Ultimate magazine theme for WordPress.

ভুল পদ্ধতির কারণে মাছের অর্ধেক খাদ্যের অপচয়

0

কৃষিখবর প্রতিবেদক : ভুল পদ্ধতির কারণে মাছের অর্ধেক খাদ্য অপচয় হচ্ছে। এতে একদিকে মৎস্যচাষে ব্যয় বাড়ছে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জলাশয়ের মাটি এবং কমছে মাছের উৎপাদন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মৎস্যচাষীদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

পৃথিবীতে মিঠা পানির মাছ চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থানগুলোর একটি বাংলাদেশ। এখানে মৎস্য চাষ ব্যবস্থাকে সম্ভাবনাময় করে তুলেছে আড়াই লাখ হেক্টর উন্মুক্ত জলাশয় ও গ্রামীণ উদ্যোগে গড়ে ওঠা লাখ লাখ পুকুর। অ্যাকুয়াকালচার বা মিঠা পানির মৎস্য চাষে বিশ্বের রোল মডেল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। চাষকৃত মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে পঞ্চম।

দেশে অ্যাকুয়াকালচারের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গড়ে উঠেছে মৎস্য খাদ্য বা ফিশ ফিড উৎপাদন শিল্প। বদ্ধ জলাশয়ে মৎস্য চাষের জন্য এ শিল্পসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত খাবার ব্যবহার করছেন খামারিরা। কিন্তু প্রয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে খামারিদের অজ্ঞানতা ও অসাবধানতার কারণে এসব মৎস্যখাদ্য অপচয় হচ্ছে বিপুল পরিমাণে। ফলে ফিশ ফিডের পেছনে খামারির ব্যয় হচ্ছে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি। অন্যদিকে এসব খাদ্য পচে পানিকে করছে দূষিত। এতে ব্যাহত হচ্ছে মাছের স্বাভাবিক বিকাশও। খাতটিতে বাংলাদেশের অর্জন এখন অসামান্য হলেও এ অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে বিপুল পরিমাণে মৎস্যখাদ্যের অপচয়।

ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ফিআব) তথ্যমতে, মাছের জন্য তিন ধরনের খাবার তৈরি করা হয়। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তৈরি ভাসমান ও ডুবন্ত খাদ্য যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে স্থানীয়ভাবে তৈরি পিলেট বা ডুবন্ত দানাদার খাদ্য। দেশে মৎস্যখাদ্যের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৭ লাখ টনের। যদিও এর প্রায় ৪৫ শতাংশই অপচয় হচ্ছে।

দেশে মাছের বিভিন্ন ধরনের খাবারের মধ্যে ভাসমান খাদ্যের চাহিদা সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উৎপাদিত ডুবন্ত খাদ্যের চাহিদা সাড়ে ছয় থেকে সাত লাখ টন। এছাড়া স্থানীয়ভাবে তৈরি ডুবন্ত খাদ্যের চাহিদা পাঁচ-ছয় লাখ টন। এর মধ্যে ভাসমান খাদ্য তুলনামূলক কম পরিমাণে নষ্ট হয়।

পরিসংখ্যান বলছে, বিভিন্ন ধরনের ফিশ ফিডের মধ্যে ডুবন্ত খাদ্যের ৫০-৬০ শতাংশই অপচয় হচ্ছে। অন্যদিকে ভাসমান খাদ্যের মাত্র ৫ থেকে ৮ শতাংশ নষ্ট হয়। পরিমাণের দিক থেকে বলতে গেলে, দেশে প্রতি বছর মাছের ভাসমান খাবার নষ্ট হচ্ছে ৩৫ হাজার টন পর্যন্ত। অন্যদিকে ডুবন্ত খাবার নষ্ট হয় প্রায় সাত-আট লাখ টন।

মূলত মাছের খাদ্য প্রয়োগে ভুল পদ্ধতি অনুসরণ ও পুকুরে চাষ পদ্ধতিতে সঠিক পরিকল্পনার অভাব থাকার কারণেই এ বিপুল পরিমাণ মৎস্যখাদ্য নষ্ট হচ্ছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারিরা। পাশাপাশি এসব খাবার পচে পুকুরের পরিবেশকে করে তুলছে দূষিত। ফলে মাছের স্বাভাবিক বিকাশ ও উৎপাদনশীলতায় ব্যাঘাত ঘটছে। এতে খামারিদের ক্ষতির মাত্রা আরো বেড়ে যাচ্ছে।

বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি ভাসমান মাছের খাদ্যের দাম কোম্পানিভেদে ৫০-৬২ টাকা। অন্যদিকে ডুবন্ত খাবারের দাম কেজিপ্রতি ৩৫-৫৫ টাকা। সবচেয়ে কম দামকে বিবেচনায় নিলেও দেশে এখন মৎস্যখাদ্যের বাজারব্যাপ্তি ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, এর অর্ধেকই নষ্ট হচ্ছে পানিতে।

খামারিরা বলছেন, অনেক সময় বেশি উৎপাদনের আশায় খাদ্য বেশি ব্যবহার করা হয়। তাদের ধারণা, খাদ্য বেশি করে প্রয়োগ করলে মাছও দ্রুত বড় হবে। কিন্তু মাছ সে খাদ্য খেতে পারছে কিনা, সেটি কখনো খতিয়ে দেখা হয় না।

অভিযোগ রয়েছে, পুকুরে অতিরিক্ত পরিমাণে মৎস্যখাদ্য প্রয়োগের পেছনে ডিলারদের এক ধরনের প্ররোচনা কাজ করে। এছাড়া পুকুরে ফিশ ফিডের সঠিক ব্যবহার নিয়ে অনেক সময়েই মৎস্য কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সঠিক নির্দেশনা পাওয়া যায় না। ফলে খামারিরাও এক ধরনের অজ্ঞতার মধ্য দিয়েই পুকুরে মৎস্যখাদ্য প্রয়োগ করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, অপচয়ের কারণে বাংলাদেশে মৎস্যখাদ্যের ফুড কনভারশন রেশিও (এফসিআর) প্রতিবেশী দেশের তুলনায় অনেক বেশি। দেশে চাষকৃত প্রতি কেজি মাছ উৎপাদনে খাদ্য ব্যবহার হচ্ছে দেড়-দুই কেজি। অন্যদিকে প্রতিযোগী বিভিন্ন দেশে এর পরিমাণ এক কেজির মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

বাংলাদেশে বদ্ধ জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনে মোট খরচের ৬৮-৭০ শতাংশই ব্যয় হয় খাদ্যের পেছনে। আবার এসব ফিশ ফিড উৎপাদনে প্রয়োজনীয় উপকরণের ৬০ শতাংশ আনা হয় আমদানির মাধ্যমে। ফলে মাছের খাদ্যের অপচয় রোধ করা গেলে একদিক থেকে যেমন দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করা সম্ভব, অন্যদিকে তেমনি পুকুরের পরিবেশ সঠিক মাত্রায় সংরক্ষণের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতাও বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএইউ) অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক বলেন, প্রাকৃতিক উৎস কমে যাওয়ার কারণে মৎস্য উৎপাদনে তৈরিকৃত খাদ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মাছের খাদ্যের সিংহভাগই তৈরি করা হয় আমদানি উপকরণের মাধ্যমে।

এসব খাদ্য সঠিকভাবে পানিতে দেয়া হচ্ছে কিনা, সেটি দেখার বিষয়ে যেমন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না, তেমনি সঠিক মান বজায় রেখে আমদানি করা হচ্ছে কিনা, সেটিও সঠিকভাবে দেখা হচ্ছে না। কারণ নিয়ন্ত্রক বা পরামর্শক সংস্থাগুলোর সে ধরনের সক্ষমতা বা দক্ষতা নেই। ফলে পুকুরে মৎস্যখাদ্যের প্রয়োগ হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে।

দেশের অ্যাকুয়াকালচার শিল্পে ফিশ ফিডের যেমন অতিব্যবহার দেখা যায়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার নিয়মিতর পরিবর্তে মাঝেমধ্যে ও অনিয়মিতভাবে খাদ্য সরবরাহেরও প্রবণতা দেখা যায়। এভাবে খাদ্য সরবরাহ করলে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করা সম্ভব নয়। তাছাড়া অনেক চাষী অসময়ে, আবার কেউ কেউ ইচ্ছেমতো খাবার দিয়ে থাকেন।

ফলে মাছের সুষম বৃদ্ধি হয় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে অপচয়ের মাত্রাও বেড়ে যায়। আবার অর্থাভাবে খামারিরা চাষের মাঝামাঝি সময়ে গিয়ে মৎস্যখাদ্যের সরবরাহ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলে তখনো তাদের লাভের পরিমাণ কমে যায়। এছাড়া মাছ খাবার গ্রহণ করছে কিনা তা-ও অনেক চাষী লক্ষ করেন না।

