Ultimate magazine theme for WordPress.

দেশে উৎপাদিত দুধে কোনো প্রকার স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই

ভারতে পরীক্ষা

0

কৃষিখবর প্রতিবেদক : দেশে উৎপাদিত পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধে কোনো প্রকার স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি)। এসব দুধের নমুনা ভারতের চেন্নাইয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। আজ বুধবার সচিবালয়ে দুধ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক, সালফা ড্রাগ ও ভারী ধাতুর উপস্থিতি বিশ্লেষণ ফলাফল প্রকাশ করে তিনি এ তথ্য জানান। বিএআরসির পুষ্টি ইউনিটের পরিচালক ড. মো. মনিরুল ইসলাম গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন।

ড. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, পাস্তরিত ও অপাস্তরিত দুধে কোনো প্রকার ভারী ধাতু ও সালফা ড্রাগ পাওয়া যায়নি। দেশে উৎপাদিত দুধে কোনো প্রকার স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই। এ নিয়ে উদ্বেগ বা কোনো উৎকণ্ঠা নেই।

মিল্ক ভিটা, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, ইগলু, আরডি, সাভার ডেইরি ও প্রাণ এবং অপাস্তুরিত (কাঁচা তরল দুধ) দুধের ১৬টি নমুনা সংগ্রহ করে ভারতের চেন্নাইয়ের এসজিএস গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হয় বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।

মনিরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি স্থানীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাজার থেকে পাস্তুরিত ও কাঁচা তরল দুধের নমুনা সংগ্রহ করে স্থানীয় কয়েকটি ল্যাবরেটরি থেকে পরীক্ষা করে অ্যান্টিবায়োটিক ও ভারী ধাতুর উপস্থিতি রয়েছে বলে দাবি করে। পরবর্তীতে এসব রিপোর্ট হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হয়।

খাদ্যপণ্যের গুণগত মান বিশ্লেষণে আমাদের দেশে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো ল্যাবরেটরি নেই জানিয়ে মনিরুল বলেন, স্থানীয় এসব গবেষণাগারের বিশ্লেষণ সক্ষমতা বা মান কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এক শ্রেণির সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা কোন প্রকার বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত বা কোন প্রকার মান সম্পন্ন গবেষণা ফলাফল ছাড়াই অনেকটা দায়সারা রিপোর্ট তৈরি করে ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন পণ্যের মান নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে চলেছে।

বিগত বছরগুলোতেও এসব তথাকথিত শ্রেণির লোকেরা ফল, সবজি, মাছসহ খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন প্রয়োগ করা হয় বলে ব্যাপকভাবে প্রচার প্রচারণা চালিয়েছে; ফলে মানুষ শুধু ফল খাওয়াই ছেড়ে দেয়নি, এতে আর্থিক ক্ষতিসহ বৈদেশিক বাজারেও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং হচ্ছে।

জনমনের অস্থিরতা দূরীকরণে দুধে অ্যান্টিবায়োটিক, সালফা ড্রাগ ও ভারী ধাতুর অবশিষ্টাংশের উপস্থিতি বিশ্লেষণের জন্য বিএআরসি দেশের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বাজারজাতকৃত পাস্তুরিত দুধসহ কাঁচা তরল দুধ সংগ্রহ করে। এসব নমুনায় কোনো প্রকার অ্যান্টিয়োটিক, সালফা ড্রাগ ও ভারী ধাতুর রেসিডিউ/অবশিষ্টাংশের উপস্থিতি আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। ঢাকার মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, গুলশান ও ফার্মগেট এলাকা থেকে পাস্তুরিত দুধ এবং অপাস্তুরিত দুধের নমুনা সাভারের রাজাসনের খামার থেকে সংগ্রহ করা হয়।

প্রতিটি পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধের নমুনা সরাসরি বিশ্লেষণসহ একই সঙ্গে এসব দুধের প্রতিটি নমুনা নয় মিনিট সিদ্ধ করে অ্যান্টিবায়োটিক, সালফা ড্রাগ ও ভারী ধাতুর অবশিষ্টংশের উপস্থিতিও বিশ্লেষণ করা হয়।

বিশ্লেষণকৃত ফলাফল: বিশ্লেষণ ফলাফলে পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধে কোনো প্রকার ভারী ধাতু যেমন- লিড ও ক্রোমিয়ামের রেসিডিউ (অবশিষ্টাংশ) পাওয়া যায়নি। ফলাফলে পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধে কোনো প্রকার সালফা ড্রাগের অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়নি।

