বগুড়া প্রতিনিধি : বন্যায় বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার প্রায় ১২ হাজার ২৩০ হেক্টরের মতো আবাদি ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এরমধ্যে রয়েছে পাট, রোপা আউশ, রোপা আমন বীজতলা, মরিচসহ নানা ধরনের সবজি ক্ষেত। জেলার ৬২ হাজারের বেশি কৃষক পরিবারের ক্ষতির পরিমান প্রায় ১২৩ কোটি টাকা।
যমুনা ও বাঙালি নদী বেষ্টিত বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলা। আজ সোমবার যমুনা পয়েন্টে পানি কমে বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে, যমুনার পানি কমলেও ধীরে ধীরে বাঙালি নদীর পানি বাড়ছে। বাঙালি নদীর পাশ দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় পানি বিভিন্ন ফসলি জমিতে ঢুকছে। এতে তলিয়ে যাচ্ছে নানা ধরনের ফসলি জমি। গতকাল রবিবার পর্যন্ত বন্যায় প্রায় ১২৩ কোটির টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। কারণ বাঙালি নদীর পানি ক্রমেই বাড়ছে। এই পানি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ফসলি জমিতে ঢুকছে। এতে নিত্য নতুন ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ছে।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ বাবলু সূত্রধর জানান, বন্যায় ক্ষতির তালিকার শীর্ষে রয়েছে পাট। প্রায় ছয় হাজার হেক্টর জমির পাটক্ষেত বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া রোপা আউশ মৌসুমের উঠতি ধানেরও বেশ ক্ষতি হয়েছে। এর পরেই ক্ষতির তালিকায় রয়েছে রোপা আমন বীজতলা, সবজি ও মরিচ।
তিনি আরও জানান, বাঙালি নদীর পানি বাড়তে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেননা বাঙালি নদীর পানি ঠেকাতে কোনো বাঁধ নেই। এজন্য প্রতিদিন নতুন নতুন জমিতে বাঙালি নদীর পানি ঢুকছে। এতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ছে নতুন নতুন ফসলি জমি। রোববার নাগাদ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে টাকার অঙ্কে ওই পরিমাণ ক্ষতি উল্লেখ করা হয়েছে। চূড়ান্ত ক্ষতির হিসাব জানতে বন্যা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে, সংশ্লিষ্ট দফতরের তথ্য মতে, ২০১৭ সালের জুলাইয়ে প্রথম দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় তিন হাজার ৭০৫ হেক্টর আবাদি জমির ফসল তলিয়ে যায়। এতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২৪ হাজার ২৫টির মতো কৃষক পরিবার। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৫ কোটি ১১ লাখ ৬৬ হাজার ৪০০ টাকা।
অপরদিকে একই বছরের আগস্টে দ্বিতীয় দফা বন্যায় জেলার ১২টি উপজেলার ২২ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। এতে রোপা আমন, বীজতলা, কিছু রোপা আউশ (পাকা ধান), মরিচ, বেগুন, পটলের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২৭৭ কোটি টাকা।
কারণ ছিল একইরকম। যমুনার পানি কমতে থাকলেও বাড়তে থাকে বাঙালি নদীর পানি। এতে করে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়। তলিয়ে যায় বিভিন্ন এলাকার ফসলি ক্ষেত। আর তাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপকহারে বেড়ে যায়। ২০১৭ সালের বন্যার মতো এবারের বন্যার গতিবেগও প্রায় একইরকম বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসাদুল হক জানান, বগুড়ায় উজানে যমুনা, করতোয়া, এলাই ও ঘাঘট নদীর প্রায় ১৮টির মতো পয়েন্টে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে সেই পানি এসে পড়ছে বাঙালি নদীতে। এতে বাঙালির পানি বাড়া অব্যাহত রয়েছে। আগামী দু’একদিন এই পানি বাড়া অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর দ্রুত পানি কমবে।
//এআরএইচ//