এক্ষেত্রে মৎস্যখাদ্য প্রয়োগের বিষয়ে খামারিদের পরিপূর্ণ জ্ঞান দেয়ার ক্ষেত্রে সম্প্রসারণকর্মীরা আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে পারেন। প্রয়োজনে মাছচাষী বা খামারিদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে তাদের উৎপাদন কার্যক্রমকেও প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করতে পারেন এসব সম্প্রসারণকর্মী। মাছের আবাসস্থল হিসেবে পানির গুণাগুণ ও পরিবেশ রক্ষা করাটা অত্যন্ত জরুরি।

অথচ অনেক মৎস্য খামারিই পানির গুণাগুণ রক্ষায় সচেষ্ট নন। মাছ চাষের জন্য পানির নির্ধারিত স্থিতি মাপ রয়েছে। এগুলোকে দক্ষতার সঙ্গে রক্ষা করতে পারলে চাষের সময়ে নানা সমস্যা এড়ানো সম্ভব। পানির পিএইচ ও অ্যামোনিয়া, ক্ষারত্ব, দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রভৃতির আদর্শ মাত্রা রয়েছে।

এ মাত্রা অতিক্রম করলে বা অস্বাভাবিক কমবেশি হলেই বিপত্তি ঘটে। চাষীরা টেস্ট কিটের মাধ্যমে এগুলোর মাত্রা পরিমাপ করে পানির গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে পারেন এবং অভিজ্ঞ খামারিরা এর ভিত্তিতে করণীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারেন। এ কারণে চাষীদের জন্য টেস্ট কিট রাখা অতি জরুরি।

সার্বিকভাবে স্বল্প খরচে একজন খামারির বেশি পরিমাণে মৎস্য উৎপাদন নিশ্চিত করা গেলে পাশাপাশি তার আর্থিক সামর্থ্যের বিষয়টিকেও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে যেমন খামারির আয় বাড়বে, তেমনি দেশও হয়ে উঠবে আরো সমৃদ্ধিশালী। এছাড়া এ বিষয়ে সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ বা প্রতিবন্ধকতাগুলোকেও ভালোভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. লিয়াকত আলী বলেন, উন্নত দেশে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মৎস্যখাদ্য প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু দেশে পর্যবেক্ষণ না করে প্রয়োগের কারণে মৎস্যখাদ্যের সিংহভাগই নষ্ট হচ্ছে। সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে না পারার কারণে এসব খাবার পুকুরের তলদেশে চলে যাচ্ছে। খাবারগুলো পুকুরের তলদেশে পড়ে পচে যাচ্ছে।

খাবার পচে যাওয়ার কারণে পানিতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে কমছে অক্সিজেন। এ পরিস্থিতিতে মাছগুলো স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পুকুরের পানির ওপর ভেসে থাকছে। এভাবে বেশিক্ষণ উপরের দিকে থাকতে গিয়ে মাছগুলো বিশ্রাম পাচ্ছে না। ফলে মাছগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে ও শক্তি ক্ষয় করছে। এতে মাছের ওজন কমার মধ্য দিয়ে হ্রাস পাচ্ছে উৎপাদনশীলতাও।

কয়েক বছর ধরেই দেশে চাষকৃত মাছের উৎপাদন ও আবাদ এলাকা বাড়ছে ৫-৮ শতাংশ হারে। ২৩ লাখ টন চাষকৃত মাছের মধ্যে শুধু পুকুরেই মাছের উৎপাদন ছাড়িয়েছে প্রায় ১৯ লাখ টন। এসব মাছ উৎপাদনে খাদ্য বিপণন হচ্ছে প্রায় ১৬-১৭ লাখ টন। দেশে প্রাণিখাদ্য বাজারজাত করছে প্রধানত ৭০টির বেশি প্রতিষ্ঠান।

এর মধ্যে মৎস্যখাদ্য বিপণনে শীর্ষে রয়েছে এসিআই গোদরেজ এগ্রো প্রাইভেট লিমিটেড, কাজী ফিডস লিমিটেড, কোয়ালিটি ফিড, স্পেক্ট্রা, নারিশ, প্যারাগন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান। মাছের খাদ্যের জন্য চালের কুঁড়া, সরিষার খৈল, গম, সয়াবিন, সয়ামিল, ফিশ মিল, ফিশ অয়েল মূলত এগুলোই ফিশ ফিড শিল্পে প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফিশ মিল ও মাছের আমিষ সরবরাহকারী বিকল্প খাবারের মধ্যে সয়াবিন, গম বা ভুট্টার অবদান প্রায় ৬২ শতাংশ। ফিশ ফিড উৎপাদনে প্রয়োজনীয় উপকরণের ৬০ শতাংশই দেশে আনা হয় আমদানির মাধ্যমে।

