কৃষিখবর ডেস্ক : চলছে টমেটো চাষের সময়। বাংলাদেশে এটি বিলাতি বেগুন নামেও পরিচিত। এই সবজির জনপ্রিয়তা খুব বেশি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু বলে। সালাদ বা সবজি দুই ক্ষেত্রেই টমেটোর কদর অনেক। ভিটামিন আর স্বাদের দিক দিয়েও এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যদিও টমেটো শিতকালীন সবজি কিন্তু এখন প্রায়ই আগাম ফসল হিসেবে এর চাষ হর হামেশায় হয়ে থাকে। আর আগাম বাজারে আসলে এর দামও থাকে বেশি।
টমেটোর চাষ পদ্ধতি অতীব জটিল না হওয়ায় খুব সহজে নুন্যতম শ্রম ব্যয় করে বাড়ির আংগিনায়, ছাদে বা টবে টমেটো চাষ করে অনেক ফলন আহরন করা যায়। এখানে টবে টমেটো চাষ নিয়ে আলোচনা করা হলো, কিভাবে সহজেই ছাদের অল্প জায়গায় শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে টবেই চাষ করে ফলাতে পারেন অধিক পরিমানে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর বারমাসি টমেটো।
চাষ পদ্ধতি: ছাদে টমেটো চাষের জন্য বেলে-দোআশ মাটি উত্তম। মাটির সংগে তিন ভাগের এক ভাগ গোবর এবং কিছু টিএসপি সার মিশিয়ে ১০-১৫ দিন রেখে দিয়ে প্রস্তুত করে নিতে হবে। টমেটোর চারা লাগানোর জন্য ড্রাম/টব ছাড়াও ছোট ছোট কন্টেইনার এমন কি ২ কেজি আটার প্যাকেটও ব্যবহার করা যায়। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি কন্টেইনার/প্যাকেটে একটি করে চারা দিতে হবে। চারা একটু বড় হলে প্রতিটি গাছের জন্য ১ চা চামচ পরিমান টিএসপি সার পূণরায় দিতে হবে। গাছটিকে একটি শক্ত কাঠির সাথে বেধে দিতে হবে। নিচের পূরানো পাতা এবং কিছু ডাল ফেলে দিতে হবে যাতে গাছটি বেশী ঝোপড়া না হয়ে যায়।
অন্যান্য পরিচর্যা:টবের মাটি কয়েকদিন পর পর হালকা নিড়ানি দিয়ে আলগা করে দিতে হবে যাতে টমেটো গাছে আগাছা জন্মাতে না পারে। টমেটোর ফুল ধরা শুরু করলে সরিষার খৈল পচা পানি পাতলা করে গাছে ১০-১২ দিন অন্তর অন্তর নিয়মিত দিতে হবে।
টমেটোর পোকামাকড় ও রোগবালাই: টমেটো গাছ অনেক সময় ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পাতা কোকড়িয়ে যায়। এক গাছ আক্রান্ত হলে কিছুদিনের মধ্যেই অন্য গাছও আক্রান্ত হয়। একসময় সমস্ত বাগানে ছড়িয়ে পড়ে। তাই কোন গাছ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে দেখলে সাথে সাথে তা ধ্বংস করে ফেলতে হবে।
টমেটো চারা রোপণের পদ্ধতি ও যত্ন: টবে টমেটো চাষে আপনি দুটি পদ্ধতি অনুসরন করতে পারেন।
