Ultimate magazine theme for WordPress.

ঢাকায় দুধ ও দই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা দাখিলের নির্দেশ

দুধ নিয়ে বিএসটিআই’র স্ববিরোধী বক্তব্যে হাইকোর্টের অসন্তোষ

0

কৃষিখবর প্রতিবেদক : বাজারে থাকা লাইসেন্সবিহীন দুধ ও দইয়ের বিষয়টি বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) দেখার বিষয় নয় বলে শুনানিতে হাইকোর্টকে জানানো হয়। শুনানির আরেক পর্যায়ে লাইসেন্সবিহীন দুধ ও দই কোম্পানির পণ্য ধ্বংস করার অনুমতি চায় বিএসটিআই। লাইসেন্সবিহীন দুধ ও দইয়ের বিষয়ে বিএসটিআই’র এমন স্ববিরোধী বক্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এ সময় বিএসটিআইয়ের লাইসেন্সধারী ও লাইসেন্সহীন যেসব প্রতিষ্ঠান ঢাকার বাজারে দুধ সরবরাহ করে, বিএসটিআইকে দুই সপ্তাহের মধ্যে তাদের নামের তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

আজ রবিবার এ সংক্রান্ত রিটের শুনানিকালে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। আদালতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। বিএসটিআই’র পক্ষে ছিলে ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান ( মামুন)। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না।

শুনানির শুরুতে বিএসটিআই’র আইনজীবী সরকার এম আর হাসান আদালতকে বলেন, ‘বিএসটিআই ১৮১টি পণ্যের লাইসেন্স দিয়ে থাকে। তার মধ্যে দুধ অন্যতম। এ পর্যন্ত পাস্তুরিত দুধ ও দই বাজারজাত করণের জন্য ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেখভাল করার দায়িত্ব বিএসটিআইয়ের। এর বাইরে কারা দুধ ও দই বাজারজাত করছে, সেটা দেখার দায়িত্ব বিএসটিআইয়ের নয়।’

আদালত বলেন, ‘লাইসেন্স দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো দেখার দায়িত্ব আপনাদের হলে, লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানগুলোকেও দেখার দায়িত্ব আপনাদের ওপর পড়ে। কিন্তু আপনারা বলছেন, দেখার দায়িত্ব আপনাদের না। আপনাদের এই বক্তব্য এফিডেভিট আকারে আদালতে দাখিল করুন।’

এরপর বিএসটিআইয়ের আইনজীবী আরও বলেন, ‘ঢাকায় অভিজাত দোকানগুলোতে এই ১৮টি কোম্পানির দুধ ও দই ছাড়া লাইসেন্সবিহীন কোম্পানির দুধ-দই বিক্রি হয় না। ঢাকার বাইরে স্থানীয়ভাবে এসব বিক্রি হয়।’

তখন আদালত জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ল্যাবের পরিচালক প্রফেসর ড. শাহনীলা ফেরদৌসীর একটি প্রতিবেদন দেখিয়ে বলেন, ‘গুলশানের অভিজাত দোকান, সুপারশপগুলোতে লাইসেন্সবিহীন কোম্পানির দুধ বিক্রির তথ্য এখানে উল্লেখ রয়েছে। আপনার বক্তব্য সঠিক নয়।’

একপর্যায়ে আদালত বিএসটিআইয়ের আইনজীবী ও কর্মকর্তার বক্তব্যে অসন্তোষ ও বিস্ময় প্রকাশ করেন। আদালত বলেন, ‘মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে? লাইসেন্স নেই; অথচ দুধ বাজারজাত করছে। এটা দেখার দায়িত্ব কার?’

জবাবে বিএসটিআই’র আইনজীবী বলেন, ‘এটা দেখার দায়িত্ব কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের।’ এ সময় দুদকের আইনজীবী মামুন মাহবুব ও রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন আদালতকে বলেন, ‘আইনে এসব দেখার বিষয়ে বিএসটিআইকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা দায়িত্ব এড়িয়ে অনে্যর ওপর দোষ চাপাচ্ছে। এ জন্য আদালতকে কঠোর হতে হবে।’

এরপর আদালত বিএসটিআইকে লাইসেন্স দেওয়া ও লাইসেন্সবিহীন কোম্পানির পণ্যের তালিকা দিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু কৌশলে বিএসটিআই’র আইনজীবী সরকার এম আর হাসান আদালতকে বলেন, ‘আপনারা তালিকা না চেয়ে আমাদের লাইসেন্সের বাইরে যারা দুধ বাজারজাত করছে তাদের পণ্য ধ্বংস করার নির্দেশ দেন।’

বিএসটিআই’র আইনজীবীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত বলেন, ‘আপনারা (বিএসটিআই) স্ববিরোধী কথা বলছেন। একটু আগে বললেন, দেখার দায়িত্ব আপনাদের না। এখন আবার ধ্বংস করার অনুমতি চাচ্ছেন। এসব বাদ দিন। আগে আপনারা তালিকা দাখিল করুন। বাকিটা আদালত দেখবেন।’

এরপর দুই সপ্তাহের মধ্যে বিএসটিআইকে তাদের লাইসেন্স দেওয়া ও বাজারে পাওয়া যায় এমন লাইসেন্সবিহীন দুধ ও দই বাজারজাতকারী কোম্পানির তালিকা দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘দেশে পুষ্টির অন্যতম প্রধান জোগান হিসেবে বিবেচিত গরুর দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যে এবার মিলেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নানা উপাদান। ১০ ফেব্রুয়ারি এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে সরকারের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের প্রতিবেদনে। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সভাকক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ অন্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে।’

‘জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গরুর খোলা দুধে অণুজীবের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪ থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে ৭.৬৬ পর্যন্ত।’ এরপর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মামুন মাহবুব।

পরে আদালত দুধে সিসা মিশ্রণকারীদের শাস্তির আওতায় আনার ব্যর্থতা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন। এছাড়া, রুলে দুগ্ধজাত খাবারে ভেজাল প্রতিরোধে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি খাদ্যে ভেজালের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির (মৃত্যুদণ্ড) কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

পাশাপাশি আদালত ঢাকাসহ সারাদেশের বাজারে কোন কোন কোম্পানির দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক এবং সিসা মেশানো রয়েছে, তা নিরূপণ করে একটি জরিপ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দেন। জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টের নির্দেশের পর বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. মাহবুব কবিরকে আহ্বায়ক করে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। এরপর ওই কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
//এআরএইচ//

Leave A Reply

Your email address will not be published.