কৃষিখবর প্রতিবেদক : শাপলা ফুল আমাদের দেশে কে না চেনে। এটি আমাদের জাতীয় ফুল। এটা আমাদের দেশে সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। আমাদের দেশের বাচ্চারা ছোট বেলা থেকে এই ফুলের সম্পর্কে জেনে আসে। কিন্তু তারা কখনই এই ফুল দেখে না। কারণ শাপলা সাধারণত গ্রামে দেখা যায়। শাপলা ফুল দেখতে অনেক সুন্দর। এই শাপলা বর্তমানে আপনার বাড়ির চিলেকোঠা বা ছাদে অথবা ঘরের বারান্দায় অথবা বাড়ির আঙ্গিনায় বা উঠোনে চাষ করতে পারেন।
টবে মাটি তৈরি : বাড়িতে শাপলা চাষ করার জন্য আপনাকে টবের জন্য উপযুক্ত কাদা মাটি দিতে হবে। মাটিতে গোবর ও খৈল এবং আরও অন্যান্য জৈব সার দিয়ে দিতে হবে। এর পর পাত্রটি পরিপূর্ণ পানি দিয়ে ভরে রাখতে হবে।
টব বা পাত্রের আকৃতি : শাপলা চাষ করার জন্য আপনি একটু গভীর দেখে চৌবাচ্চা ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও আপনি ইচ্ছা করলে হাফ ড্রাম ব্যবহার করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন পাত্রটি যেন মোটামুটি গভীর হয়। অথবা বড় সাইজের গামলা অথবা সিমেন্টের পাত্র ব্যবহার করতে পারেন।
শাপলার জাত বাছাই : বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৮০ ধরণের শাপলা আছে। এবং এর বিভিন্ন ধরণের নামও রয়েছে। যেমন শালুক, শাপলা, শুঁধি ইত্যাদি। তবে আমাদের দেশে সাদারণত সাদা শাপলা চাষ করা হয়। এছাড়াও আপনি বাড়িতে নীল শাপলা, বেগুনী শাপলা, লাল শাপলা, ইত্যাদি চাষ করতে পারেন।
রোপনের সঠিক সময় : শাপলা মূলত জলজ উদ্ভিদ। এদেরকে গ্রীষ্মের শুরুতে লাগাতে পারলে মধ্য বর্ষায় ফুল পাবেন। শাপলার বীজ লাগানোর ক্ষেত্রে আপনাকে শাপলার গোড়ার দিকের শালূক সংগ্রহ করতে হবে। এরপর উক্ত শালূক উপযুক্ত টবের মাটিতে পুতে দিতে হবে এবং পানির পরিমাণ সঠিক মাপে দিতে হবে।
বীজ বপন : শাপলার বীজ লাগানোর ক্ষেত্রে আপনাকে শাপলার গোড়ার দিকের মেথি সংগ্রহ করতে হবে। এরপর উক্ত মেথি সম্পূর্ণরূপে ছাটাই করে শুধু মাত্র মেথির অংশ রেখে উপযুক্ত টবের মাটিতে পুতে দিতে হবে এবং পানির পরিমাণ সঠিক মাপে দিতে হবে।
১। মাটির বড় মালশা বা মাটির বড় হাড়ি নিন (প্রায় ৬ লিটার পানি ধরে এমন), তাতে বেলে দোয়াঁশ মাটি এবং দু’ কেজি শুকনো গোবর সার মিশিয়ে মাটির মালসাটা ভর্তি করুন। এর পর পাত্রটি পানি মিশিয়ে কাদা করে নিন।
২। এক হাতের পাঁচ আঙ্গুল এক জায়গায় জড়ো করে কাদার মধ্যে ডুবিয়ে দিন। আঙ্গুলগুলো ধীরে ধীরে চারদিকে প্রসারিত করুন। একটা সুন্দর গর্ত হয়ে যাবে। গর্তের মধ্যে শাপলার চারাটিকে সাবধানে বসিয়ে দিন। কোন ভাবে যেন শাপলার শেকড়ে চাপ কিংবা আঘাত না লাগে।
