আতিকুর রহমান : ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ১ হাজার ২৬১ কোটি টাকা বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষকরা বর্তমান দামেই সার কিনতে পারবেন। এ লক্ষ্যে সার, বীজ, কীটনাশক আমদানিতে শূণ্য শুল্কহার অব্যাহত থাকবে। এছাড়া কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ২০% প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে কৃষককে বাঁচাতে ‘শস্য বীমা’রও প্রস্তাব রয়েছে আসন্ন বাজেটে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদের স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ ঘোষণা দেন।
আগের দামেই সার : ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষকের সারের দাম বাড়ানো হয়নি। চাষীরা আগের দামেই সার পাবেন। কৃষিতে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সারের আমদানিমূল্য যাই হোক না কেন, আগের দামেই কৃষকের কাছে সেগুলো বিক্রি করবে সরকার। একই সঙ্গে কৃষকদের প্রতি সরকারের কৃষি প্রণোদনাও থাকবে অব্যাহত।
প্রস্তাবিত বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, কৃষিতে রাসায়নিক মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রণোদনা দীর্ঘদিন ধরে চালু আছে এবং এর ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় তা কৃষিপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ভূমিকা রেখেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই খাতে ৫ হাজার ২০১ কোটি টাকা সরকারের ব্যয় হয়। এবারও কৃষক পর্যায়ে সারের মূল্য অপরিবর্তিত রাখার সুপারিশ করায় এ খাতে ব্যয় অপরিবর্তিত থাকবে।
তিনি বলেন, প্রধান প্রধান রাসায়নিক সারের আমদানি মূল্য কোনো কোনো সময় বাড়লেও কৃষকদের স্বার্থে সরকার দেশীয় বাজারে সারের বিক্রয়মূল্য অপরিবর্তিত রেখেছে যা পরোক্ষভাবে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করেছে। আগের মতো আমদানি খরচ যাই হোক না কেন, আগামী অর্থবছরে রাসায়নিক সারের বিক্রয়মূল্য অপরিবর্তিত থাকবে এবং কৃষি প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে।
সার, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদি আমদানিতে শূন্য শুল্ক হার : বহুমুখী পাটপণ্য উদ্ভাবনের গবেষণা কার্যক্রম চলমান থাকবে। আমদানি খরচ যাই হোক না কেন আগামী অর্থবছরেও রাসায়নিক সারের বিক্রয়মূল্য অপরিবর্তিত রাখা হবে ও কৃষি প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে। কৃষি খাতের প্রধান উপকরণসমূহ বিশেষ করে সার, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদি আমদানিতে শূন্য শুল্ক হার অব্যাহত রাখা হয়েছে। এছাড়া কৃষি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে রেয়াতি শুল্ক হারও অব্যাহত রাখা হয়েছে।
মৎস্য, পোল্টি ও ডেইরি খাতের টেকসই উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে উক্ত খাতের খাদ্য সামগ্রী ও নানাবিধ উপকরণ আমদানিতে বিগত সময়ে প্রদত্ত রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রেখে নতুন উপকরণ ও যন্ত্রপাতিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
রপ্তানিতে ২০% নগদ প্রনোদনা : প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষির উন্নয়নের জন্য স্বাভাবিক বিনিয়োগের অতিরিক্ত হিসেবে কৃষিপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা ও কৃষি ক্ষেত্রে বিদ্যুত চালিত সেচযন্ত্রের ব্যবহারের জন্য বিদ্যুত বিলের ওপর ২০ শতাংশ রিবেট প্রদান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল।
নতুন অর্থবছরে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবেলায় প্রায়োগিত গবেষণার মাধ্যমে বন্যা, খরা, লবণাক্ত ও অধিক তাপমাত্রা সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন কার্যক্রম জোরদার করা হবে। শস্যের বহুমুখীকরণ কার্যক্রম সম্প্রসারণ, জৈব বালাই ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম জনপ্রিয়করণ, খামার যান্ত্রিকীকরণ জোরদার করা হবে। বহুমুখী পাটপণ্য উদ্ভাবনের গবেষণা কার্যক্রম চলমান থাকবে।
মৎস্য, পোল্টি ও ডেইরি খাতের টেকসই উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে উক্ত খাতের খাদ্য সামগ্রী ও নানাবিধ উপকরণ আমদানিতে বিগত সময়ে প্রদত্ত রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রেখে নতুন উপকরণ ও যন্ত্রপাতিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
কৃষক বাঁচাতে শস্য বিমা : ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফসলহানির ক্ষতি থেকে কৃষককে বাঁচাতে আসছে শস্য বিমা। আর্থিক ক্ষতি থেকে কৃষকদের রক্ষার্থে শস্য বিমা একটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু করা হবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানির ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক। এ থেকে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতি থেকে কৃষকদের রক্ষার্থে শস্য বিমা একটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু করা হবে। এ ছাড়া বৃহৎ প্রকল্পের মাধ্যমে সৃষ্ট সম্পদের বিমা দেশীয় বিমা কোম্পানির মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। প্রয়োজনে একাধিক কোম্পানির সঙ্গে যৌথ বিমা সম্পাদনের ব্যবস্থা করা হবে। লস অব প্রফিটের জন্য বিমা চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে। কারখানা-শ্রমিকদের জন্য দুর্ঘটনাজনিত বিমা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
মন্ত্রী আরো বলেন, সরকার গবাদিপশু বিমা চালু করা, দরিদ্র নারীদের ক্ষুদ্র বিমার আওতায় আনার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি করা এবং সরকারি কর্মচারী ও সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্য বিমা চালুর পরিকল্পনা করেছে। বিমা খাতে ডিজিটাইজেশন ও এর পেনিট্রেশন বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয়েছে। জীবন বিমা আমাদের দেশে অনেক দুর্বল, এটাকে জনপ্রিয় করা গেলে এটা অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ^াস করি।
নতুন অর্থবছরে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবেলায় প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে বন্যা, খরা, লবণাক্ত ও অধিক তাপমাত্রা সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন কার্যক্রম জোরদার করা হবে। শস্যের বহুমুখীকরণ কার্যক্রম সম্প্রসারণ, জৈব বালাই ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম জনপ্রিয়করণ, খামার যান্ত্রিকীকরণ জোরদার করা হবে।
কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি বাড়বে : প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কৃষকদের ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণে চাল আমদানির ওপর বিদ্যমান সব্বোর্চ ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক ও সম্প্রতি আরোপিত ২৫ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে।
//এআরএইচ//