Ultimate magazine theme for WordPress.

ডিমের দাম আর কত বাড়বে?

0

কৃষিখবর ডেস্ক : ডিমের দাম আর কত বাড়বে, জিজ্ঞাসা ক্রেতাদের। অথচ এ প্রশ্নের যেন কোনও উত্তর নেই কারো কাছে! বর্তমানে বাজারে প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিম বেচা হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৪ টাকায়। কোনও কোনও এলাকায় আরও বেশি দরে। অথচ এক মাস আগেও হালপ্রতি দাম ছিল ২২ থেকে ২৪ টাকা। খবর বাংলা ট্রিবিউন।

ক্রেতাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের একটি অংশ সরকারের বাজার মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে অবৈধ মুনাফা করছে। বিক্রেতারা অবশ্য দাবি করছেন, এটিই ডিমের ন্যায্য দাম। তাদের মতে, এতদিন লোকসান দিয়ে ডিম বেচাকেনা করছিলেন তারা। কোনও কোনও খুচরা বিক্রেতার দাবি, পাইকাররা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাদের করার কিছু নেই। আর পাইকাররা আঙুল তুলছেন খামারিদের দিকে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী, রাজধানীর খুচরা বাজারে এ সপ্তাহে প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিম বেচা হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৬ টাকা দরে। এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল ৩০ থেকে ৩৪ টাকা। আর এক মাস আগে এক হালি ডিম বেচা হতো ২২ থেকে ২৬ টাকায়।

ডিমের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে টিসিবির সহকারী কার্যনির্বাহী (বাজার ও তথ্য) শাহিদ ইবনে মিরাজ বলেন, ‘আমরা শুধু বাজার দর দেখে তা আমাদের ওয়েবসাইটে দিয়ে রাখি। দাম বাড়ার কারণ আমরা বলতে পারবো না।’

অন্যান্য সময়ের মতো এবারও ডিমের দাম বাড়া নিয়ে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা পরস্পরকে দুষছেন। খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, পাইকাররা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর পাইকারদের দাবি, তারা এক টাকা বাড়ালে খুচরা বিক্রেতারা বাড়ান তিন টাকা।
তবে পাইকারি বিক্রেতারা বেশি দায়ী করছেন উৎপাদনকারী খামার মালিকদের। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে গরমের কারণে ডিম নষ্ট হওয়া এবং পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়াসহ আরও অনেক কিছু।

ওয়ার্ল্ড পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হাসান বলেন, ‘কয়েকটি কারণে ডিমের দাম বেড়েছে। ৬/৭ মাস আগে বার্ড ফ্লুতে অনেক মুরগি মারা গেছে। এতে মুরগির প্রোডাকশন কমে যায়। ফলে ডিমও কম উৎপাদন হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ডিম উৎপাদনে খরচ হয় ছয় টাকা। কিন্তু খামারিদের বেচতে হয়েছে চার থেকে সাড়ে চার টাকায়। এই লোকসানের ফলে অনেক খামারি মুরগি বেচে দিয়েছেন। এতে প্রোডাকশন কমে গেছে। একই সঙ্গে বাজারে ডিমের চাহিদাও বেড়ে গেছে। ফলে দাম বেড়ে গেছে।’

ডিমের দাম বাড়ার আরেকটি বড় কারণ মধ্যস্বত্বভোগী বলে জানান মাহবুব। তিনি বলেন, ‘খামারি থেকে ভোক্তা— এর মাঝে একটি শ্রেণি আছে যারা দুই থেকে আড়াই টাকা লাভ করে। এটা নিয়ে ভাবতে হবে।’ তার মতে, সরাসরি খামারি থেকে খুচরা বাজারে ডিম পৌঁছাতে পারলে ডিম প্রতি আরও দুই টাকা কমে ক্রেতারা কিনতে পারবেন।

কবে নাগাদ বাজার স্থিতিশীল হতে পারে জানতে চাইলে মাহবুব হাসান বলেন, ‘খামারে নতুন করে মুরগি ওঠালেও ডিম আসতে সময় লাগবে অন্তত চার থেকে পাঁচ মাস। এই সময়ের মধ্যে দাম কমার সম্ভাবনা কম।’

