Ultimate magazine theme for WordPress.

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ধনী দেশগুলোকে ‘সদিচ্ছা’ প্রদর্শনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

0

কৃষিখবর ডেস্ক : জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বিশ্বকে রক্ষায় ‘সদিচ্ছা’ নিয়ে কাজ করার জন্য ধনী দেশগুলোর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমাদের যথেষ্ট বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, উদ্ভাবনা এবং অর্থায়ন রয়েছে। আমাদের এখন কেবল প্রয়োজন সমাজের সর্বত্র ধনিক শ্রেণীর সদিচ্ছা, আগ্রহ ও প্রচেষ্টা।’ গতকাল শনিবার রাতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ এজ এ সিকিউরিটি থ্রেট’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। খবর বিএসএস।

আলোচনা অনুষ্ঠানে পোস্টডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট পরিচালক হানস জোয়াসিম সভাপতিত্ব করেন। ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ফর ফরেন এফেয়ার্স এন্ড ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অব কেনিয়া মনিকা জুমা, নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইনি ইরিকসন সরিডি, ইউএস সিনেটর সেলডন, হোয়াইট হাউস এন্ড কো-এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অব গ্রীনপিস ইন্টারন্যাশনাল বুন্নি ম্যাকডিয়ারমিড প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন। ডয়চে ভেলের চিফ পলিটিক্যাল করসপন্ডেন্ট বার্লিন ম্যালিন্ডা ক্রেনি রোর্স অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক অব্যাহত উষ্ণতা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের জন্য সত্যিকার এক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে সাইক্লোন, ঝড় জলোচ্ছ্বাস এবং মৌসুমী বন্যা মানুষের জীবন জীবিকার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি এ বিষয় কারো কোন সন্দেহ থাকে, তাদেরকে আমি বাংলাদেশে এসে প্রকৃত অবস্থা দেখে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

২০১২ সালে ইউএনজিএ সিদ্ধান্তের বিষয় পুনরুল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব মোকাবেলায় সমষ্টিগত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার কার্যক্রম গ্রহন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের প্রমাণ পাওয়া যায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের আরো অনেক হুমকির কারণে লাখ লাখ মানুষ পৈর্তৃক ভূমি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে, নদী ভাঙন, লবণাক্ত পানি এবং ভূগর্ভস্ত পানিতে আর্সেনিকের মিশ্রণের কারণে এসব ঘটছে।

তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে পানিতে অ্যাসিডিটি বাড়ছে, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যদিও বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাংলাদেশের ভূমিকা সামান্যই।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রতি বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের কারণে অনেক পরিবার রাতারাতি গৃহহীন হয়ে পড়ছে এবং হাজার হাজার একর কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিপাতে অনিয়ম এবং অতিবৃষ্টি ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে কৃষকের জন্য চাষাবাদ কঠিন হয়ে পড়েছে এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নতুন নতুন রোগ-ব্যাধি বাড়ছে। বাংলাদেশ থেকে ম্যালেরিয়া সফলভাবে নির্মূল করা হলেও সেটি আবার ফিরে আসার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, একই ধরনের রোগ-ব্যাধি বাড়ছে খাদ্যশস্য, পশুসম্পদ ও পোল্ট্রিতে সেক্টরেও। তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশের প্রজনন হুমকির মুখে পড়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ুর এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ বিশ্বে চাল ও মাছ উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। সবজি উৎপাদনে পঞ্চম এবং হর্টিকালচারে শীর্ষ দশের মধ্যে রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিশ্বের কাছে যাদুকরী পরিবেশবান্ধব পাটের আাঁশ ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নিজস্ব উদ্যোগে বৈরি অবস্থায় টিকে থাকার উপযোগী শস্যের জাত উদ্ভাবন করেছি।

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, তাঁর সরকার নিজস্ব সম্পদ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন তহবিল গঠন করেছে এবং অভিযোজন ও প্রশমন কর্মসূচি বাস্তবায়নে এই পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪০ কোটি মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে।

তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা এখন বড় ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি: আমাদের অর্জিত অগ্রগতি ধরে রাখতে পারব কি না? প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ও অন্যান্য অনেক দেশেরই জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’

তিনি বলেন, বিগত এক দশক ধরে তিনি কোপেন হেগেন, নিউইয়র্ক, কিউবা ও ইসা-শিমার বৈশ্বিক আলোচনায় তিনি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে বারবার জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম বৈশ্বিক ব্যবসা ও শিল্পক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনকে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং খুঁজে পেয়েছে যে, অভিযোজন ও প্রশমনে ব্যর্থতা, পানি সংকট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবসা ও শিল্পক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে ।

ব্রিটিশ আবহাওয়া অফিস ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এক দশককে ১৫০ বছরের মধ্যে উষ্ণতম দশক বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে। অতএব অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা ও মানবীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিপর্যয়ের মূলে যে পরিবেশ সংকট প্রধান ও একমাত্র কারণ হয়ে দাঁড়াবে, তা প্রশ্নাতীত। তিনি জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার জন্যে জীবনযাত্রা, আচরণ, পদ্ধতি ও অর্থনীতিতে পরিবর্তনের আহ্বান জানান।
//এআরএইচ//

Leave A Reply

Your email address will not be published.