৩। শাপলা চাষ করার জন্য খেয়াল রাখবেন পাত্রটি যেন মোটামুটি গভীর হয়। শাপলা চাষ করার জন্য আপনি আপনি ইচ্ছা করলে হাফ ড্রাম, বড় মাটির চারি বা প্লাস্টির সবচেয়ে বড় গামলা বা সবচেয়ে বড় বালতি (৩৫ লিটার সাইজের) নিয়ে এর মধ্যে আস্তে আস্তে পানি ঢেলে উপরের দিকে ১ ইঞ্চি খালি রেখে ভর্তি করে ফেলুন।
৪। এবার মাটির মালশাটি আস্তে করে শাপলা চাড়ি বা গামলা বা বালতিতে ডুবিয়ে দিন।
শাপলার চাষাবাদ : শাপলা চাষ করার ক্ষেত্রে আপনাকে সঠিক নিয়মে চাষ করতে হবে। এজন্য শাপলার মেথি যেন সঠিক ভাবে পানিতে প্রতিস্থাপন হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গাছ যেন পানিতে জড়িয়ে না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
শাপলার যত্ন ও পরিচর্যা : শাপলার পাতা, কুড়ি ও ফুলে ভরে না ওঠা পর্যন্ত টবের পানির উপরে কয়েকটা টোপা পানা ভাসিয়ে দিতে পারেন এবং খেয়াল রাখবেন পাত্রের জল যেন কখনও না শুকিয়ে যায়। গাছে যদি বেশী লতা পাতা হয়ে যায় তাহলে কিছু ছাটাই করে দিবেন।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোদ পায় এমন জায়গায় গামলাটি রেখে দিন। মনে রাখবেন দুপুর ২টার পরে যেন শাপলায় কোন অবস্থায়ই রোদ না পায়। কড়া রোদে পানি গরম হয়ে গেলে শাপলার পাতা হলুদ হতে থাকে। প্রথম দিকে কিছু পাতা মরে যেতে পারে। এতে বিচলিত না হয়ে যত্ন নিন । কয়েক মাসের মধ্যে নতুন পাতা আসবে ।
শাপলা চারা লাগানোর ১ মাসের মধ্যে পানি বদল না করাই ভাল । পানি বদলানোর সময় পাত্রের গায়ে জন্মানো পিচ্ছিল শেওলা পরিষ্কার করে দিন ভাল করে।
প্রতিদিন অন্তত একবার করে দেখুন শাপলা চাড়ি বা গামলাতে পানি আছে কিনা। পানি কমে গেলেই আবার পানি দিয়ে ভরে দেবেন। চাইলে বৃষ্টি পানি জমিয়ে রাখতে পারেন। পানি কমে গেলে জমানো বৃষ্টির পানি দিলে গাছ ভালো থাকবে।
মরা পাতা জমতে দেবেন না। পাতা মরে পচে গেলে পানি নষ্ট হয়ে তাতে শ্যাওলা জমবে।
শাপলার ঔষধি গুনাগুন : শাপলার অনেক ঔষুধি গুণাগুণ রয়েছে। শাপলা রক্ত দোষ ও বহুমূত্র রোগে অনেক উপকারে আসে। এছাড়াও শাপলা প্রসাবের জ্বালা পোড়া, আমাশয় ও পেট ফাঁপায় উপকারী।
শাপলার অন্যান্য ব্যবহার : শাপলাকে শুধু সবজি হিসেবে খাওয়া হয় তা নয় শাপলার ফলগুলো পাকলে ফেটে যায়। ফলের মধ্যে থাকে কালে ও বাদামী রঙের অসংখ্য বীজ। এই বীজ রোদে শুকিয়ে গরম বালু দিয়ে আগুনে ভেজে খই তৈরি করা যায়। ইলিশ ও চিংড়ি মাছের সাথে রান্না করলে অতুলনীয় স্বাদ পাওয়া যায়।
//এআরএইচ//