Ultimate magazine theme for WordPress.

গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার

0

কৃষিখবর প্রতিবেদক : আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে মৌসুমের পাশাপাশি গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে পৃষ্ঠপোষকতা করছে সরকার। পেঁয়াজ চাষের প্রসার ও এর মাধ্যমে দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়াতে সরকার কৃষকদের বিঘা প্রতি ৯ হাজার টাকা প্রণোদনা দেওয়ার চিন্তা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সরকারের প্রণোদনায় দেশে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ ধীরে ধীরে বাড়ছে। চলতি মৌসুমে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

২০১৯ সালে ভারত পেঁয়াজের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর দেশে পেয়াজের দাম কেজিতে রেকর্ড ২৫০ টাকায় পৌঁছায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের সম্ভাবনা দেখে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়, যাতে অক্টোবর নভেম্বর মাসে লিন পিরিয়ডে যখন শীতকালীন পেয়াজের মজুদ কমে তখন গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানো যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুসারে, বিগত অর্থবছর কৃষকরা প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ মাঠ থেকে পেয়েছেন। পেঁয়াজের আবাদ ২০২২-২৩ অর্থবছরে বছরে ৮ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৭০০ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে।

ভারত বিশ্বে ২য় পেঁয়াজ উৎপাদনকালীন দেশ হওয়া সত্ত্বেও অক্টোবর, নভেম্বর মাসে পেঁয়াজের ব্যাপক ঘাটতি থাকে। ভারতে মোট উৎপাদনের মোট ২০% পেঁয়াজ গ্রীষ্মকালে আবাদ হয়। আর আমাদের দেশে আবাদ হয় ০.০১%

গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের সমস্যা : বারি কর্তৃক উদ্ভাবিত গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের বীজ চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল (বছরে প্রায় ৬০০-৭০০ কেজি)। বীজতলায় চারা উৎপাদন অনেক জটিল এবং প্রযুক্তি নির্ভর। অত্যধিক তাপমাত্রা এবং বর্ষায় চারার মৃত্যুহার অনেক বেশি। বর্ষাকালে পোকামাকড় এবং রোগবালাইয়ের উপদ্রব বেশি। ফসল কর্তনের পর কিউরিং এবং শুকানো জটিল। অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। ফসল কর্তনের পর সংরক্ষনে করা যায় না। উচু জমির স্বল্পতা। বন্যায় সম্পূর্ন পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

সঠিক এবং ভালো বীজ : স্বল্পজীবি এবং গাঢ় লাল রঙ্গের গ্রীষ্মকালীন বীজ সংগ্রহ করতে হবে (বারি পেঁয়াজ-৫ জাতটি মোটামুটি ভালো)।

পেঁয়াজের বীজ বপনের সময় ও নিয়ম : আগাম ও লেট এই দুই সময়ে বীজ লাগানো যায়। ফেব্রুয়ারী- মার্চে বীজ বপন করে ৪০-৪৫ দিনের চারা মার্চ- এপ্রিল মাসে এবং জুন-জুলাই মাসে বপন করে আগষ্ট- সেপ্টম্বর মাসে ৪৫ দিনের চারা লাগাতে হবে

পেঁয়াজের বীজ শোধণের উপায় : এক কেজি বীজে ২-৩ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম বা বেভিষ্টিন দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।

বীজতলা তৈরী : গুরুত্বপূর্ণ চারা উৎপাদনের কাজটি অনেক গুরুত্ব দিয়ে এবং দক্ষতার সাথে করতে হবে। ভালো মানের চারা উৎপাদন হলো গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদনের মূল চ্যালেন্জ। তাই পেঁয়াজের বীজতলা তৈরিতে আপনাকে খুব মনোযোগী হতে হবে।

৫০% শেড নেট বা পলি টানেলের ভিতর মাটি মিহি করে শোধণের পর ১ বাই ৩ মিটার বেড তৈরী করে ২৫-৩০ গ্রাম বীজ বপন করতে হবে।

পেঁয়াজ চাষের জন্য জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ : পদ্ধতিতে অর্থাৎ সমতল মাটি হতে ৬ ইঞ্চি উচু করে বেড বানাতে হবে। (আবশ্যক)। এতে ফিউজিরিয়াম এবং কোলিটোট্রিকাম জনিত রোগ কম হয়।

ড্রিপ ইরিগেশন বা স্প্রিং কুলার পদ্ধতিতে সেচ প্রয়োগ করলে ৪০-৫০% পানি কম লাগে ( সম্ভব হলে)। বারি কর্তৃক অনুমোদিত মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে। ৪০-৪৫ দিনের চারা মুল জমিতে রোপনের পর পরই সেচ দিয়ে দিতে হবে।

পেঁয়াজের পোকামাকড় ও রোগবালাই দমণ : পেঁয়াজের রোগগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো- থ্রিপস পোকার আক্রমণ। থ্রিপস পোকা দমণের জন্য ইমিডাক্লোরোপিড গ্রুপের যে কোন একটি ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন।

এছাড়া অন্যটি হলো- পার্পল ব্লোচ ছত্রাক রোগ, এটি দমণের জন্য আপনি রোভরাল অনুমোদিত মাত্রায় ১৫ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।

কিউরিং : জীবনচক্রের ১০২ দিন পর পেঁয়াজের শল্ক কান্দের সেল্ফ লাইফ বৃদ্ধির জন্য ১০ দিন কিউরিং করা প্রয়োজন। তবে বৃষ্টিপাত এবং আর্দ্রতা বেশি থাকায় সচরাচর কিউরিং সম্ভব হয় না।

গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের ফলনের পরিমাণ : উত্তম ব্যবস্থাপনায় (বারি পেঁয়াজ-৫) বিঘা প্রতি ৫০-৫৫ মন পেঁয়াজের ফলন হতে পারে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.