কৃষিখবর প্রতিবেদক : ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পর ২৪ ঘন্টায় কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকায়। আজ সোমবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির জন্য আমদানি বন্ধের চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, যথাযথভাবে বাজার মনিটরিং না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ভারত সরকার প্রতিটন পেঁয়াজ ২৫০ থেকে ৩শ’ মার্কিন ডলার মূল্যে রপ্তানি করলেও ১৩ সেপ্টেম্বর তিনগুণ বাড়িয়ে ৮৫২ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে। মূলত এরপর থেকেই দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে শুরু করে। বাড়তি দামে পেঁয়াজ আমদানি ও এলসি খুলতে বেশি পরিমাণ টাকা লাগার কারণে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ কমে আসায় দেশের বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমার কারণে দাম বেড়ে যায়। দুর্গাপূজা উপলক্ষে আগামী ২ অক্টোবর থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ১০ দিন বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে। এ সময় দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত এলসি খোলাসহ বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছেন আমদানিকারকরা। এতে আগে বন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৭০ থেকে ২৯০ টন পেঁয়াজ আমদানি হলেও সপ্তাহের প্রথম দিন থেকেই আমদানির পরিমাণ কিছুটা বেড়ে গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ’ টন আমদানি হচ্ছে। এতে দেশের বাজারে সরবরাহ আগের তুলনায় কিছুটা বাড়ায় পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করে।
এ পরিস্থিতিতে গতকাল রবিবার বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয় ভারত সরকার। পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তনি বন্ধ থাকবে।
আমাদের হিলি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি হারুন উর রশীদ হারুন জানিয়েছেন, অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে ভারতের বাজারে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রুখতে, পেঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ভারত সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে গতকাল দুপুর পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি করতে খোলা এলসিগুলোর বিপরীতে পেঁয়াজ রপ্তানি অব্যাহত ছিল।
গতকাল ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর দেশে পেঁয়াজের ঝাঁঝ বাড়তে শুরু করে। গতকাল রাত থেকেই বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। আজ সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ভিন্ন ভিন্ন দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। মতিঝিল, মুগদা, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, পাইকারি বাজারেও ২৪ ঘণ্টায় ব্যবধানে ১৫-২০ টাকা বেড়ে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর মুগদার মুদি ব্যবসায়ী আল আমিন জানান, গত কয়েক সপ্তাহ দেশি পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা ও ভারতের পেঁয়াজ ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু গতকাল শ্যামবাজারে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে দেখি, সেখানেই বিক্রি করছে ৮০ টাকা। ভারতের রপ্তানি বন্ধের খবরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, আমরা পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে খুচরা বিক্রি করি। পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে আমাদের কিছু করার থাকে না।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পেঁয়াজ-রসুন ব্যবসায়ী সমিতির নেতা ও আলহাজ ভান্ডারের মালিক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি মাসের ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজের রফতানি মূ্ল্য তিনগুণ বাড়িয়ে দেয়। পরে গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৩৫-৪০ টাকা কেজি পেঁয়াজ দাম বেড়ে ৬০-৬৫ টাকায় ওঠে। এতদিন এ দরেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল। গতকাল সকালেও ওই দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। কিন্ত বিকেলে যখন বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর আসল ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেছে, তারপর থেকেই দাম বাড়তে থাকে।’
তিনি বলেন, আজকে আমদানি করা পেঁয়াজ (ভারত) পাইকারি বিক্রি করছি ৭৭-৮২ টাকা, বার্মা পেঁয়াজ ৭৫-৭৭ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৮০-৮৫ টাকা। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দাম ২০-২৫ টাকা বেড়েছে বলে স্বীকার করেন এই পাইকারি ব্যবসায়ী।
খিলগাঁওয়ে পেঁয়াজ কিনতে আসা কবির আহমেদ নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘প্রতিদিনই পেঁয়াজ লাগে। গতকাল শুনলাম ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে। পেঁয়াজের দাম বাড়তে পারে। কিন্তু একদিনে এত বাড়বে? আজকে দেশি পেঁয়াজ ১১০ টাকা চাচ্ছে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ক্রেতা বলেন, ‘কাল ঘোষণা দিল আর আজ ৩০ টাকা দাম বেড়ে গেল? একদিনে এত কেন বাড়ল? সরকার কেন এটির তদারকি করে না?’
তিনি বলেন, কোনো পণ্যের দাম বাড়লে খরচ বাড়ে আমাদের। কিন্তু আমাদের তো বাড়তি আয় নেই। তাই পণ্যের দাম বাড়লে বিপাকে পড়ি আমরা সাধারণ ভোক্তারা। আমাদের দেখারও কেউ নেই।
এদিকে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজধানীর খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবির মুখপাত্র মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। প্রথমে পাঁচটি স্পটে এ কার্যক্রম শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে তা বাড়িয়ে আজ সোমবার থেকে ৩৫টি ট্রাকে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। একজন ডিলার কেজি ৪৫ টাকা দরে প্রতিদিন এক হাজার কেজি (এক টন) পেঁয়াজ বিক্রি করবে।’
তিনি আরও বলেন, পেঁয়াজের পাশাপাশি দুর্গাপূজা উপলক্ষে ন্যায্যমূল্যে তেল, চিনি ও মসুর ডাল বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে তেল লিটার ৮৫ টাকা, চিনি কেজি ৫০ টাকা এবং মসুর ডাল ৫০ টাকায় বিক্রি করছে টিসিবি।
এদিকে ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৪ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদার বিপরীতে দেশের উৎপাদন হয় ১২-১৩ লাখ মেট্রিক টন। বাকি ১০-১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়, যার অধিকাংশই আসে ভারত থেকে।
//এআরএইচ//