিও দুষিত হয়ে পড়েছে। এই মাটি দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবে কমে যেতে পারে ফসল উৎপাদন। খবর বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ান

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়েছে, শিল্প দূষণ, খনি, কৃষিকাজ ও দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মাটিকে বিষিয়ে তুলছে। অনেক দেশই মাটিদূষণ নিয়ে সচেতন নয়। দূষণকারী পদার্থের মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের ধাতু, সায়ানাইড, ডিডিটি ও নানা ধরনের কীটনাশক এবং পিসিবির মতো দীর্ঘস্থায়ী জৈব রাসায়নিক পদার্থ। দূষণের কারণে খাদ্য ও পানি অনিরাপদ হওয়ার পাশাপাশি ফসল উৎপাদনের ক্ষমতা কমে যাচ্ছে মাটির। বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রতিবছর শিল্পে রাসায়নিকের ব্যবহার বাড়ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে রাসায়নিকের ব্যবহার দ্বিগুণ হতে পারে।

ফার্মাসিউটিক্যালস, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, যা ড্রাগ-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া, প্লাস্টিকসহ নতুন নতুন দূষণকারী পদার্থ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও মাটির গুণগতমান দুর্বল হয়ে পড়ছে। মাটিতে রাসায়নিক উপাদানের পরিমাণ কমে আসছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাটির যত্ন না নেওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এর ফলে খাদ্য উৎপাদনে দীর্ঘ মেয়াদে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, সারা দেশের মাটিতেই প্রয়োজনের তুলনায় নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার, দস্তা ও বোরনের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া অঞ্চলভেদে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজের ঘাটতি রয়েছে।

ভবিষ্যতের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা ও কৃষিকাজে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। কৃষিকাজে রোবট থেকে শুরু করে ড্রোনের মতো বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহারও বাড়ছে। জাতিসংঘের হিসেবে ২০৫০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা হবে প্রায় ১ হাজার কোটি। আর তাই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টেকসই কৃষি ব্যবস্থা উদ্ভাবনের জন্য কাজ শুরু করেছেন গবেষকেরা।

নেদারল্যান্ডসের ওয়াজেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিজ্ঞানী উইজন্যান্ড সুক্কেল জানিয়েছেন, ফসলের ভিন্নতা কৃষিকাজের জন্য ভালো। এ পদ্ধতি মাটি ও জীববৈচিত্র্যের উন্নয়নে সহায়তা করে। ফসলের বৈচিত্র্যের কারণে পানিও সঠিকভাবে ব্যবহার হয়। এতে কীটপতঙ্গনির্ভর রোগের ঝুঁকি কমে। জীববৈচিত্র্যের জন্য ফসলের ভিন্নতা খুবই কার্যকর।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বে জীববৈচিত্র্য কমে যাচ্ছে। আর তাই চার বছর আগে ‘ফার্ম অব দ্য ফিউচার’ নামের একটি কর্মসূচি চালু করেছে নেদারল্যান্ডসের ওয়াজেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়। এ কর্মসূচির আওতায় কীটনাশক ও জীবাশ্ম জ্বালানি শক্তি ব্যবহার ছাড়া বেশি খাদ্য উৎপাদনে সক্ষম খামারব্যবস্থা উদ্ভাবনের কাজ করছেন গবেষকেরা। এ জন্য ভারী বৃষ্টিপাত বা খুব শুষ্ক মৌসুমের জন্য স্থিতিস্থাপক কৃষিব্যবস্থার নতুন উপায় খুঁজে পেতে কাজ করছেন তাঁরা।

ওয়াজেনিনজেন ইকোনমিক রিসার্চ ও স্ট্যাটিস্টিক্স নেদারল্যান্ডসের তথ্যমতে, ২০২১ সালে পশুপণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ৯.৪ শতাংশ। এতে পরিবেশের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে। এ জন্য গবেষকেরা মাটির মান উন্নয়নে জীববৈচিত্র্য বিকাশের জন্য কাজ করছেন। বর্তমান কৃষি ব্যবস্থায় মাটির গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। সমাধান হিসেবে শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদের জন্য বিশেষ নিষ্কাশনব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে ভূগর্ভে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সারা বছর পাম্প দিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে।

পোকামাকড়ের জন্য খাদ্য ও আশ্রয় নিশ্চিত করার জন্য কৃষি খাতে বহুবর্ষজীবী ফুলের ব্যবহার বাড়াতেও কাজ চলছে। বর্তমান কৃষিব্যবস্থায় সবকিছু এক সঙ্গে রোপণ করা হয়।এটা আসলে একধরনের পরিবেশগত মৃত্যু ডেকে আনছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.