Ultimate magazine theme for WordPress.

আশ্বিন মাসের কৃষি

0

কৃষিখবর ডেস্ক : কাশফুলের শুভ্রতা, দিগন্ত জোড়া সবুজ আর সুনীল আকাশে ভেসে বেড়ানো চিলতে সাদা মেঘ আমাদের মনে করিয়ে দেয় বর্ষার শেষে আনন্দের বার্তা নিয়ে শরৎ এসেছে। সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, আপনাদের সবার জন্য শুভকামনা। বর্ষা মৌসুমের সবটুকু ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া আর চলতি মৌসুমের পুরো পাওনা আদায় করতে কার্যকরি প্রস্তুতি নেবার সময় এখন। এ প্রেক্ষিতে আসুন সংক্ষেপে জেনে নেই আশ্বিন মাসের বৃহত্তর কৃষি ভুবনের করণীয় বিষয়গুলো।

এ সময় বৃষ্টির অভাবে খরা দেখা দিতে পারে। সে জন্য সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। ফিতা পাইপের মাধ্যমে সম্পূরক সেচ দিলে পানির অপচয় অনেক কম হয়।

নিচু এলাকায় আশ্বিন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত স্থানীয় উন্নত জাতের শাইল ধানের চারা রোপন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে প্রতি গুছিতে ৫-৭টি চারা দিয়ে ঘন করে রোপন করতে হবে।

শিষ কাটা লেদা পোকা ধানের জমি আক্রমণ করতে পারে। প্রতি বর্গমিটার আমন জমিতে ২-৫টি লেদা পোকার উপস্থিতি মারাত্মক ক্ষতির পূর্বাভাস। তাই সতর্ক থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ সময় মাজরা, পামরি, চুঙ্গী, গলমাছি পোকার আক্রমণ হতে পারে। এক্ষেত্রে নিয়মিত জমি পরিদর্শণ করে, জমিতে খুটি দিয়ে, আলোর ফাঁদ পেতে, হাতজাল দিয়ে পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

খোলপড়া, পাতায় দাগ পরা রোগ দেখা দিতে পারে। তাছাড়া সঠিক বালাইনাশক সঠিক মাত্রায়, সঠিক নিয়মে, সঠিক সময় শেষ কৌশল হিসাবে ব্যবহার করতে হবে।

নাবি আমন রোপণ

কোন কারণে আমন সময় মতো চাষ করতে না পারলে আশ্বিনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিআর ২২, বিআর ২৩, বিনাশাইল বা স্থানীয় জাতের চারা রোপণ করা যায়।

গুছিতে ৫-৭টি চারা রোপণ করতে হবে।

অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি ইউরিয়া প্রয়োগ ও অতিরিক্ত পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে কাঙ্খিত ফলন পাওয়া যায় এবং দেরির ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যায়।

আখ

আখের চারা উৎপাদন করার উপযুক্ত সময় এখন।
সাধারণত বীজতলা পদ্ধতি এবং পলিব্যগ পদ্ধতিতে পারা উৎপাদন করা যায়।
পলিব্যাগে চারা উৎপাদন করা হলে বীজ আখ কম লাগে এবং চারার মৃত্যুহার কম হয়।
চারা তৈরি করে বাড়ির আঙ্গিনায় সুবিধাজনক স্থানে সারি করে রেখে খড় বা শুকনো আখের পাতা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
চারার বয়স ১-২ মাস হলে মূল জমিতে রোপন করতে হবে।
কাটুই বা অন্য পোকা যেন চারার ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।

বিনা চাষে ফসল আবাদ

মাঠ থেকে বন্যার পানি নেমে গেলে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় বিনা চাষে অনেক ফসল আবাদ করা যায়।

ভুট্টা, গম, আলু, সরিষা, মাসকালাই বা অন্যান্য ডাল ফসল, লালশাক, পালংশাক, ডাটাশাক বিনা চাষে লাভজনকভাবে অনায়াসে আবাদ করা যায়।

সঠিক পরিমান বীজ, সামান্য পরিমান সার এবং প্রয়োজনীয় পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে লাভ হবে অনেক।

যেসব জমিতে উফশী বোরো ধানের চাষ করা হয় সেসব জমিতে স্বল্প মেয়াদি টরি-৭ ও কল্যাণী জাতের সরিষা চাষ করতে পারেন।

শাক-সবজি

আগাম শীতের সবজি উৎপাদনের জন্য উঁচু জয়গা কুপিয়ে পরিমাণ মতো জৈব ও রাসায়নিক সার বিশেষ করে ইউরিয়া প্রয়োগ করে শাক উৎপাদন করা যায়।

শাকের মধ্যে মুলা, লালশাক, পালংশাক, চিনা শাক, সরিষা শাক অনায়াসে করা যায়।

সবজির মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, শালগম, টমেটো, বেগুন, ব্রকলি বা সবুজ ফুলকপিসহ অন্যান্য শীতকালীন সবজির চারা তৈরি করে মূল জমিতে বিশেষ যতে আবাদ করা যায়।

কলা

অন্যান্য সময়ের থেকে আশ্বিন মাসে কলার চারা রোপণ করা সবচেয়ে বেশি লাভজনক। এতে ১০-১১ মাসে কলার ছড়া কাটা যায়।

ভাল উৎস বা বিশ্বসস্ত চাষি ভাইয়ের কাছ থেকে কলার অসি চারা সংগ্রহ করে রোপণ করতে হবে।

কলার চারা রোপণের জন্য ২-২.৫ মিটার দূরত্বে ৬০ সেমি. চওড়া এবং ৬০ সেমি গভীর গর্ত করে রোপণ করতে হবে।

গর্তপ্রতি ৫-৭ কেজি গোবর, ১২৫ গ্রাম করে ইউরিয়, টিএসপি ও এওপি সার এবং ৫ গ্রাম বরিক এসিড ভালভাবে মিশিয়ে৫-৭ দিন পর অসি চারা রোপণ করতে হবে।

কলা বাগানে সাথি ফসল হিসেবে ধান, গম, ভুট্টা ছাড়া যে কোন রবি ফসল চাষ করা যায়।

গাছপালা

বর্ষায় রোপণ করা চারা কোনো কারণে মরে গেলে সেখানে নতুন চারা রোপণের উদ্যোগ নিতে হবে।

রোপণ করা চারার যতœ নিতে হবে এখন। যেমন- বড় হয়ে যাওয়া চারার সঙ্গে বাঁধা খুঁটি সরিয়ে দিতে হবে এবং চারার চারদিকের বেড়া প্রয়োজনে সরিয়ে বড় করে দিতে হবে। মরা বা রোগাক্রান্ত ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে।

চারা গাছসহ অন্যান্য গাছে সার প্রয়োগের উপযুক্ত সময় এখন।

গাছের গোড়ার মাটি ভালো করে কুপিয়ে সার প্রয়োগ করতে হবে। দুপুর বেলা গাছের ছায়া যতটুকু স্থানে পড়ে ঠিক ততটুকু স্থান কোপাতে হবে। পরে কোপানো স্থানে জৈব ও রাসায়নিক সার ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে।

সূত্র : বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস

Leave A Reply

Your email address will not be published.