Ultimate magazine theme for WordPress.

ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সার নিরাময়ে নিয়মিত করলা খান

0

কৃষিখবর ডেস্ক : ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার নিরাময়ে নিয়মিত করলা খান। অতি সম্প্রতি কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক গবেষণায় জানানো হয় যে, করলার রস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন এবং অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে পারে। করলা এশিয়া, আফ্রিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। ঐতিহ্যগত ভাবেই ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ব্যবহার হয়ে আসছে করলা।

অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার খুবই জটিল একটি ক্যান্সার যা প্রায়ই দেরিতে শনাক্ত হয় বলে নিরাময়ের সময় খুব কম পাওয়া যায়। ঐতিহ্যগত থেরাপি (কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন, সার্জারি ইত্যাদি) এর ক্ষেত্রে আশাব্যাঞ্জক ফলাফল দেখায় না এবং গবেষকেরা এখনো নিরাময়ের উপায় খোঁজার চেষ্টা করছেন।

অতি সম্প্রতি করলার রস অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে পারে বলে দেখা গেছে কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক গবেষণায়। পরীক্ষাটি ইঁদুরের শরীরে এবং টেস্ট টিউবের মধ্যে করা হয়।

অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার : অনেক ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমারে ইনসুলিন রিসেপ্টর আছে যা গ্লুকোজকে ক্যান্সার কোষের দিকে ঠেলে দেয় তাদেরকে বৃদ্ধি পেতে এবং বিভক্ত হতে। গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, নির্ভরশীল পদ্ধতিতে ইনসুলিন এর ডোজ অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে। করলা ইনসুলিনের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে থাকতে সাহায্য করে। এভাবেই দীর্ঘমেয়াদে করলা অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার নিরাময়ে সাহায্য করে।

কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাটি পরিচালনা করেন ডা. রাজেশ আগরওয়াল। গবেষকেরা করলার প্রভাব লক্ষ্য করেন ৪ টি ভিন্ন ধরণের অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার কোষের উপর এবং পরীক্ষাটি টেস্ট টিউবে এবং ইঁদুরে করা হয় । ভিভো গবেষণায় অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সার কোষ আছে এমন ইঁদুরদের ২ টি দলে পৃথক করা হয়। ইঁদুরের একটি দলকে পানি দেয়া হয় এবং অন্য দলটিকে করলার রস দেয়া হয় ৬ সপ্তাহের জন্য।

গবেষকেরা টিউমারকে শেষ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেন এবং ফলাফলে দেখেন যে, করলার রস শুধু ক্যান্সার কোষের দ্রুত বৃদ্ধিকেই প্রতিহত করেনা বরং ক্যান্সার কোষের মৃত্যুকেও উৎসাহিত করে। নিয়ন্ত্রিত দলটির তুলনায় চিকিৎসার দলটিতে টিউমারের বৃদ্ধি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত প্রতিহত হয় এবং এর ফলে শরীরে কোন বিষাক্ততা বা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না।

ডায়াবেটিস : ডায়াবেটিস নিরাময়ে করলার কার্যকারিতা নির্ণয়ের জন্য অনেক গবেষণা হয়েছে। বিশ্বাস করা হয় যে, ডায়াবেটিস অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে। অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারের উপর করলার রসের প্রভাব দেখার পর গবেষকেরা অনুমান করেন যে করলার রস ডায়াবেটিস ও নিরাময় করতে পারবে।

২০১১ সালে এথনোফারমাকোলজি নামক সাময়িকীতে ৪ সপ্তাহের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে দেখানো হয় যে, যারা দৈনিক ২০০০ মিলিগ্রাম করলা গ্রহণ করেন তাদের মধ্যে পরিমিত হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব এবং উল্লেখযোগ্য ফ্রুক্টোস্যামাইন ব্যবস্থাপনা দেখা যায়।

গবেষণা প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয় যে, টাইপ ২ ডায়াবেটিসের রোগীদের মধ্যে যারা দৈনিক ২০০০ মিলিগ্রাম করলার রস গ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে পরিমিত হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব ফেলেছিলো এবং ফ্রুক্টোস্যামাইনের মাত্রা কমেছিলো উল্লেখযোগ্য হারে। যদিও দৈনিক ১০০০ মিলিগ্রাম মেটফরমিন এর তুলনায় করলার রসের হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব কম থাকে।

২০০৮ সালে কেমিস্ট্রি এন্ড বায়োলজি নামক আন্তর্জাতিক সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায় যে, করলার যৌগ গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণকে উন্নত করে, কোষের গ্লুকোজের উত্তোলনে সাহায্য করে এবং গ্লুকোজের সার্বিক সহনশীলতার উন্নতিতে সাহায্য করে। গবেষণাটি ইঁদুরের উপর করা হয় এবং ডায়াবেটিস নিরাময়ে ও স্থূলতা কমতে আশাপ্রদ অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায় করলার ব্যবহারে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, করলার রস নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে, ডায়াবেটিস নিরাময়ে এবং অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার প্রতিরোধে শক্তিশালী ফলাফল দেখায়। এই উদ্ভিদের কার্যকারিতা বোঝার জন্য আরো অনেক গবেষণা ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রয়োজন।
//এআরএইচ//

Leave A Reply

Your email address will not be published.