খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : কমলা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। যদিও বাংলাদেশে কমলার চাষ প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম। দেশের প্রয়োজন মেটাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে কমলা আমদানি করতে হয়। তবে কৃষি গবেষকরা দেশে কমলার চাষ বাড়ানোর লক্ষ্যে গবেষণা করছেন দীর্ঘদিন ধরেই। এই গবেষণায় সফলতা পেয়েছেন খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকরা। তারা ২-৩ বছর আগে বারি কমলা-২ নামে একটি নতুন কমলার জাত উদ্ভাবন করেছেন। গড়া হলুদ রঙের এ কমলা দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনই খেতেও সুস্বাদু। এই কমলার চাষ করে পাহাড়ের কৃষকরা তাদের ভাগ্য বদলাতে পারবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মাতৃবাগানে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের ঢালু ও সমতল জামিতে সারি সারি কমলা গাছ লাগানো রয়েছে। গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে গাঢ় হলুদ রঙের কমলা। ঝোপাযুক্ত গাছে পাতার চেয়ে যেন ফল বেশি। পুরো বাগানজুড়ে ছোট ছোট গাছের শাখায় শাখায় নতুন জাতের এই কমলা। আকারে ছোট ও গোলাকার বারি কমলা-২ কেবল খেতেই সুস্বাদু নয়, এটি দেখতেও বেশ সুন্দর ও মিষ্টি। এই কমলার টিএসএস মান প্রায় ৯ শতাংশ। এটি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়।
খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুন্সী রাশীদ আহমদ জানান, প্রায় ২-৩ বছর আগে খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এই জাতের কমলার উদ্ভাবন করে। তবে এই চাইনিজ ছোট জাতের কমলা পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলে চাষাবাদের উপযোগী। নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চ ফলনশীর চাইনিজ জাতের এই কমলা কৃষকরা বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষাবাদ করলে পাহাড়ে বারি কমলা-২ অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল হিসেবে পরিচিতি পাবে।
তিনি বলেন, ‘বারি কমলা-২ বা চাইনিজ কমলা বৈশাখ অর্থাৎ মে-জুনে রোপণের সময়। তবে পাহাড়ে নিয়মিত সেচের ব্যবস্থা করা গেলে বছরের অন্য সময়েও এই জাতের কমলার চারা রোপণ করা যায়। রোপণের ২ থেকে ৩ বছরে মধ্যে ফলন পাওয়া যায়।
সঠিকভাবে যত্ন ও পরিচর্যা করলে প্রতিটি গাছ থেকে ৫০০-৬০০টি কমলা পাওয়া যায়। গবেষণা কেন্দ্রে রোপণ করা মাতৃবৃক্ষে বর্তমানে প্রচুর ফল ধরেছে।
তবে কমলা জাতীয় ফলের গাছের ডাম্পিং অফ, গ্রিনিং, গামোসিস রোগের সংক্রামণ বেশি। কমলা গাছ গামোসিস রোগে আক্রান্ত হলে আক্রান্ত গাছ পুড়িয়ে ফেলতে হবে বা মাটির গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে। এছাড়া বাগানে ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে বাগানের পোকা দমন করা যায়। তবে পাকার সঙ্গে সঙ্গে ফল সংগ্রহ করতে হবে।’
খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে বারি কমলা-২ জাতের উদ্ভাবন করা হয়। এটি বর্তমানে দেশে একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় বারি কমলা-২ বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষাবাদ হচ্ছে। ভবিষ্যতে কৃষকদের সামনে এই জাতের কমলার সম্ভাবনা তুলে ধরতে পারলে, এটি অত্যন্ত লাভজনক ফল হিসেবে পরিচিতি পাবে। এছাড়া বারি কমলা-২ একটি সৌর্ন্দয বর্ধনকারী গাছ হিসেবেও বাড়ির আঙিনায় বা ছাদে চাষাবাদ করা যায়।’
//এআরএইচ//