খুলনা প্রতিনিধি : চিংড়ি ঘেরখুলনায় বাগদা চিংড়ির উৎপাদন নিয়ে হতাশ মৎস্য চাষিরা। তাদের দাবি, ঘেরে চিংড়ির পোনা ছাড়ার পর মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। আবার মাছ মরে ভেসেও উঠছে না। ঘের থেকে এক প্রকারে মাছ উধাও হয়ে যাচ্ছে। ফলে ঘের মালিক ও চাষিরা খরচ ওঠানো নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
খুলনা জেলা পোনা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া রিপন বলেন, তারা এবার খরচ ওঠানো নিয়ে শঙ্কায় আছেন। কারণ কোনও ঘের থেকেই তারা চিংড়ি মাছ পাচ্ছেন না। আবার মাছ মরছেও না। মাছ ঘের থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা জুড়েই এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। কয়রায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার এবং পাইকগাছায় সাড়ে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে সাড়ে ৪ হাজার ঘের রয়েছে। সব ঘেরেই একই অবস্থা।
এ বিষয়ে কয়রা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ ধরনের কোনও অভিযোগ এখন পর্যন্ত তার কাছে কেউ করেননি। ঘেরে পোনা নষ্ট হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘খারাপ পোনা ঘেরে ছাড়া, ঠিকমতো নার্সিং না করা ও প্রয়োজনীয় খাবার না দেওয়ায় এমনটি হতে পারে। এক হাজার পোনা ছাড়া ঘেরে এক কেজি পরিমাণ নার্সারি খাবার দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু চাষিরা দেন না। আবার ঘেরে তিন থেকে চার ফুট পানি থাকা দরকার। কিন্তু ঘেরগুলোয় এক থেকে দেড় ফুট পানি থাকে। ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ব্যাকটেরিয়ার দাপট বেড়ে যায়। এতে পোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
তিনি আরও বলেন, পোনা ছাড়ার পর মনিটরিং করা প্রয়োজন। ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করা দরকার। কিন্তু চাষিরা তা করেন না। চাষিরা চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগের আধুনিক পরামর্শ মানতে চান না। তারা নিজস্ব ধ্যান-ধারণার ওপর এখনও নির্ভরশীল ও প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। ফলে বাগদা চিংড়ি চাষ করে চাষিরা কদাচিৎ সফল হলেও বেশিরভাগ সময় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
খুলনা জেলা পোনা ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি জিএম ইকরামুল ইসলাম বলেন, ‘মৎস্য কর্মকর্তারা মাঠে না এসে ঘরে বসে তদারকি করলে মাঠের চিত্র তারা কী করে পাবেন? তারা চাষিদের সমস্যাগুলো তারা জানেন না।’
দাকোপ উপজেলার চিংড়ি চাষি আসলাম শেখ জানান, লোনাপানি না পাওয়ায় চিংড়ি চাষে বিলম্ব হয়। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় চিংড়ি চাষিরা সমস্যায় পড়েন। মাছ চাষে সমস্যার পাশাপাশি রয়েছে চিংড়ির পোনার মূল্য গতবারের থেকে এবার বেশি। আর এখন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু ছাইদ জানান, অনাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টির কারণে তাপমাত্রার তারতম্য ঘটায় চিংড়ি খামারে রোগবালাই দেখা দেয়। যা গত মার্চ-এপ্রিলে প্রকট ছিল। হঠাৎ বৃষ্টি আর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে তাপমাত্রায় তারতম্য হয়। ঘেরের পানিতে অক্সিজেন স্বল্পতা সৃষ্টি হয়। যা উৎপাদন হ্রাস করে।
তিনি আরও জানান, গত বছর ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে ২৮ হাজার ৩৪৫ মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদন হয়। চলতি মৌসুমে জেলার ৫৬ হাজার ১৯৪ হেক্টর জমিতে এ পর্যন্ত ২৮ হাজার ৫৮৮ মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে।
//এআরএইচ//