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে বাজারে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ অপ্রতুল। কারণ, গত এক দেড় বছর ধরে ডিমের দাম বিভিন্ন কারণে নিম্নমুখী ছিল। তখন অনেক ব্যবসায়ী লোকসান দিয়ে চলে গেছে। তারা আর পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় ফিরে আসতে পারেননি। সেসব খামারি যে পরিমাণ ডিম বাজারে সরবরাহ করতো সেই পরিমাণ ডিম তো বাজারে আসছে না। অথচ বাজারে তো চাহিদা রয়েই গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতি পিস ডিমের দাম ৭ টাকা না পেলে উৎপাদনকারী খামারি লোকসানের মুখে পড়বেন। কারণ প্রতি পিস ডিমের উৎপাদন খরচ ৬ টাকা ১৫ পয়সা থেকে ৬ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত। কাজেই প্রতি পিস ডিমের দাম ৭ টাকা পেতে হবে খামারিকে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোল্ট্রি কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের কনভেনার মসিউর রহমান খান বলেন, ‘লোকসান দিয়ে দিয়ে যেসব খামরি সর্বস্বান্ত হয়ে চলে গেছেন, তাদের ফিরিয়ে আনার কোনও উদ্যোগ নেই।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়বে কোন উপায়ে? আর বাজারে ডিমের সরবরাহ না বাড়লে ডিমের ওপর চাপ কমবে কীভাবে? আর চাপ না কমলে দাম কমবে কীভাবে? এসব সমস্যা নিরসনের কি কোনও উদ্যোগ আছে কারও?

মসিউর রহমান জানান, একজন খামারির প্রতি পিস ডিম উৎপাদনের খরচ ৬ টাকার ওপরে। কাজেই তাকে টিকে থাকতে হলে প্রতি পিস ডিম ৭ টাকা দরে ডিম বেচতে হবে। না পারলে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আর খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হলে খাত টিকবে না।

রাজধানীল গুলিস্তান ঠাঁটারি বাজারের ডিমের পাইকারি ব্যবসায়ী মহসীন মিয়া বলেন, ‘সিজনের কারণেই এখন ডিমের চাহিদা বেশি। কারণ, শীতের সবজি তো প্রায় শেষ। বাজারে নতুন মাছও নেই। ব্রয়লার মুরগির দাম বেশি। তাই ডিমের ওপর চাপ বেড়েছে। সে তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় বেড়েছে ডিমের দাম। আমরা যে দামে কিনি সেভাবেই ব্যবসা ধরে বেচি।’ দুই পয়সা মুনাফা না পেলে ব্যবসা করি কেন বলেও প্রশ্ন তোলেন মহসীন মিয়া।
একই বাজারের খুচরা বিক্রেতা শামসুল হক ফরাজি বলেন, শীতের সিজন শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ সময় বাজারে নতুন সবজি কম থাকবে। কাজেই চাহিদা কমার কোনও সম্ভাবনা নেই। এ সময় ডিমের চাহিদা এমনিতেই বাড়ে। তাই দাম আর কমার সম্ভাবনা নেই।

যাত্রাবাড়ী বাজারের ডিম ব্যবসায়ী জহির মিয়া বলেন, ‘রোজায় সময় ডিমের ডজন ছিল ৬৫-৭০ টাকা। তবে ঈদের পর ডিমের দাম কয়েক দফা বেড়েছে। আর শেষ সপ্তাহে ডজনে ডিমের দাম বেড়েছে ৫-৭ টাকা। এতে এক ডজন ডিম বেচা হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়।’ তবে খুচরা দোকানে আরও বেশি দামে বেচা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মাদারটেকের নন্দীপাড়া বাজারের ডিম ব্যবসায়ী মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘রোজায় ডিম যে দামে কিনে আনতাম এখন তার দ্বিগুণ হয়েছে। ডিমের দাম এতটাই বেড়েছে যে, এক ডজন ডিম ৯৫ টাকার নিচে বেচার উপায় নেই। অথচ ঈদের পরও কিছুদিন আগেও ডিমের ডজন ৭০ টাকায় বেচেছি।’

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাজার মনিটরিং টিম নিয়মিত কাজ করছে। ডিমের দাম বাড়ার বিষয়ে যদি কোথাও কোনও অসঙ্গতি চোখে পড়ে, অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
//এআরএইচ//

Leave A Reply

Your email address will not be published.