Ultimate magazine theme for WordPress.

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শার্শা খাদ্য গুদামে ধান কেনার অভিযোগ

0

বেনাপোল প্রতিনিধি : যশোরের শার্শা উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কৃষকরা তাদের ধান সরাসরি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে বিক্রি করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা। তাদের অভিযোগ দালাল ছাড়া কেউ এখানে ধান বিক্রি করতে পারছে না। এ কারণে প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা।

শার্শা উপজেলায় ২৬ মে থেকে সরকারিভাবে বোরো ধান সংগ্রহ শুরু হয়েছে এবং শেষ হবে আগামী ৩১ আগস্ট । শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল বলেন,‘আমার দায়িত্ব শুধু প্রকৃত কৃষকদের নামের তালিকা তৈরি করা। সেই হিসাবে আমি ৯ ধাপে প্রায় ৩ হাজার ২০০ কৃষকের তালিকা খাদ্য অফিসে পাঠিয়েছি। ৬৫২ মেট্রিকটন ধান কেনার কথা থাকলেও তারা এ পর্যন্ত ১৫০ মেট্রিকটন ধান কিনেছে। তাদের ইউনিয়ন পর্যায়ে গিয়ে ধান কেনার কথা থাকলেও সেখানে যাচ্ছেন না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের দুইজন কর্মকর্তা ও কর্মচারিসহ প্রতিটি ইউনিয়নের কয়েকজন আড়ৎদার মিলে একটি সিন্ডিকেট হয়েছে। এ সিন্ডিকেট ছাড়া কেউ খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে ধান বিক্রি করতে পারছে না। সাধারণ কৃষকরা গেলে ধান কেনা শেষ বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শার্শা উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৬৫২ মেট্রিক টন। তালিকাভুক্ত কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ২৬ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৩ মেট্রিক টন ধান কেনার কথা ছিল। কিন্তু উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস ঘোষণা দিয়েছে একজন কৃষকের কাছ থেকে ১৫ মণের বেশি ধান কেনা হবে না।

ইউনিয়ন পর্যায়ে গিয়ে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার কথা থাকলেও এ দফতরের কর্তা ব্যক্তিরা তা মানছেন না। তারা তালিকাভুক্ত কোনও কৃষক ধান নিয়ে গেলে ধানে ময়েশ্চার বেশি, চিটা আছে ইত্যাদি বলে ফেরত দিচ্ছে বলে কৃষকদের অভিযোগ। কিন্তু পরক্ষণেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান জমা দিলে অফিস ধান কিনে নিচ্ছে।

প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্রের ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণ বুরুজ বাগানের এক কৃষক জানান, সরকার ঘোষণা করেছে যে সব কৃষকের ভর্তুকির কার্ড আছে তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান সংগ্রহ করা হবে। নিয়ম অনুযায়ী আমি অফিসে গেলে লেবার ও কর্মকর্তারা বলেন ধান নেওয়া শেষ হয়ে গেছে। তাই আমাকে ফিরে আসতে হল। আমি ধান বিক্রি করতে পারিনি। কিন্তু এখনও তারা ধান নিচ্ছে।

নিজামপুর ইউনিয়নের এক কৃষক জানান, অনেকের কোনও জমি নেই কিন্তু ভর্তুকির কার্ড আছে। তাদের কার্ড ব্যবহার করে এক শ্রেণির লোক ধান সংগ্রহ করে উপজেলা খাদ্য অফিসে বিক্রি করছে। অথচ প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যানরা গত ১৩ জুন শার্শা উপজেলার মাসিক সভায় কেন ইউনিয়ন পর্যায়ে গিয়ে ধান কেনা হচ্ছে না জানতে চাইলে হৈচৈ শুরু হয়ে যায়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক মুমার মণ্ডল এসময় খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করলে তিনি জানান তাদের দফতরে জনবল কম থাকায় ইউনিয়ন পর্যায়ে গিয়ে ধান কেনা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু জানান, সরকার চাচ্ছে মাঠ পর্যায় থেকে ধান কিনতে। ইউনিয়নে গিয়ে ধান না কিনলে সরকারের উদ্দেশ্য সফল হবে না। ফুড গোডাউনে যা করা হচ্ছে তা আদৌও কাম্য নয়। সিন্ডিকেটের কিছু সদস্য কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মণ্ডল জানান, ফুড গোডাউনের কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে গিয়ে ধান সংগ্রহ করতে হবে। কৃষকরা যাতে সরাসরি ধান বিক্রি করতে পারে এ ব্যাপারে প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বার যদি সহযোগিতা করেন তা হলে সমস্যাটা আর থাকবে না। আমরা কোনও ভাবেই ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট হতে দেবো না।
//এআরএইচ//

Leave A Reply

Your email address will not be published.