Ultimate magazine theme for WordPress.

কোল্ড স্টোরেজের গাফিলতিতে পুড়লো ৭০ কৃষকের ৩৫ একর জমির ফসল

0

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : একটি কোল্ড স্টোরেজের গাফিলতিতে পুড়লো এক গ্রামের ৭০ জন কৃষকের ৩৫ একর জমির ফসল। ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে মিষ্টি কুমড়া, মরিচ,আম-লিচুর বাগান, ভুট্টা, শিম, শষার ক্ষেত। এর প্রভাবে পরবর্তী মৌসুমেও এসব জমিতে ঠিকমতো ফসল ফলবে না বলে আশংকা কৃষকদের। ঘটনাটি স্বীকার করে স্থানীয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ না দেওয়া হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত সোমবার রাতে উত্তর ঠাকুরগাঁওয়ে অবস্থিত আমানত কোল্ডস্টোরেজের পাইপ ফেটে গ্যাস বের হতে শুরু করে। এই গ্যাসে আশপাশের মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, ভুট্টা, শিম, শষা, আম ও লিচুর বাগান পুড়ে যায়। মঙ্গলবার বিকালে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা একত্রিত হয়ে ক্ষতিপূরণের দাবিতে ওই কোল্ড স্টোরেজের গেটে তালা মেরে দেন। কোল্ড স্টোরেজের মালিক ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলে চাষিরা ফিরে যান। তবে বুধবার ওই এলাকায় আবারো প্রতিবাদে নামেন কৃষকরা। তাদের দাবি ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কিন্তু মালিক পক্ষ বলছে, গাছে পানি ছিটিয়ে গাছ বাঁচাতে হবে। এতে ফিরে আসবে গাছের প্রাণ। কিন্তু তা মানতে নারাজ ওই এলাকার কৃষকরা।

এনজিও আর সার-কিটনাশকের দোকানে ঋণের জালে জর্জরিত ঠাকুরগাঁও জেলার উত্তর ঠাকুরগাঁও গ্রামের কৃষক জহরলাল রায়। এবার মিষ্টি কুমড়ার ফলন তুলে দুটি এনজিও থেকে নেওয়া ৯০ হাজার টাকা আর স্থানীয় সার ও কিটনাশকের দোকানে ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে ঋণ মুক্ত হওয়ার আশায় ছিলেন তিনি। এবার ২৫০ শতক জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আগাম আবাদ করেন এই চাষি। আগাম কুমড়া বাজারে তুলে মোটা অঙ্কের লাভের আশা করছিলেন। কিন্তু এক রাতেই তার সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই। জহর লাল রায় জানান, ‘মিষ্টি কুমরার ক্ষেত এখন পুড়ে লাল হয়ে পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। গাছে ফুল ধরেছিল। আর দুই সপ্তাহ পর ফল আসতো। কিন্তু এখন গাছ শুকিয়ে ফুল নষ্ট হয়ে যাবে।’

তার মতোই ওই গ্রামের প্রশান্ত কুমার রায়। ২০১৩ সালে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে আম লিচুর বাগান গড়ে তোলেন। তার বাগানে ৫০টি লিচু ও ১৫০টি আমের গাছ রয়েছে। সোমবার রাতে তার বাগানও পুড়ে যায়। গেল বার ওই বাগান থেকে দেড় লাখ টাকার আম-লিচু বিক্রি করেছিলেন তিনি। প্রশান্ত রায়ের দাবি, ‘কোন্ড স্টোরেজ থেকে বের হওয়া গ্যাসে আমার বাগানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পুড়ে গেছে গাছের পাতা আর আম লিচুর মুকুল। এতে এ দফায় আমাকে দেড় লাখ টাকারও বেশি ক্ষতি গুনতে হবে।’

শুধু জহর লাল ও প্রশান্তই নয়, তাদের মতো ওই গ্রামে ৭০ জন কৃষকের ফসল ক্ষেত পুড়ে গেছে আমানত কোল্ডস্টোরেজ থেকে বের হওয়া গ্যাসে।

ক্ষতিগ্রস্ত ভবেশ রায় জানান, এবার তিনি মরিচের আবাদ করেছেন ১১০ শতক জমিতে। তাতে তার খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। গত মৌসুমে ওই জমি থেকে মরিচ বিক্রি করেছেন ১লাখ ৫০ হাজার টাকা। এবারও তার তেমনই লাভের আশা ছিল। কিন্তু পুরো মরিচের পাতা পুড়ে গেছে। তার মতো মলিন চন্দ্রও মরিচের আবাদ করেছিল ১৫০ শতক জমিতে। এতে ওই কৃষকেও ক্ষতির অংক গুনতে হবে।

ঘটনার পর বৃহষ্পতিবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেত পরিদর্শনে যান আমানত কোল্ডস্টোরেজের মালিক মো. আব্দুল্লাহ ও রমজান আলী। এ সময় সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি গাছগুলো বাঁচাতে। এর পরেও যদি ক্ষতিপূরণ দিতে হয় তা দেওয়া হবে।’

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ‘ওই কোল্ড স্টোরেজ থেকে অ্যামোনিয়াম গ্যাস নির্গত হয়েছে। এ ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট এলাকার উপ-সহকারী কৃষি অফিসার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করেছে। সেই হিসাবে ৭০জন কৃষকের ৩৫ একর জমি নষ্ট হয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। ওই কোল্ড স্টোরেজের মালিককে কৃষকদের ফসলের ক্ষতিপুরণ দিতে হবে। তা না হলে ওই মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
//এআরএইচ//

Leave A Reply

Your email address will not be published.