Ultimate magazine theme for WordPress.

এন্টিবায়োটিকমুক্ত মুরগি পালনের চেষ্টা করছি : হোসনে আরা

সফল নারী উদ্যোক্তা

0

নাটোর প্রতিনিধি : ইনকিউবিটরের পাল্লা খুললেই লক্ষ প্রাণের স্পন্দন। কিচির-মিচির শব্দে মুখর চারিদিক। ডিমের খোলস ভেঙে বেরিয়ে আসছে মুরগির বাচ্চারা। আর এভাবেই জেলার সফল নারী উদ্যোক্তা হোসনে আরার পোল্ট্রি হ্যাচারিতে জন্ম নেয়া লক্ষ লক্ষ মুরগির বাচ্চা ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে।
দশ বছরের এই কর্মযজ্ঞে হোসনে আরা তৈরী করতে পেরেছেন অসংখ্য নারী উদ্যোক্তা। এখন তার অনেক দূরে যাওয়ার প্রত্যয়।
নাটোর সদরের রাণী ভবানীর রাজবাড়ীর চারপাশের বেষ্টনী লেকের উত্তরে চৌকিরপাড় এলাকায় হোসনে আরা গড়ে তুলেছেন জিশান পোল্ট্রি হ্যাচারি, যা নাটোর জেলার পাঁচটি পোল্ট্রি হ্যাচারির মধ্যে সবচেয়ে বড়।
হ্যাচারির ইনকিউবেটরের স্যাটার অংশের মোট নয়টি কম্পার্টমেন্টে ট্রেতে করে সাজানো হয় লক্ষাধিক ডিম। ৩৭ দশমিক ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় এখানে ডিমের অবস্থান ১৮ দিন। এরপর ডিমগুলোকে স্থানান্তর করা হয় ইনকিউবেটরের হ্যাচার অংশের ট্রেতে। হ্যাচারে ৩৭ দশমিক ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তিন দিনে ডিমের খোলস ভেঙে বেরিয়ে আসে সদ্য জন্ম নেয়া লক্ষাধিক মুরগীর বাচ্চা।
হ্যাচারিতে ডিম সরবরাহের জন্যে এখানে আছে সাড়ে এগারো হাজার ধারণ ক্ষমতার দু’টি সোনালী মুরগির খামার। গুণগতমানের ডিম সরবরাহের জন্যে আছে যৌথ উদ্যোগের আরো মুরগির খামার।


সাধারণ গৃহিনী থেকে উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প সম্পর্কে হোসনে আরা বলেনন, ১০ বছর আগে মাত্র একশটি মুরগি দিয়ে শুরু করেছিলাম মুরগির বাচ্চা তোলার কাজ। সে সময় কাঠের বাক্সে ডিম ফুটাতাম। সে সময় আমার স্বামী এসব পছন্দ করতো না। তবে এক সময় তিনিও বাড়িয়ে দেন সহযোগিতার হাত। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
তিনি বলেন, একশ মুরগির বাচ্চা তোলার লাভের টাকা দিয়ে প্রথমে একটি হ্যাচারীতে ২টি ইনকিউবেটর সহ একটি হ্যাচারী স্থাপন করে আধুনিক পদ্ধতিতে ডিম ফুটানো শুরু করি। এসময় গড়ে তুলি একটি সোনালী মুরগির খামার। পরে ব্যাংক থেকে ৪৫ লাখ টাকা ঋন নিয়ে ৪টি ইনকিউবেটর সেন্টারসহ অপর একটি হ্যাচারী স্থাপন করি। যাতে বিনেয়োগ করা হয়েছে প্রায় কোটি টাকা।
বর্তমানে তার ২টি হ্যচারার ৬টি ইনকিউবেটরের মাধ্যমে প্রতিদিন হাজার হাজার বাচ্চা উৎপাদন করা হচ্ছে। এসকল মুরগির বাচ্চা পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে কুষ্টিয়া রংপুর, নওগা, বগুড়া, রাজশাহী সহ আরো কয়েকটি জেলায়।
তিনি বলেন, মুরগির খামারে বর্তমানে সাড়ে তিনহাজার মুরগি রয়েছে। এ খামার থেকে তার চাহিদা পূরণ হয়না । এজন্য অনেক পোল্ট্রি ফার্মের মালিক যারা বাচ্চা তৈরি করতে চাই। এছাড়া অনেক বেকার মহিলা তাঁর এখান থেকে মুরগির বাচ্চা কিনে মুরগি পেলে বড় করছেন এবং ডিম ফুটাচ্ছেন। এভাবেই গড়ে উঠছে নতুন নতুন পোল্প্রি খামার। এতে অনেক নারীর কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে।

নাটোরের হোসনে আরার এই সফলতা একদিনে আসেনি। অক্লান্ত পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে তিনি অর্জন করেছেন এই সমৃদ্ধি। ১০ বছর আগে শুরু করেছিলেন পোল্ট্রি হ্যাচারি। তারও দশবছর আগে পোল্ট্রি খামার। হোসনে আরা বলেন, শখ করে মাত্র ১০টি মুরগি পালনের মধ্য দিয়ে শুরু করেছিলাম। এরপর ধাপে ধাপে বাড়িয়েছি মুরগির সংখ্যা।

বস্ত্র ব্যবসায়ী স্বামীর সংসারে অভাব-অনটন না থাকলেও খুব একটা স্বচ্ছলতা ছিল না। চার সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হতো। এরই মধ্যে তিল তিল করে হোসনে আরা মুরগির খামারের পরিধি বাড়িয়েছেন। এক সময় হাল ধরেছেন পুরো সংসারের। হয়েছেন একজন সফল উদ্যোক্তা।

হোসনে আরা যে শুধু নিজের ব্যবসায়ের প্রসার ঘটিয়েছেন তা নয়, খামার ও হ্যাচারিতে তৈরি হয়েছে স্থায়ী ও খন্ডকালীন মিলিয়ে প্রায় ৩০ জনের কর্মসংস্থান। অসংখ্য নারী উদ্যোক্তার জন্য তিনি অনুপ্রেরণা। ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের নাটোর শাখায় প্রায় একশ’ নারী উদ্যোক্তার ব্যাংক ঋণের গ্যারান্টার হয়েছেন তিনি।

নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে হোসনে আরা বলেন, এখনো অনেক দূরে যেতে হবে। এন্টিবায়োটিকমুক্ত মুরগি পালনে সফলতা অর্জনের চেষ্টা করছি। নিরাপদ ডিম ও মাংস উৎপাদনের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানিরও লক্ষ্য আছে।

//এআরএইচ//

Leave A Reply

Your email address will not be published.