কৃষিখবর প্রতিবেদক : সরকার পেঁয়াজ ও আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বলে স্বীকার করে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, অনেক কৃষিপণ্যের দাম একটু অস্বাভাবিক বেশি। তার দৃষ্টিতে এটি সরকারের ‘দুর্বল দিক’। আজ রোববার সচিবালয়ে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, “সমালোচনা করেন- আমরা পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না, আলুর দাম (নিয়ন্ত্রণ) পারছি না; সেটি (সমালোচনা) আমরা নিচ্ছি, সেটা আমাদের দুর্বল দিক। কিন্তু আমাদের যে সবল দিক সেটিও আপনারা দয়া করে মিডিয়াতে তুলবেন।”
সরকারের সবল দিক কী, তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “সকল বিবেচনায় এ বছর চাল উৎপাদন, বিতরণ এবং মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় একটা ভালো অবস্থায় আমরা রয়েছি। এ ব্যাপারে আমি সাংবাদিক বন্ধুদের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করছি, বিষয়টি আপনারা তুলে ধরবেন।”
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে গণমাধ্যমে নানা প্রতিবেদন নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানান আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, “আরেকটি বিষয় খুবই আলোচনা হচ্ছে আপনাদের মিডিয়াতে। অনেক কৃষিপণ্যের দাম একটু অস্বাভাবিক বেশি। বিশেষ করে পেঁয়াজ, আলু- এই দুটি পণ্যের দাম বেশি।
“ডাল, তেল- এগুলো তো রয়েছে, দীর্ঘদিনের, এগুলো আমদানিনির্ভর; সেখানে আমরা খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারি না।”
চালের দাম স্থিতিশীল আছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, “একজন মানুষ জীবনধারণের জন্য যে খাদ্য খেয়ে থাকি, তার জন্য খরচ হয় ৬৫-৭০ ভাগ চালের উপরে। কাজেই চালটা কিন্তু প্রথম ও প্রধান উপাদান খাদ্যের।
“পেঁয়াজের দাম, আলুর দাম কতটুকু- সেটা আমি ওইভাবে বলতে চাই না। তবে চাল নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। মানুষের যে খাদ্য নিরাপত্তা, ন্যূনতম যে খাবারটা সেটা কিন্তু কিনতে পারছে।”
এ বছর চাল আমদানির প্রয়োজন না হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন কৃষিমন্ত্রী। বলেন, “জুলাই থেকে এ পর্যন্ত এই মরা কার্তিকেও আমাদের চাল আমদানি করতে হয়নি। এদিক দিয়ে আমরা খুবই একটা ভালো অবস্থায় আছি। এ মুহূর্তে বাজারের চালের দামের নিম্নমুখী ট্রেন্ড রয়েছে।”
সরকার কি হাল ছেড়ে দিয়েছে? মন্ত্রী বললেন ‘না’
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে গত ১৪ সেপ্টেম্বর আলুর কেজি সর্বোচ্চ ৩৬ টাকা, একটি ডিম ১২ টাকা এবং প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৬৫ টাকা ঠিক করে দেয় সরকার। যদিও বাজারে এর থেকে অনেক বেশি দামে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
আলু ও পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছেন কি না- এ প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “মোটেই হাল ছেড়ে দেই নাই। আমরা এখনও যথেষ্ট তৎপর রয়েছি। উৎপাদনের পার্টটা হল আমাদের কৃষি মন্ত্রণালয়ের। বাজার ই (মনিটর) করার দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের।
“তার পরেও একটি সরকার…আমি দায়িত্ব এড়াতে পারি না। কেবিনেট সিস্টেমে সকল মন্ত্রীরা এটার জয়েন্ট রেসপনসিবিলিটি, সব সময়ই এটা। প্রেসিডেনসিয়াল ফর্মে প্রেসিডেন্ট সব দায়িত্ব পালন করেন। কেবিনেট সিস্টেম অব গভর্মেন্টে সকল মন্ত্রীরাই সকল কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ। কাজেই আমরা মোটেই হাল ছেড়ে দেই নাই, আমরা চেষ্টা করছি।”
