রাঙামাটি প্রতিনিধি : পাহাড়ি এলাকায় শিল্প কারখানার গড়ে না ওঠায় সেখানকার লোকজন কৃষি নির্ভর। সেখানকার কৃষির উন্নয়নের জন্য ১৯৭৬ সালে কর্ণফুলি নদীর মোহনায় প্রায় ১০০ একর জমিতে গড়ে তোলা হয় রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। ৪৩ বছর ১৮টি উদ্যানতাত্ত্বিক ফল ও সবজির উন্নত জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি এই অঞ্চলের কৃষকের বাতিঘর হিসেবে কাজ করছে।
তিন জন বৈজ্ঞানাকি কর্মকর্তা ও ৬৫ জন কর্মকর্তা-শ্রমিক কাজ করেন এ প্রতিষ্ঠানে। শুধু ফলের জাত উদ্ভাবনই নয়, মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের নিরলস পরিশ্রমে পাহাড়ি অঞ্চলে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনে নীরবে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘগড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আনন্দ বিকাশ চাকমা বলেন, ‘রাইখালী কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ১০০টি বারি-৪ কমলা জাতের গাছ লাগিয়েছিলাম। গত বছর থেকে ফল আসতে শুরু করেছে। খাওয়া-দাওয়া, আত্মীয়-স্বজনকে দেওয়া পারও আমি ৩০ হাজার টাকার মতো ফল বিক্রি করেছি। বাগানের পরিচর্যা বাবদ বছরে ব্যয় হয় ১০/ ১৫ হাজার টাকা।’ তিনি আরও জানান, রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে থেকে নিয়মিত যোগাযোগ করে। কখন কী ওষুধ দিতে হবে এবং কীভাবে গাছের পরিচর্যা করতে হয় সেই বিষয়ে তারা খোঁজ-খবর রাখেন। সঙ্গে সঙ্গে সহযোগিতাও করেন।
একই এলাকার সুভাশ চাকমা বলেন, ‘বারি-৪ আমের জাতটি দিয়ে আমি বাগান করেছি। এবছর ফলন ও দাম ভালো পেয়েছি। দাম ভালো পাওয়ার একমাত্র কারণ রাইখালী কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে আমে ব্যাগিং পদ্ধতি। তারা আমাদের হাতে কলমে কাজটি শিখেয়েছে। ব্যাগিং পদ্ধিতর কারণে আম দেখতে ভালো হয় এবং দামও ভালো পাওয়া যায়।’
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, রাইখালী কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে তারা নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের কাজ করে। তাদের উদ্ভাবিত জাতগুলো কৃষি সম্প্রসারণ অফিস কৃষকের কাছে পৌঁছানোর কাজ করে। তাদের উদ্ভাবিত জাতের মধ্যে বারি আম-৮, বারি আম-১১, বারি আম-৪ বর্তমানে মাঠে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলতাফ হোসেন বলেন, পাহাড়ের কৃষির উন্নয়নে তারা কাজ করছেন। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি থেকে ১৮টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। যার মধ্যে ৯টি ফলের ও ৯টি সবজির জাত। নতুন উদ্ভাবিত আরও ৫টি ফলের জাত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
//এআরএইচ//