কৃষিখবর প্রতিবেদক : প্রক্রিয়াতেই ঘুরপাক খাচ্ছে মৎস্যজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থান। খাদ্য সহায়তা হিসেবে ভিজিএফ (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) বাড়ানোর কার্যক্রমও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মৎস্যজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ খাদ্য সহায়তা হিসেবে ভিজিএফ (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) কর্মসূচিতে গাইবান্ধা, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ, পাবনা এবং সিরাজগঞ্জকে অন্তর্ভুক্ত করাসহ ভিজিএফ কর্মসূচিতে চাল ও আর্থিক সহায়তার পরিমাণ বাড়ানোর জন্য গত বছরের জুলাইয়ে প্রস্তাব করেছিলেন জেলা প্রশাসকরা। সেই প্রস্তাব এখনও কার্যকর হয়নি। তবে জাটকা ইলিশ ও মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ভিজিএফ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মৎস্যজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থান ছাড়াও ক্ষুদ্র এবং মাঝারি মৎস্য ও পোল্ট্রি খামারিদের সহায়তার জন্য মৎস্য ও পোল্ট্রি ফিডের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগের কথা বলা হয়েছিল। সেই সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক পর্যালোচনা সভায় বলা হয়,আন্তর্জাতিক বাজারে পোল্ট্রি ফিডের সব উপাদানের দাম বাড়ার কারণে পোল্ট্রি ফিডের দাম বেড়ে যায়। পোল্ট্রি ফিডের দাম বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য ভুট্টা আমদানি সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত করা হয়েছে। সয়াবিন মিলের কাস্টমস ডিউটি ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে এব সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত করার জন্য এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমদানিকারকদের প্রাণিসম্পদ অধিদফতর থেকে অনাপত্তি পত্র (এনওসি) দেওয়ার ফলে তারা ফিড প্রিমিক্স বা ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স আমদানিতে সাত শতাংশ কর অবকাশ সুবিধা পায়। যা ফিডের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
পর্যালোচনা সভায় আরও বলা হয়, প্রবাহমান নদী ও অন্যান্য জলাশয়ে খাঁচায় মাছচাষ নীতিমালা (২০১৮) তৈরির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। হাওর অঞ্চলের জলাশয়ে মাছের প্রজনন মৌসুম বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ এ দু’মাসে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে জেলেদেরকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার একটি প্রস্তাবনা ছিল। সেই বিষয়ে বলা হয়,হাওরে মাছের প্রজনন মৌসুম বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ এ দুই মাসে ওই অঞ্চলে মাছ ধরা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
প্রয়োজনীয় প্রণোদনার মাধ্যমে কারেন্ট জালের কারখানাগুলোকে মনোফিলামেন্ট পদ্ধতি থেকে মাল্টি ফিলামেন্ট পদ্ধতিতে পরিবর্তন করার বিষয়ে বলা হয়,নিদের্শনা বাস্তবায়নের জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও উদ্ধুদ্ধকরণ বিষয়ক কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীর শূন্য পদগুলো পূরণের বিষয়ে বলা হয়, প্রথম শ্রেণির শূন্যপদ পূরণের জন্য বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে ৩৬তম বিসিএস-এ ৪৭ জন কর্মকর্তা অধিদফতরে যোগদান করেছেন। তাছাড়া ৩৭তম বিসিএস-এ ৪৭ জন এবং ৩৮তম বিসিএস-এ ৩২ জন এবং ৩৯তম বিসিএস-এ ৮০ জন কর্মকর্তা নিয়োগের কার্যক্রম চলমান আছে। দ্বিতীয় শ্রেণির পদগুলো পদোন্নতিযোগ্য পদ।
সর্বমোট নয়টি পদের মধ্যে সাতটি পদ শূন্য আছে। গ্রেডেশন তালিকা হালনাগাদ করার পর দ্বিতীয় শ্রেণির শূন্য পদগুলো পূরণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। তৃতীয় শ্রেণির ৮১১টি পদের এবং চতুর্থ শ্রেণির ৩২৭টি শূন্যপদ পূরণের জন্য মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রের পর অধিদফতর থেকে জারি করা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে তৃতীয় শ্রেণির ৩৫৬ জন কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ শেষে পদায়ন করা হয়েছে। অবশিষ্ট তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির পদগুলোর বিপরীতে মামলা হওয়ায় ওইসব পদে নিয়োগের কার্যক্রম স্থগিত আছে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে খামারিদের মৎস্য চাষ ও পোল্ট্রি শিল্পে উৎসাহিত করার জন্য উভয় খাতের বিদ্যুৎ বিল বাণিজ্যিক বিলের আওতামুক্ত করে সামঞ্জস্যপূর্ণ হারে নির্ধারণ করতে হবে। এমন প্রস্তাবের বিষয়ে বলা হয়েছে বিদ্যুতের মূল্য কৃষির অনুরূপ তিন টাকা ৮২ পয়সা ইউনিট হারে পুনর্নির্ধারণ করার জন্য গত বছরের ২২ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় উন্নতমানের চিংড়ির পোনা উৎপাদনে চাষি পর্যায়ে এসপিএফ বা রোগমুক্ত বাগদা চিংড়ির পিএল সরবরাহ নিশ্চিত করতে হ্যাচারিতে এসপিএফ পিএল উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় ২০১৭ সালে প্রায় ১৮ কোটি এসপিএফ (স্পেসিফিক প্যাথজেন ফি) ও পিএল (রোগমুক্ত পোনা) চাষির খামারে সরবরাহ করা হয়েছে। চাষি পর্যায়ে রোগমুক্ত ও গুণগত মানসম্পন্ন চিংড়ি পোনার সরবরাহ নিশ্চিত করতে ১০টি জীবাণু শনাক্ত করতে মৎস্য অধিদফতর ও ওয়ার্ল্ডফিশের যৌথ উদ্যোগে পিসিআর প্রটোকল (পলিমারেজ চেইন বিক্রিয়া) তৈরির পাশাপাশি পিসিআর পরীক্ষিত পোনা মজুতের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজার,সাতক্ষীরা ও খুলনায় তিনটি পিসিআর ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলার কলাতলীতে আরও একটি পিসিআর ল্যাব প্রতিষ্ঠা করে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
দেশের হাওর-বাওড় থেকে সংগৃহীত মাছ সংরক্ষণের জন্য হাওর অঞ্চলে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (ল্যান্ডিং জোন) স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কিশোরগঞ্জের ভৈরব ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে স্বাস্থ্যসম্মত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলমান আছে। মোহনগঞ্জের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। এছাড়া কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য রেলওয়ে থেকে মেঘনাঘাট এলাকায় দশমিক ২ হাজার ৭৫২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ওই কেন্দ্রের নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের জন্য এরইমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
//এআরএইচ//