মোট ১৬টি নমুনায় মধ্যে শুধু একটি নমুনায় (মিল্কভিটা) অ্যান্টিবায়োটিক স্ট্রেপটোমাইসিন (ংঃৎবঢ়ঃড়সুপরহ) এর উপস্থিতি প্রতি কেজিতে ১০ মাইক্রোগ্রামের নিচে পাওয়া গেছে; তবে তা মানবদেহের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার অনেক নিচে (সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা ২০০/মাইক্রোগ্রাম/কেজি)।

প্রাণের একটি নমুনায় ক্লোরাফেনিকলের (পযড়ষড়ৎধসঢ়যবহরপড়ষ) উপস্থিতি প্রতি কেজিতে ০.০৬ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া গেছে, দুধের ক্ষেত্রে এটির কোনো নির্ধারিত মাত্রা পাওয়া যায়নি, তবে কারও কারও মতে ০.১ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য।

এছাড়া বিশ্লেষণ করা (১০টি) নমুনায় অন্য কোনো প্রকার অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি বা অবশিষ্টাংশের অস্তিত্ব মেলেনি।

মনিরুল ইসলাম বলেন, গবেষণালব্ধ ফলাফল বিশ্লেষণে নিশ্চিতভাবে বলা যায় দেশীয় প্রতিষ্ঠান উৎপাদিত বাজারজাত করা দুধ পানে কোনো প্রকার স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই।

তিনি বলেন, খাদ্য বিষয়ক যে কোনো ধরনের আতঙ্ক বা বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য বিভিন্ন পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা এবং একদল প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল তৈরি জরুরি।

বাজারে অনেক দুধ থাকলেও সাত কোম্পানির নমুনা সংগ্রহ বিষয়ে মনিরুল বলেন, আমরা গুরুত্ব দিয়েছি যে সমস্ত কোম্পানির উৎপাদন ক্ষমতা খুব বেশি এবং দেশে খুব বেশি প্রচলিত সেগুলো তাৎক্ষণিক পরীক্ষা করিয়েছি।

এই সাত আইটেমের দুধ খেলে মানুষের কোনো ক্ষতি হবে না, যদি ক্ষতি হয় সে দায় আপনারা নেবেন- এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে দুধের উৎপাদন হয়। অনেক শিল্প এলাকা, শহর এলাকাতেও গাভি পালন করে। এখন হঠাৎ কোথাও যদি ভারী ধাতু হয়ে থাকে, আমরা পরীক্ষা করিয়েছি সেগুলো খুব নির্ভরযোগ্য। এটার ভিত্তিতে আমরা বলছি এগুলোতে আমরা পাইনি।

‘কিন্তু একেবারে সব দুধ ভালো, এটা আমি ওইভাবে তো ৃ দিতে পারবো না। হঠাৎ যদি কেউ কন্ট্রামিনেট করেৃ। কিন্তু ইনজেনারেল এটা (ভারী ধাতু/অ্যান্টিবায়োটিক) হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। গত ১৬ জুলাই নমুনা পাঠানো হয়েছিল, আমরা মনে করি এসজিএস এর রিপোর্টটা রিলায়েবল ও সারা পৃথিবীর জন্য এটি গ্রহণযোগ্য। সিঙ্গাপুরে করালেও একই রিপোর্ট হতো। ১৩০টি দেশে এসজিএস-এর ল্যাবরেটরি আছে।’

কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা যে সব দুধের পরীক্ষা করিয়েছি সেগুলো অবশ্যই নিরাপদ এবং কোনো রকম সমস্যা নেই। আর ছোট ছোট যে কোম্পানি আছে আমার ধারণা তারাও হয়তো ভালোই হবে। তবুও এগুলো পরীক্ষার দাবি রাখে। আগামীতে আমরা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠাবো।

গত ২৫ জুন ঢাবির ফার্মেসি অনুষদের শিক্ষকরা একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। মিল্কভিটাসহ সাতটি ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত (পাস্তুরিত) দুধের নমুনা পরীক্ষা করে সেগুলোতে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

পরে সংবাদ সম্মেলনে বায়োমেডিক্যাল রিচার্স সেন্টারের পরিচালক ও ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, পরীক্ষায় পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনার সবগুলোতেই লেভোফ্লক্সাসিন ও সিপ্রোফ্লক্সাসিন ও ছয়টি নমুনায় এজিথ্রোমাইসিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, যে সব ল্যাবরেটরির কথা বলা হয়েছে সেগুলোর বেশির ভাগেরই ভারী ধাতু, অ্যান্টিবায়োটিক, ডিটারজেন্ট পরীক্ষা করার সক্ষমতা নেই। এসব বিষয় মাথায় রেখে সাভারে একটি পরীক্ষাগার নির্মাণ করা হচ্ছে।
//এআরএইচ//

Leave A Reply

Your email address will not be published.