কৃষিখবর প্রতিবেদক : পাহাড়ে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে দীর্ঘ দুই যুগ আগে আরম্ভ করা কফি চাষ সাড়া জাগাচ্ছে। কফি চাষিদের আগ্রহে বাণিজ্যিক উৎপাদনে বান্দরবানে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে অনেকে। পাহাড়ে উৎপাদিত অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা দুই জাতের কফি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও।
পার্বত্য চট্টগ্রামে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে তিন পার্বত্য জেলায় ছয়শ কৃষক পরিবারকে পুনর্বাসনের প্রকল্প হাতে নেওয়ার মাধ্যমে পাহাড়ে সীমিত আকারে কফি চাষ আরম্ভ হয়। তবে দীর্ঘ ২৩ বছর পর পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে সাড়া জাগাচ্ছে কফি চাষ।
বর্তমানে বান্দরবান জেলায় সহস্রাধিক চাষি বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। চলতি বছর জেলায় ২৮০ হেক্টর জমিতে কফি চাষ হয়েছে; যা গতবছরের তুলনায় ১৩৪ হেক্টর বেশি। গত বছর উৎপাদিত হয়েছিল ৯০ মেট্রিক টন কফি। এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১২০ মেট্রিক টনের বেশি।
বান্দবানের ছয়টি উপজেলায় ৬৫টি বাণিজ্যিক প্রদর্শনী বাগান রয়েছে। পাহাড়ে উৎপাদিত অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা দুই জাতের কফি। এখানে উৎপাদিত কফি চামড়া (খোসা) বাদ দিয়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে আড়ায় থেকে দুইশ ষাট টাকায়। খোসাসহ কফি বিক্রি হচ্ছে হচ্ছে দেড়শ টাকায়। তবে মান ভালো হলে খোসা ছাড়া কফি কেজিতে ৪শ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। পাহাড়ে উৎপাদিত কফি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও।
স্থানীয় সফল চাষি এ্যাম্পুপাড়ার মেনরু ম্রো, সাক্য ম্রো বলেন, গতবছরের তুলনায় এবছর বাগানে কফির ফলন ভালো হয়েছে। তবে কিছুকিছু গাছে পোকার আক্রমণে ফলের ক্ষতি হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় বিক্রি করে ভালো দামও পাওয়া যাবে। উৎপাদিত কফি খোসা ছাড়া প্রতি কেজি ২৫০ টাকায় এবং খোসাযুক্ত কফি দেড়শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় উদ্যোক্তা সিইয়ং খুমী বলেন, চারা রোপণের ৩ বছরের মাথায় কফি উৎপাদিত হয়। একেকটা কফি গাছ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। কিন্তু শুরুর দিকে অনেক চাষি আগ্রহ দেখায়নি। চারা লাগিয়েও লাভ হবে না মনে করে পরিচর্যার কিছুই করেননি এমন চাষিও রয়েছে। তবে সময়ের প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি বদলে গেছে।
চাষিদের আগ্রহে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ বাড়ছে বান্দরবান জেলায়। চারা লাগানোর পর বাগান পরিচর্যাও ফল সংগ্রহের পর কফি প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উৎপাদিত কফির প্রক্রিয়াজাতকরণে ছোটখাটো কারখানা করা গেলে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ আরও সম্প্রসারিত হবে।
এ বিষয়ে বান্দরবান হর্টিকালচার সেন্টারে উপ-পরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী বলেন, ইতোমধ্যে হর্টিকালচার সেন্টারে উন্নতমানের কফি প্রক্রিয়াজাতকরণ মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। কফি চাষের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যোগে বান্দরবান সদর, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, রুমা, রোয়াংছড়ি এবং থানচি উপজেলায় তালিকাভুক্ত চাষিদের নতুনভাবে দেড়শ করে কফির চারা বিতরণ করা হয়েছে। লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় কফি চারার নার্সারি গড়ে তোলা হয়েছে।