Ultimate magazine theme for WordPress.

হালদা দূষণের দায়ে চিটাগং এশিয়ান পেপার মিলস বন্ধের নির্দেশ

0

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : বর্জ্য ফেলে হালদা নদী দূষণের দায়ে চিটাগং এশিয়ান পেপার মিলসের উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। আজ রোববার দুপুরে অধিপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক তার কার্যালয়ে শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত দেন । চিটাগং এশিয়ান পেপার মিলস লিমিটেডের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন চিফ কেমিস্ট মোরশেদ আলম চৌধুরী, জেনারেল ম্যানেজার রঘুনাথ চৌধুরী এবং প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. শফিউল আলম।

আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, শুনানির পর জরুরি ভিত্তিতে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ত্রুটি সংশোধন করে ইটিপি সার্বক্ষণিক চালু রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ ও পরিবেশসম্মত স্লাজ অপসারণের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এসব ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত কারখানার উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন পয়েন্টে পানির নমুনা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে যে মান-মাত্রা পাওয়া যায় তা পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ এর মান মাত্রাবর্হিভূত।

এশিয়ান পেপার্স মিলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের ইটিপি স্থাপনের যে পরিকল্পনা সে অনুযায়ী দ্রুত কাজ শেষ করতে বলেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। ওই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপাতত উৎপাদন বন্ধ রাখতে বলেছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এর আগে প্রতিষ্ঠানটিকে একাধিকবার জরিমানা আরোপ ও সর্তক করা হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

১৪ অগাস্ট পরিদর্শনে প্রতিষ্ঠানটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই নাজুক পরিলক্ষিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির স্লাজ খোলা স্থানে রাখা হয়েছে যা বৃষ্টির পানিতে সহজে ধুয়ে পার্শ্ববর্তী খালে অপসারিত হয়। এই পানি পরবর্তীতে মরাছড়া খাল হয়ে হালদা নদীতে পতিত হয়।

চিটাগং এশিয়ান পেপার মিলস সংলগ্ন ছড়া ও খালে অপরিশোধিত তরল বর্জ্য ছাড়ার খবর পেয়ে ১০ অগাস্ট রাতে ঘটনাস্থলে যান হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমীন। পরদিন ১১ অগাস্ট কারখানাটি পরিদর্শন করেন হালদা গবেষকরা।

পরিদর্শনে এশিয়ান পেপার মিল থেকে তরল বর্জে্যর জলাধারের পাড় ধ্বসে ছড়ায় বর্জ্য ছড়িয়ে পড়া, ইটিপি চালু না থাকা এবং বায়োলজিক্যাল প্ল্যান্টের বর্জ্য সংলগ্ন ছড়ায় উন্মুক্ত করার প্রমাণ মেলে।

এর আগে ৩০ মে হালদা নদীর রাউজান অংশে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার স্থানীয় বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে এশিয়ান পেপার মিলের বিরুদ্ধে মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

এরপর গত ১০ জুনই একই অপরাধে এশিয়ান পেপার মিলকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। তখন এক মাসের মধ্যেই ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) কার্যকর করার নির্দেশ দেয় অধিদপ্তর। তবে দুই মাস পার হলেও সে কাজ শেষ হয়নি।

নন্দীরহাটে অবস্থিত কারখানাটির কাছেই মরা ছড়া খাল। এটি আবার ডোম খাল, মাদারি খাল ও কাটাখালি খালের সঙ্গে সংযুক্ত। এর মধ্যে মাদারি ও কাটাখালি খাল উপজেলার মার্দাশা এলাকায় হালদা নদীতে গিয়ে মিশেছে। কারখানাটির বর্জ্য এসব খালের মাধ্যমেই হালদায় গিয়ে পড়ে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভারি বর্ষণের রাতে এশিয়ান পেপার মিল থেকে বর্জ্য খালে ফেলা হয়। এসব বর্জ্যের কারণে সংলগ্ন খালের পানি শুরুতে কালচে ও পরে লাল বর্ণ ধারণ করে।

২৫ মে রাতে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ডিম ছাড়ে মা মাছ। সে রাত থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করেন ডিম আহরণকারীরা। ২৬ মে সকালে মাদারি খালের লালচে পানি দেখতে পেয়ে এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে লিখিত প্রতিবেদন দেন ইউএনও রুহুল আমীন।

এর আগে বর্জ্য তেল নিঃসরণ করে হালদা দূষণের অভিযোগে গত ১৭ জুলাই ‘ইটিপি নির্মাণ ও অয়েল সেপারেটর কার্যকর না করা পর্যন্ত’ হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটি বন্ধ রাখারও নির্দেশ দিয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর।
//এআরএইচ//

Leave A Reply

Your email address will not be published.