তবে সুষম পুষ্টিকর খাদ্য ছাড়া মাছের সন্তোষজনক উৎপাদন আশা করা যায় না। সুষম খাদ্যের উপাদানগুলো হচ্ছে আমিষ, শ্বেতসার, ভিটামিন, তেল, খনিজ লবণ ও পানি। পুকুরে মাছের প্রাকৃতিক খাবারের পরিমাণ এমনিতেই ধীরে ধীরে কমে যায়। প্রাকৃতিক নিয়মে পুকুরে মাছের যেসব খাবার (প্লাঙ্কটন) উৎপাদন হয়, তা সার্বিক পুষ্টি চাহিদা মেটানোয় যথেষ্ট নয়।

এছাড়া পুকুরে প্রাকৃতিক খাবার তৈরির জন্য যে সার প্রয়োগ করা হয়, তাতেও মাছের খাদ্য ঘাটতি অপূরণীয়ই থেকে যায়। ফলে মাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় না। প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সম্পূরক খাবার মাছের উৎপাদন বাড়াতে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই স্বল্প সময়ে স্বল্পায়তনের জায়গা থেকে মাছের বেশি ফলন পেতে হলে মাছের সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করা প্রয়োজন।

মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরির জন্য ব্যবহূত উপাদানগুলো হচ্ছে চালের কুঁড়া, গমের ভুসি, সরিষার খৈল, তিলের খৈল, ফিশ মিল, গরু-ছাগলের রক্ত, নাড়িভুঁড়ি, রেশম কীট এবং জলজ উদ্ভিদ যেমন কচুরিপানা, খুদেপানা, কুটিপানা ইত্যাদি। মাছের জন্য সুষম খাদ্য হতে হলে এতে সাধারণত মোট খাদ্যের দশমিক ৫ থেকে ২ শতাংশ ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ প্রয়োজন হয়। খাবারকে বেশি সময় ধরে স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে বাইন্ডার হিসেবে আটা, ময়দা অথবা চিটাগুড়ের ব্যবহারকেও অতীব জরুরি বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

বাজারে ফিড মিল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধেও দাম ও মান নিয়ন্ত্রণে গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে। খামারিদের সুবিধা দিতে গিয়ে বাজেটে মৎস্যখাদ্যে শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কৃষক বা খামারিরা এর সুবিধা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

দুর্বলতা রয়েছে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগের দিক থেকেও। মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য আইন, ২০১০-এর আওতায় কার্যকর কোনো কর্তৃপক্ষ না থাকায় সঠিকভাবে এসব পণ্যের বাজার তদারক করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বাজারের বিভিন্ন প্রাণী ও মৎস্যখাদ্যের মান ও দাম নিয়ে ভুক্তভোগীদের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে ফিড মিল কোম্পানিগুলোকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় আনাসহ সংশ্লিষ্ট আইন অমান্যের শাস্তি ও জরিমানার সুস্পষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে। মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য আইন, ২০১০-এ আইনটি অমান্যে অনূর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছিল।

আবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিস্থিতি বিবেচনা করে যেকোনো জরিমানা ও দণ্ডে দণ্ডিত করতে পারবেন বলেও উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে লাইসেন্স বাতিলেরও বিধান রয়েছে এতে।

মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. একেএম আমিনুল হক বলেন, ফিড কোম্পানিগুলোর খাদ্যের মান তদারকির জন্য কারিগরি সুবিধাসহ বিভিন্ন ধরনের নীতিসহায়তা দেয়া হচ্ছে। আইন ও বিধি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাণিখাদ্য উৎপাদন ও বিপণন করছে কিনা, সেটিও তদারক করা হচ্ছে।

এজন্য প্রতিনিয়ত কোম্পানিগুলোকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ পরিদর্শন করা হচ্ছে। মাছের খাদ্যের সঠিক ও কার্যকর ব্যবহারে কৃষক প্রশিক্ষণও বাড়ানো হচ্ছে। প্রযুক্তিগত, বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপের সহায়তা নেয়া ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোম্পানি প্রতিনিধি ও কৃষকদের সচেতন করা হচ্ছে।
//এআরএইচ//

Leave A Reply

Your email address will not be published.