Ultimate magazine theme for WordPress.

২০১৯-২০ অর্থবছরের ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পাস

কৃষিতে বরাদ্ধ ১৪ হাজার ৫৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা

0

আতিকুর রহমান : কৃষিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ে ১৪ হাজার ৫৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্ধ দিয়ে জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুর দেড়টায় জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল উত্থাপিত ‘২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্য অর্থবছরের কার্যাদি নির্বাহের জন্য সংযুক্ত তহবিল হতে অর্থ প্রদান ও নির্দিষ্টকরণ বিল’ কণ্ঠভোটে পাসের মাধ্যমে নতুন অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন লাভ করে। এটি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা ১১তম বাজেট। ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ। সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামের এ বাজেট আগামীকাল ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সংসদে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সদস্যরা ৪৮৪টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দাবী ও ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়। বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সদস্যদের আলোচনার পর সবগুলো প্রস্তাব কণ্ঠভোটে বাতিল হয়।

একাদশ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয় গত ১১ জুন, এরপর ১৩ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর ২৫৫ জন সাংসদ ৫১ ঘণ্টা ৫২ মিনিট আলোচনার পর গতকাল বাজেটটি প্রস্তাবিত অবস্থাতেই পাস হয়।

৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের চেয়ে প্রায় ২২ শতাংশ বেশি। পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬০ হাজার ১০৯ কোটি টাকা ব্যয় হবে শুধু প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে। বাজেটে রাজস্ব আহরণ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে কর ও কর-বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্বের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা।

নতুন অর্থ বছরের বাজেটে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ খাত থেকে রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ১৭ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। এছাড়া আমদানি শুল্ক থেকে ৩৬ হাজার ৪৯৮ কোটি, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৪৮ হাজার ১৫৩ কোটি, রফতানি শুল্ক থেকে ৫৪ কোটি, আবগারি শুল্ক থেকে ২২৩৯ কোটি এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১৬৭৭ কোটি টাকা আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। বাজেটে আয়ের উৎস হিসেবে বৈদেশিক অনুদানের ওপর নির্ভরতা রয়েছে। অনুদানের পরিমাণ চলতি অর্থবছরের চেয়ে বাড়িয়ে ৪১৬৮ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে।

এবারের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া মূল্যস্ফীতির চাপ ৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেটে জিডিপির ৫ শতাংশ ঘাটতি ধরা হয়েছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি দাঁড়াবে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি। ঘাটতি অর্থায়নে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। এর মধ্যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ৪৭ হাজার কোটি টাকা, বৈদেশিক উৎস থেকে ৬৪ হাজার কোটি টাকার সংস্থান করা হবে।

কৃষিতে ভর্তুকি বাড়ানো-সুদ মওকুফের দাবি : কৃষিখাতে ভর্তুকি বাড়ানো ও কৃষি ঋণের সুদ মওকুফের দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ছাঁটাই প্রস্তাব অংশ নিয়ে এ দাবি জানান বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে প্রস্তাবিত দায়যুক্ত ব্যয় ব্যতীত অন্যান্য ব্যয় সম্পর্কিত মঞ্জুরি দাবির ওপর ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এ সময় ৫৯টি দাবির ওপর এই ৯ জন সংসদ সদস্য ৪৮৪টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন। তবে এরমধ্যে মাত্র চারটি মন্ত্রণালয়ের দাবির ওপর তারা আলোচনা করেন। মন্ত্রণালয়গুলো হলো- কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বাকিগুলো কণ্ঠভোটে পাস হয়।

এরমধ্যে কৃষিখাতে বরাদ্দের বিরুদ্ধে ছাঁটাই প্রস্তাব দিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সাংসদরা অভিযোগ করেন, দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ ও খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশ হলেও কৃষকরা উৎপাদিত ফসলের দাম পাচ্ছেন না। ধানের দাম না পেয়ে আগুন দিয়ে ক্ষেতের ধান পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনাও কোথাও কোথাও ঘটেছে। হাজার-হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপিরা নিয়ে গেলেও সামান্য ঋণ নেওয়ার কারণে ৪৫ হাজার কৃষকের বিরদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। কৃষকদের ঋণ কখনও মওকুফ করা হয় না। অথচ ঋণখেলাপিদের বিরদ্ধে মামলা হয় না। সরকারকে কৃষকবান্ধব হতে হবে, মিলার বান্ধব নয়। কৃষকদের ঋণের সুদ মওকুফ ও পর্যাপ্ত ভর্তুকি দিতে হবে।

সংসদের বিরোধী দলের সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, দেড় লাখ কৃষকের ঘাড়ে সার্টিফিকেট মামলা। যারা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় না, গ্রেফতার হয় না। অথচ গরিব কৃষক গ্রেফতার হয়। আমি প্রস্তাব করছি। কৃষি ঋণ আদায় এ মুহুর্তে স্থগিত রাখতে হবে। ঋণের সুদ মওকুফের ঘোষণা দিতে হবে। কৃষক ধানের দাম পেলে এর পর ঋণ পরিশোধ করবে।

গণফোরামের সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, কৃষিতে গত কয়েক বছর ধরে নীরব বিপ্লব হয়েছে। এর জন্য কৃষকরা পরিশ্রম করছে। সেই কৃষক এখন ধানের দাম পাচ্ছে না। কৃষকের জন্য পর্যাপ্ত ভর্তুকি দাবি করছি।

বিএনপির সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, কৃষিখাতে প্রতি বছর ভর্তুকি কমছে। ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার মতো কোনো পদক্ষেপের কথা বাজেটে নেই। কৃষিখাতে ভর্তুতি কমিয়ে দেওয়া হলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে।

বিরোধী দলের সদস্যদের বক্তব্যের পর কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের রফতানি আয় অনেক বেশি। এটা মূলত পোশাকখাত ভিত্তিক। আমরা কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ করতে পাড়লে রফতানি আয় বাড়াতে পারবো। বিএনপি সরকারের আমলে সারের দাবিতে আন্দোলন করায় ১৮ জন ও বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলন করায় কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমাদের সরকারের সময় কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে ভর্তুকি প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এটাকে প্রধানমন্ত্রী বলেন বিনিয়োগ। ধানসহ ফসলের দাম কম এটা সাময়িক। যে যে কারণে দাম কমছে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
//এআরএইচ//

Leave A Reply

Your email address will not be published.