ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : পাটের ভালো দাম পাওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা খুশি। গত বছরের তুলনা এবার পাটের আবাদ বেশি হয়েছে। উৎপাদনও ভালো হয়েছে। বর্তমানে অন্যান্য ফসলের তুলনায় চাহিদা ও মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দিন দিন পাট চাষ বাড়ছে। এ জেলার জমিগুলো উঁচু হওয়ায় এবং জলাশয়ের অভাব থাকায় পাট পঁচানো নিয়ে কৃষকদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আফতাব উদ্দিন আহমেদ জানান, পাটের আঁশ ছাড়ানোর এবং শুকানোর কাজটি এখনও চলছে বলে মোট পাট উৎপাদনের হিসেবটা এখনো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কাছে আসেনি। সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসা ‘সোনালী আঁশ’ হিসাবে পরিচিত পাট আবার পুরনো গৌরব ফিরে পাচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর পাট আবাদে জেলার যে লক্ষ্য মাত্রার ছিল তার প্রায় ৯৯% পূরণ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ১৫০ হেক্টরের বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এবার পাট চাষের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৫ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৫ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় আবাদ হয়েছে ১ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় পাট আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। রানীশংকৈল উপজেলায় পাট আবাদ হয়েছে ৯৫০ হেক্টর জমিতে। পীরগঞ্জ উপজেলায় পাট আবাদ হয়েছে ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। হরিপুর উপজেলায় পাট আবাদ হয়েছে ৮০০ হেক্টর জমিতে। ঠাকুরগাঁওয়ে এবার বিভিন্ন জাতের পাট চাষ হয়েছে। এ অঞ্চলের কৃষকরা এবার দেশি, তোষা ও মেশতা ছাড়াও উঁচু মাটিতে কেনাফ এইচ বি-৯৫ জাতের পাট আবাদ করেছেন।
অপর দিকে মৌসুমের শুরুতেই ধানের বাজারে ধস নামায় হতাশ এ জেলার চাষিরা। ফলনে খুশি হলেও বিক্রি করতে গিয়ে তারা হতাশ হয়েছেন। উৎপাদন খরচই উঠেনি বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন। তবে ১৭০০-১৮০০ টাকা মন দরে পাট বিক্রি হওয়ায় তারা খুশি।
সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের গৌরিপুর গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার দুই বিঘা জমিতে ২৮ মন পাট হয়েছে। পাটের আশও ভালো হয়েছে। প্রতি মণ ১৮ শ’ টাকা দরে বিক্রি করেছি। পাট বিক্রি করে আমি ২৪ হাজার টাকা লাভ করেছি।’ একই গ্রামের কৃষক তসলিমউদ্দিন বলেন, ‘এক একর জমিতে পাট আবাদ করছি। মাত্র এক বিঘা জমির পাট বিক্রি করে ১২ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। আরও এক বিঘার পাটের আশ ছড়ানো হচ্ছে।’
জেলার রাইপুর ইউনিয়নের কৃষক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন,‘এবার পাটের ভালো দাম পেয়ে লাভবান হয়েছি। তবে পাট পঁচানো নিয়ে একটু সমস্যায় পরেছিলাম। পাট পঁচালে পানি নষ্ট হয়ে যায়। তাই মাছ চাষের জন্য ব্যবহার করা পুকুরে পাট পঁচানো যায় না। এজন্য বর্ষা মৌসুমে সাময়িকভাবে জমে থাকা ডোবাগুলোর পানি পাট পঁচানোর জন্য ব্যবহার করেছি।’
অন্যদিকে পাট কাটা থেকে শুরু করে আঁটি বাঁধা, পানিতে ফেলা, পঁচলে আঁশ ছাড়ানো ও ধুয়ে শুকাতে দেওয়া থেকে বাজারে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অনেক কাজ থাকে। একারণে পাট উঠানোর সময় অনেকে দৈনিক শ্রমিক হিসেবে কাজের সুযোগ পান। গৌরিপুরের কৃষি শ্রমিক আনসারুল বলেন, ‘এই এক মাস পাট কাটা, ধোয়া ও শুকানোর কাজ করে প্রতিদিন তিনি ৪শ থেকে ৫শ টাকা আয় করেছি। যে বছর আমার এলাকায় পাট আবাদ হয় না, সে বছর এই আয়টা হয় না। একই কথা বলেন নারগুনের সাহাবুল, আলী আজগর ও রহিম এবং শুখান পুকুরিয়ার হেমবালা, শরীফা।
ঠাকুরগাঁও কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, ‘পাট চাষে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। পোকার আক্রমনেও পাটের তেমন ক্ষতি হয় না। আশা করি এবার এ জেলায় গত বছরের চেয়ে বেশি পাট উৎপন্ন হবে। বর্তমানে পাটের দামও ভালো। তাই কৃষকরা লাভবান হবেন বলে মনে করছি।’
//এআরএইচ//