Ultimate magazine theme for WordPress.

ভোলায় শিম চাষের আদর্শ গ্রাম কোড়ালিয়া

0

ভোলা প্রতিনিধি : জেলায় শিম চাষের জন্য বিখ্যাত কোড়ালিয়া গ্রাম। উপজেলা সদরের দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের গ্রামটিতে হাজার হাজার শতাংশ জমিতে খামার পদ্ধতিতে শিমের চাষ চলছে কয়েক যুগ ধরে। তাই পৌষের শীতের মধ্যে খামারে শিম ও গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন খামারিরা। অল্প সময়ে অধিক লাভ হওয়াতে বর্তমানে অনেকেই শিম চাষের প্রতি ঝুঁকছেন। এখানে প্রায় ৩’শ এর বেশি পরিবার এ পেশায় জড়িত। গ্রামীণ পথের দু’পাশের জমিতে শোভা পায় অগনন শিমের বাগান। বিস্তীর্ন জমিতে শিমের সবুজ সমারাহে সাদা-বেগুনি ফুলে ছেয়ে গেছে। লতার সাথে ঝুলছে সারি সারি শিম।

চাষিরা জানান, এ গ্রামে প্রায় ৩০ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে শিমের চাষ করা হচ্ছে। প্রথম দিকে ধান আবাদ করলেও বর্তমানে অধিকাংশ চাষি শিম চাষের সাথে জড়িত। গত বছর শিমের ফলন বৃদ্ধি ও দাম ভালো পাওয়ায় এবার যেন চাষিদের উৎসাহের শেষ নেই। সারাদিন খামারে পরিচর্যায় ব্যস্ত তারা। এখানকার প্রায় সব জমিতেই এখন শিম চাষ হচ্ছে। পরিত্যক্ত, অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে মাঁচা তুলে চলছে শিম চাষ। এছাড়া এখানে অন্যান্য সময় মৌসুমি সবজির চাষ করা হয়। মূলত সবজি চাষের উপর ভিত্তি করে এ গ্রামের কৃষকরা জিবীকা নির্বাহ করে থাকেন।

পশ্চিম কোড়ালিয়া গ্রামের শিম চাষি সৈয়দ আহমেদ হাওলাদার জানান, তিনি প্রায় ২৫ বছর যাবত শিমসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করছেন। এবছর ১ একর জমিতে শিমের খামার করেছেন। এতে প্রায় ১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আশা করছেন ৩ লাখ টাকার উপরে বিক্রি হবে তার। লাভ থাকবে ২ লাখ টাকারও বেশি। তিনি বলেন, অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি থেকে মাঘের শেষ পর্যন্ত থাকে শিমের পরিপূর্ণ মৌসুম। পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় এবার শিমের বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন এ কৃষক।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মৃত্যুঞ্জয় তালুকদার জানান, কোড়ালিয়া গ্রামে সব সমই শিমের জন্য বিখ্যাত। আমরা চাষিদের বিভিন্ন রোগ-বালাই সম্পর্কে ধারণা ও পরামর্শমূলক সহায়তা দিয়ে থাকি। আর চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শিমের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

চাষিরা জানান, শিম চাষের জন্য প্রথমে জমি নির্বাচনের মাধ্যমে বীজ বপনের জন্য উচু করে মাটি প্রস্তুত করতে হয়। পরিমিত সার ও অন্যান্য উপাদান প্রয়োগের মাধ্যমে সময়মত বীজ রোপণ করতে হয়। এছাড়া বাঁশ দিয়ে মাঁচা তৈরি করা হয়। মাঁচার উপরে তর তর করে বেড়ে উঠে শিমের লতা। সাধারণত ২/৩ মাসের মধ্যেই লতায় ফুল আসে। অগ্রহায়ণের শুরুতে গাছে ফুল থেকে শিম ধরা শুরু হয়। ইতোমধ্যে প্রত্যেক চাষিই ৩থেকে ৪ বার শিম বিক্রি করেছেন। স্থানীয় ভাষায় ক্ষেতের প্রথম শিম তোলাকে ‘হালভাঙ্গা’ বলা হয়। এসময় রীতিমত উৎসব হয় শিম তোলাকে কেন্দ্র করে। খামার থেকেই ব্যাপরীরা শিম কিনে নিয়ে যায়।

কৃষক গৌতম চন্দ্র দাস বলেন, তিনি ১ একর জমিতে শিমের চাষ করছেন। বর্তমানে শিমের বাজারদর ভালো রয়েছে। কেজি ১৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও প্রথম দিকে আরো বেশি দামে শিম বিক্রি হয়েছে। তিনি প্রায় ১ লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছেন। সামনের দিকে আরো বিক্রি হবে বলে জানান তিনি।

শুধু গৌতম নয়, সুমন কর্দো, হারুন মাইলতা, মানিক মৃধা, কালাম সরদার, মহাসীন, সেলিম ডাক্তার, সিরাজ, ফজলে নুর, ফকরুল মিঝিসহ আরো অনেকে শিম চাষের সাথে জড়িত। ব্যাপারীরা এখান থেকেই ভ্যানে করে শিম কিনে নিয়ে যান আড়ৎ ও বাজারে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায় এ গ্রাম থেকে শিম যাচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে।

এদিকে সরেজমিনে কোড়ালিয়া গ্রামে দেখা যায় অপুরূপ দৃশ্য। শুধু শিম আর শিমের খামার। বাড়ির অঙ্গিনা, পুকুর পাড়, রাস্তার পাশ, পরিত্যক্ত জমি, নিচু জমিসহ যেখানেই খালি জায়গা পাওয়া গেছে সেখানেই শিমের ঝাড় তোলা হয়েছে। সাদা-বেগুনি শিমের ফুলে ভ্রমর নাচে গুঞ্জন তুলে। সবুজ পাতার আড়ালে ঝুলছে শিমের সারি। চাষিরা একান্ত মনে কাজ করছেন ক্ষেতে। কোথাও কোথাও পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও শিমের পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখারুল ইসলাম স্বপন বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে এখানকার কৃষকরা তাদের জমিতে ধানের বদলে শিম চাষ করছেন। শিম চাষে বহু চাষি তাদের ভাগ্য বদল করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাই কোড়ালিয়াকে বলা হয় শিম চাষের আদর্শ গ্রাম। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চট্রগ্রাম, নোয়াখালী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এখান থেকে শিম পাঠানো হয়।

একই গ্রামের বটতলা এলাকার শিম চাষি হারুন মাইলতা ও নাছির মাইলতা বলেন, শিমের ফলন এবছর ভালো হয়েছে। গত বছর লাভ হওয়াতে এ বার আরো বেশি জমিতে শিমের আবাদ করেছেন তারা। উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হবেন এমনটাই আশা তাদের। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তার সার্বিক পরামর্শে অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তারা। এছাড়া হারেজ মিয়া, কবির মাইলতা, মিঠু মাইলতা, সামসুদ্দিন, আবু, কাঞ্চনসহ অনেকেই জানান তাদের শিম চাষের কথা। ভাগ্য বদলের কথা। তাই শীতের সময় পুরো গ্রামই হয়ে উঠে শিম চাষের গ্রাম।
//এআরএইচ//

Leave A Reply

Your email address will not be published.