Ultimate magazine theme for WordPress.

২০০ টাকায় ২২ কেজি পেঁয়াজ

গ্রামে গ্রামে মাইকিং

0

মেহেরপুর প্রতিনিধি : ‘পেঁয়াজ কিনবেন গো পেয়াজ!’ ১০০ টাকায় ১০ কেজি। ২০০ টাকার কিনলে পাচ্ছেন ২২ কেজি। এভাবেই মেহেরপুরের বিভিন্নি গ্রামে গ্রামে মাইকিং ও বিভিন্ন অফারে বিক্রি করা হচ্ছে কৃষকের উৎপাদিত সুখসাগর জাতের পেঁয়াজ।

লাভের আশায় প্রতিবারের ন্যায় এবারও সুখ সাগর পেঁয়াজের চাষ করে আশায় বুক বেধেঁছিলেন মেহেরপুরের কৃষকরা। কিন্তু সুখসাগর পেঁয়াজ চাষ করে লাভ তো দুরের কথা লোকসান গুনতেই হাফিয়ে উঠেছে এ এলাকার পেঁয়াজ চাষীরা। তারা বলছেন, প্রতিবছরই সুখ সাগর পেঁয়াজ চাষ করে আমাদের কমবেশি লাভ হতো। তাই এবারও পেঁয়াজ চাষ করেছি, ফলনও হয়েছে আগের মতো ভাল। কিন্তু এবারের চাষে লাভের মুখতো দুরের কথা লোকসান গুনতে আমাদের নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে।

মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের কৃষক চান আলি শেখ এর ছেলে আসাদুল জানান, বিঘা প্রতি সুখসাগর পেঁয়াজ ১২০ মণ করে হয়। গত বছর চাষীরা শুরুতেই মণ প্রতি দাম পেয়েছিল ৭২০ টাকা। শেষের দিকে গিয়ে সে দাম গিয়ে দাড়ায় ৫০০ টাকার কাছে তাতেও কৃষকদের লাভ ছিল। সেই আশায় এবারও এ এলাকার কৃষকরা সুখসাগর পেঁয়াজের চাষ করে। এলাকার কৃষকরা জানান, এবার উৎপাদনের শুরু থেকেই দাম নেই সুখ সাগর পেঁয়াজের।

মৌসূমের শুরু থেকে এ পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম ২৭০ টাকার বেশি পাওয়া যায়নি। এতে ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলতে শ্রমিকদের যে মজুরিদের দিতে হয় তা ঘর থেকে দিতে হয়। ভাল চাষ হলে বিঘা প্রতি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ১২০ মণ, যাতে খরচ হয় ৩২ হাজার ৭৫০ টাকা, বর্তমান বাজারে তা বিক্রয় করতে হচ্ছে ২৭০ টাকা মণ দরে। তাতে বিঘা প্রতি আসে ৩২ হাজার ৪০০ টাকা করে। এতে করে কৃষকের গাঁট থেকে টাকা গুনতে হচ্ছে। তাই এলাকার কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতে পারছে না সুখসাগর পেঁয়াজ।

জানতে চাইলে কয়েকজন কৃষক বলেন, এবার ভারত থেকে আগেই পেঁয়াজ আমদানি করার কারণে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। মেহেরপুর জেলায় ৮০০ হেক্টর জমিতে এ বছর পেঁয়াজের চাষ করা হয়। এর মধ্যে মেহেরপুর-মুজিবনগরের শিবপুর এলাকাতেই প্রায় ৫ হাজার বিঘাতে এবারে সুখসাগর জাতের পেঁয়াজের চাষ করা হয়েছে। এবারে পোঁজ চাষে এ এলাকার কোন চাষীর মুখে হাসি নেই।

এদিকে লোকসানের হাত থেকে কিছুটা বাঁচতে পেঁয়াজের ক্ষেতে কোন কোন কৃষক কলার আবাদ শুরু করেছেন। কৃষকরা জানান, সুখসাগর পেঁয়াজ চাষ শুরু করতে হয় আশ্বিন মাসের ১৫ তারিখ থেকে আর তার উৎপাদন শুরু হয় পৌষ মাসের শেষ সপ্তাহ হতে মাঘ মাসের শেষ পর্যন্ত। এতদিন একটি ফসলের ক্ষেত একটি আবাদে ফেলে রাখার পরও যদি লোকসান গুনতে হয় তাই কেউ বিকল্প হিসেবে একই ক্ষেতে কলার চাষ করছেন। তবে এলসির মাধ্যমে পেয়াজ আমদানী বন্ধ হলে দাম ভাল পাওয়া যাবে বলেও মন্তব্য করেন কৃষকরা।

মুজিবনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান খান বায়েজিদ জানান, আসলে স্থানী ফড়িয়াদের কারণে এখানকার কৃষকরা পেঁয়াজের দাম কম পাচ্ছে। তারা যদি সকলে সমন্বিতভাবে নতুন বাজার খুঁজে সেখানে বিক্রয় করে তাহলে ভাল দাম পেতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাইরে থেকে যেসব ব্যাবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানি করেন তারা হয়তো জানেন না যে, আমাদের এলাকায় পেঁয়াজের চাষ হয়। আমদানিকারকরা জানতে পারলে ভাল দামেই এখান থেকে পেঁয়াজ ক্রয় করবে তবে ভাল উৎপাদনের বিষয়ে প্রচার প্রচারণা করতে হবে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক ড. আখতারুজ্জামান জানান, বর্তমানে পেঁয়াজের কাঙ্খিত উৎপাদন হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় বেশি উৎপাদিত ফসলের মুল্য তুলনা মুলক কম হয়। বর্তমান বাজার নিয়ে কৃষি বিভিগের কিছুই করার নেই, তবুও এ পেঁয়াজের চারা বিক্রি করেও ভাল মুল্য পেয়েছে কৃষকরা। সব মিলিয়ে চাষীদের বেশি লোকসান হবে না বলে দাবি এ কর্মকর্তার। এছাড়া পেঁয়াজ সংরক্ষণের পরামর্শ দেন তিনি।
//এআরএইচ//

Leave A Reply

Your email address will not be published.