হিমাগার মালিকরা ‘খুবই অসহযোগিতা’ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা ঠিকমত সরবরাহ করছে না, এটা বড় অন্তরায়; নানাভাবে আমাদের কর্মকর্তারা মাঠ লেভেলে তাদের চাপ সৃষ্টি করলে সাপ্লাই দেয় না, বন্ধ-টন্ধ করে চলে যায়। এ ধরনের কিছু ব্যাপার রয়েছে, তা সত্বেও প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।”
পেঁয়াজ সংকটের ব্যাখ্যা : দেশে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও পণ্যটি নিয়ে কেন সংকট হয়, তার ব্যাখ্যাও দেন মন্ত্রী। তার কথায়, “পেঁয়াজ আমাদের দেশে পর্যন্ত হয়, কিন্তু পেঁয়াজ খুবই পচনশীল কৃষিপণ্য। এপ্রিল-মে মাসে পেঁয়াজ তোলা হয়, তারপরে দুই মাসের বেশি থাকে না। পেঁয়াজ পচে যায়, শুকিয়ে যায়; এজন্য পেঁয়াজ নিয়ে আমাদের সমস্যা। নভেম্বর-ডিসেম্বরে এসে আমাদের বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
“গত বছর যথেষ্ট পেঁয়াজ হয়েছিল, চাষিরা বিক্রি করতে পারেনি। আলুরও একই অবস্থা হয়েছিল, রাস্তায় ফেলে দিয়েছে, এবার উল্টো পরিস্থিতি। (আলু) দুই-তিন লাখ টন কম (উৎপাদন) হয়েছে; এই সুযোগে কোল্ড স্টোরেজের মালিক ও আড়ৎদাররা ব্যাপকভাবে মুনাফা করছে। এত তো লাভ করা উচিত না। ২০ টাকা খরচ হয় না; সেটাকে সে ৪০-৫০ টাকা বিক্রি করছে।”
পেঁয়াজ সংরক্ষণে নতুন প্রযুক্তি আনা হয়েছে জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “ওভাবে পেঁয়াজ রাখলে ৫ শতাংশও পচে না। এই প্রযুক্তি যদি আমরা (সারা দেশে) নিয়ে যেতে পারি, আগামী দুই বছরের মধ্যে বিদেশ থেকে কোনো পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না। পেঁয়াজের নতুন জাত বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন, হেক্টরে ৪০-৫০ টন উৎপাদন হয়। আগামী দিনে বাংলাদেশে পেঁয়াজেরও কোনো সমস্যা থাকবে না।”
আমদানির সিদ্ধান্তে বিলম্ব কেন : বাজারের পেঁয়াজের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ার পরেও শুরুতে কেন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্নেরও জবাব দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী।
তিনি, “গত বছর কৃষকরা দাম পায়নি। এ বছর তারা দাম পাক, এটা আমাদের নীতি ছিল। আপনারা সমালোচনা করেন, আমি সেটা মাথা পেতে নিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য হলো পেঁয়াজে আমরা স্বনির্ভর হতে চাই। তার জন্য সাময়িক একটু কষ্ট হয়েছে, মানুষ বেশি দামে কিনেছে, কিন্তু চাষিদেরকে আমরা উৎসাহিত করছি, স্থানীয়ভাবে আমরা পেঁয়াজ উৎপাদন করব।
“আমাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ ছিল ভারত থেকে আমরা কেন (পেঁয়াজ) আমদানি করছি না? কিন্তু আমরা তাদের কথা শুনিনি। আমরা চেয়েছি যে বাজারে দাম যা আছে থাক; আমাদের কৃষকরা উপকৃত হোক, যাতে সামনের বছর আবার তারা পেঁয়াজ চাষ করে।”
জাতীয় নির্বাচনের আগে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিরই থাকবে কি না- এ প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব দেননি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক।
তিনি বলেন, “শীতকাল আসছে, পর্যাপ্ত সবজি হবে। সকল সবজির দামই কমে আসবে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেশি। আরও অন্যান্য খরচ বেড়ে গেছে। দেশে মুদ্রাস্ফীতি আছে; এসব বিবেচনায় সবজি ও অনেক পণ্যের দাম বেশি।”