কৃষিখবর প্রতিবেদক : কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘রফতানি বহুমুখীকরণে দেশের কৃষিখাত বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। ক্রয় ক্ষমতা না থাকায় সব ধরনের কৃষি পণ্য মানুষ কিনে খেতে পারে না। মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাজার সৃষ্টি হলে কৃষকও পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবে। রাজধানীর ফার্মগেটস্থ কেআইবি চত্বরে আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সবজি মেলা-২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সংসদ সদস্য ও কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান প্রমুখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদ সদস্য কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. গোলাম মোর্শেদ আব্দুল হালিম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল, হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনজুরুল হান্নান ও হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা ড. মো. আব্দুল জলিল ভূঁঞা। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মো. কবির ইকরামুল হক।
‘নিরাপদ সবজি করব চাষ পুষ্টি মিলবে ১২ মাস’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ এ মেলা শুরু হয়েছে। মেলা চলবে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে জাতীয় সবজি মেলা ২০১৯ উপলক্ষে একটি র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। কেআইবি চত্বর থেকে বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার কেআইবি চত্বরে র্যালিটি শেষ হয়। এবারের মেলায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ৭১টি স্টল ও ৫টি প্যাভেলিয়ন অংশ নিচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকছে।
কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য এখন দুটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পুষ্টি ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ এবং উৎপাদনমুখী খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে আমাদের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করা।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের অধিকাংশই তাদের আয় দিয়ে সবজি, ডিম ও দুধসহ প্রয়োজনীয় কৃষি পণ্য কিনে খেতে পারে না। তাই সম্ভাবনা থাকলেও দেশের অভ্যন্তরের কাঙ্ক্ষিত কৃষি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ হচ্ছে না। এতে অনেক ক্ষেত্রে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না।
প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে মূল্য সংযোজন ও রফতানি বাড়াতে পারলে দেশের বাজারও সম্প্রসারণ হবে। কৃষক তার ফসলের ন্যায্যমূল্য পাবে। আরও বাড়বে কৃষি উৎপাদন। নিশ্চিত হবে নিরাপদ ও পুষ্টি মানসম্পন্ন খাদ্যের যোগান।’
শুধু সচেতনতার অভাবে দেশের মানুষ সবজি খায় না- এ কথার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে মন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ এখন অনেক সচেতন। তারা সবকিছু কিনতে চায়। কিন্তু ক্রয়ক্ষমতার অভাবে বাজারে কম দামের মূলার মতো পণ্য ছাড়া অন্য কিছু কিনতে পারে না। যা কৃষি উন্নয়নের অন্তরায়। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই কৃষিকে এগিয়ে নিতে হবে। লক্ষ্য পূরণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করার পলিসি নির্ধারণ করতে হবে। এ জন্য কৃষি খাতের সবার সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই।’
কৃষির অপার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হাইব্রিড বীজসহ নানা সীমাবদ্ধতায় এ সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। দেশের প্রয়োজনীয় হাইব্রিড বীজ এখনও আমদানি করেই মেটাতে হয়। একটি বা দুটি ছাড়া আমাদের বিজ্ঞানীরা আর কোনো হাইব্রিড বীজ আবিষ্কার করতে পারেননি। কেন তারা হাইব্রিড জাতের বীজ আবিষ্কার করতে পারছেন না, তাও ভেবে দেখার সময় এসেছে। টাকার অভাব নেই, তবুও বিজ্ঞানীরা কেন পারছেন না?
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী বলেন, ‘অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে বিগত ১০ বছরে কৃষিক্ষেত্রে হয়েছে বিপ্লব। দেশে খাদ্যের অভাব নেই। এ কৃতিত্ব কৃষক, কৃষিবিদ ও কৃষি বিজ্ঞানীদের। দেশে উৎপাদিত ফসলের ২৫-৪০ ভাগ সংগ্রহ উত্তর পর্যায়ে নষ্ট হয়। এ ক্ষতির ১০ ভাগও যদি কমানো যায় তাহলে দেশের খাদ্য ভাণ্ডার আরও সমৃদ্ধ হবে। আমি বিশ্বাস করি আমাদের দেশের কৃষি সংশ্লিষ্টরা এ দায়িত্বও পালন করবে।’
//এআরএইচ//