Ultimate magazine theme for WordPress.

মুকুলের সুবাসে সুরভিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ

0

চাপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : মুকুলের মোহনীয় সুবাসে ম-ম আমের শহর চাঁপাইনবাবগঞ্জ। বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে সারি সারি সাজানো বাগানে ফাগুন হাওয়ায় দোলা। মুকুলে মুকুলে ভরে ওঠা আম বাগানগুলোয় ছড়িয়ে পড়েছে বাদামি রঙের ছটা। বসন্তের আবাহনে নতুন মাত্রা যোগ করা এই সৌরভ স্থানীয়দের মনে সুখ জাগাচ্ছে। আমচাষিরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন মুকুল সংরক্ষণ ও পরিচর্যা নিয়ে। তবে চলতি মৌসুমে এখনও বাগান বেচা-কেনা তেমন একটা না হওয়ায় চিন্তিত বাগান মালিক ও আমচাষিরা। যদিও এবছরও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেড়েছে আমবাগানের সংখ্যা।

গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকজন বাগান মালিক ও আমচাষিরা জানান, গত কয়েক বছর ধরে আমের অব্যাহত দরপতন, আম মৌসুমে ফরমালিন মেশানো ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য ও গণহারে ফরমালিন মেশানোর অপপ্রচার, উৎপাদন খরচের চেয়ে দাম কম পাওয়ায় বাগান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন এখানকার চাষিরা।

জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার লাভাঙ্গা এলাকার বাগান মালিক নেসার আহম্মেদ বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম উৎপাদন করে ন্যায্য দাম পাননি আমচাষিরা। এতে তারা যেভাবে পুঁজি হারিয়েছেন, তাতে আম উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে চাষিদের। এ কারণে এবার উল্লেখযোগ্যহারে জেলার আমবাগান বেচা-কেনা হয়নি।’

কানসাটের আমচাষি সামিউজ্জোহা বলেন, ‘গণমাধ্যমে ফরমালিনের অপপ্রচারের কারণেও আমের দাম পাওয়া যায় না। আর এখন যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আমশিল্পই এখন ধ্বংসের মুখে।’

তবে আমবাগান চাষিরা যাই বলুন না কেন, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রতিবছরই বাড়ছে আম বাগানের সংখ্যা। এ বছর জেলায় ৩০ হাজার ৮১০ হেক্টর জমির বাগানে আম চাষ হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, এবার আমচাষের পরিমাণ গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ৩শ’ হেক্টর বেশি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরই মধ্যে জেলার আমবাগানগুলোর ৭০ থেকে ৮০ ভাগ গাছে মুকুল এসেছে। সেই মুকুল পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগান মালিক ও চাষিরা। মুকুলে ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ ঠেকাতে বালাইনাশক ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন ফল গবেষকরা। অনেক বাগানচাষিকে বালাইনাশক ওষুধ স্প্রে করতেও দেখা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক বছর ধরেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাড়ছে আমবাগান। এখানে রয়েছে আশ্বিনা, হিমসাগর, দুধসর, কালীভোগ, তোতাপরীসহ প্রায় দুইশো’র বেশি জাতের আম। চলতি মৌসুমে তেমন একটা কুয়াশার আধিক্য না থাকায় প্রায় ৮০ ভাগ বাগানের গাছেই নতুন মুকুল এসেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমচাষি তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার আবহাওয়া ভালো আছে। জেলার আমবাগানগুলোতে মুকুলও এসেছে ভালো। তবে আবহাওয়া খারাপ হলে মুকুল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি। স্প্রে করছি।’
কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সামনের দিনগুলোতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গতবারের মতো এবারও আমের বাম্পার ফলন হবে। কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হুদা বলেন, ‘এই মুহূর্তে মুকুলের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। সামনের দিনগুলোতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও আমের বাম্পার ফলন হবে। আমরা অন্যান্য বছর প্রতি হেক্টরে ৯ থেকে ১০ মেট্রিক টন ফলন পেয়েছি। এবার এটি ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছি।’
তিনি বলেন, গতবছর জেলায় আম উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন। এবার আরও ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি।’

এলাকার এক ব্যবসায়ী পাটিগণিতের হিসাব কষে বলেন, সাধারণ একটি ট্রাকে ৫ টন পণ্য পরিবহন করা যায়। সে হিসেবে প্রতি হেক্টরে আমের যে ফলন হয় (৯ থেকে ১০ মে.টন) তা পরিবহনে দুটি ট্রাক লাগে। আর এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩০ হাজার ৮১০ হেক্টর জমির বাগানে আম চাষ হচ্ছে। যদি ফলন গত বছরের মতোও হয় তাহলে এ বছর জেলার সব আম পরিবহন করতে লাগবে কমপক্ষে ৬১ হাজার ট্রাক।
//এআরএইচ//

Leave A Reply

Your email address will not be published.