প্রথমত, আপনি নার্সারি থেকে টমেটোর ভালো জাত এর চারা নিয়ে এসে আপনার বড় টবটিতে অথবা বস্তায় লাগিয়ে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে বস্তা অথবা টবের মাটিকে নিড়ানি দিয়ে খুঁচিয়ে আগে থেকেই বেশ ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। এরপর যে প্লাস্টিকে মোড়ানো অবস্থায় আপনার চারাটি কিনে আনবেন সেটাকে সাবধানে মাটি থেকে ছাড়িয়ে নিতে হবে। লক্ষ্য রাখবেন যেন এতে চারাটির মূলের কোনও ক্ষতি না হয়। এরপর টবের মাটিতে বেশ গভীর গর্ত করে তাতে চারাটি বসিয়ে দিন ও মাটি ভরে দিন কাণ্ডের চারপাশে। এই চারাটিতে বেশ করে পানি দিতে হবে কিন্তু লক্ষ্য রাখুন যেন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয়।
দ্বিতীয়ত, টমেটোর বীজ থেকে গাছ গজানো। বাড়ির বাগানে বেশি করে টমেটো গাছ লাগাতে চাইলে এটি করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে আগে ভালো জাতের বীজ কিনে নিতে হবে। এরপর টবের আর্দ্র মাটিতে ছিটিয়ে দিতে হবে বীজগুলোকে।
অঙ্কুরোদ্গমের পর চারাগুলো বড় হতে শুরু করলে এগুলোকে বেশ আলো আসে এমন স্থানে রাখুন এবং কোনোভাবেই যেন এগুলোতে পানির অভাব না হয় তার দিকে লক্ষ্য রাখুন। কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা রোদ খাওয়াতে হবে আপনার গাছগুলোকে, ৮ ঘণ্টা হলে ভালো হয়।
ভালো ফলন পেতে কিছু বাড়তি পরিচর্যা: আপনার গাছ যখন বেড়ে ওঠা শুরু করবে তখন টবের প্রায় পুরোটাই মাটি দিয়ে ভরে দিন। এতে গাছ ভালো বাড়বে।
পর্যাপ্ত রোদ আসে এমন জায়গায় টমেটোর টব স্থাপন করুন এতে গাছ তার নিজের খাদ্য তৈরি প্রক্রিয়া সহজেই সম্পাদন করতে পারবে। আর রোদের তাপ খুব বেশি হলে বিকেলের দিকে টব সরিয়ে নিন বা ছায়ার ব্যবস্থা করুন।
মনে রাখবেন টমেটো চাষে পানি সর্বরাহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তাই নিয়ম করে দুই থেকে তিন দিন পর পর পানি দেয়াই ভালো, তবে গাছ বড় হয়ে গেলে পানি সর্বরাহ বাড়াতে হবে।
টমেটো গাছের যত্নে প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ হলো টবে একটি খুঁটি পুঁতে তার সাথে গাছটিকে বেঁধে দেওয়া। তবে চারপাশে একাধিক খুঁটি দিলে আরো ভালো হয়। এছাড়াও একে নেট দিয়ে ঢেকে দিতে পারেন, তাতে পোকামাকড় এর আক্রমণ করার সুযোগ কমে যাবে।
গাছের বয়স ছয় সপ্তাহ হওয়ার পর প্রতি সপ্তাহে একটু করে সার দিতে পারেন গাছের গোড়ায়। অতিরিক্ত শীত এবং গরমের সময় মাটির সঠিক আদ্রতা ধরে রাখতে দিতে পারেন শুকনো পাতা বা বাড়ির শাকসবজির উচ্ছিষ্ট খোসা। এতে সারেরও কাজ হবে এবং তাপমাত্রার নেতিবাচক প্রভাব থেকে গাছের মূল রক্ষা পাবে।
এত রকমের যত্ন নিতে হয় বলেই হয়তো অনেকেই টমেটো লাগাতে চান না। অথচ এসবের পর গাছ ভরে যখন রঙ বেরঙের ফল আসবে, তখন কেমন খুশি লাগবে ভাবুন তো! নিজের লাগানো চারা থেকে গাছ বড় হয়ে যখন টমেটো ফলে তা দেখতে অসাধারণই লাগে। আর গাছ থেকে নিয়ে তাজা সেই টমেটো সালদা বা তরকারিতে দিয়ে খেতে তার স্বাদের কথা নাই বললাম।