Ultimate magazine theme for WordPress.

পাঁচ মাসে কৃষিঋণ কমেছে ৯ শতাংশ

ছন্দপতন থামছেই না

0

কৃষিখবর প্রতিবেদক : কৃষি ঋণ বিতরণে ছন্দ পতনের ঘটনা যেন থামছেই না। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) কৃষি ঋণ বিতরণে অধিকাংশ ব্যাংক লক্ষপূরণে ব্যর্থ হয়েছে। একই সঙ্গে গতবছরের একই সময়ের চেয়ে কমে গেছে কৃষিঋণ বিতরণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ব্যাংকগুলোর অনীহার কারণে কৃষিঋণ বিতরণ কমছে। অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় সরকার ব্যাপক জোর দিলেও কৃষকরা ঋণ চেয়ে ঋণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঋণের সুদহারও অনেক বেশি নেয়ার অভিযোগ করেছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) কৃষি খাতে মাত্র ৭ হাজার ৪৭৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৭৫৫ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ কম। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৮ হাজার ২৩০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অন্যান্য ছোট ঋণে তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেশি হওয়ার কথা বলে ব্যাংকগুলো সাধারণত ১২ থেকে ১৫ শতাংশ সুদ নেয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাধ্যবাধকতার কারণে কৃষি ঋণে ৯ শতাংশের বেশি সুদ নিতে পারে না। আর যেসব ব্যাংক এনজিওর মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করে সেক্ষেত্রে ঋণের সুদহার অনেক বেশি। যে কারণে সব সময়ই এ খাতে ঋণ বিতরণে অনীহা দেখায় অনেক ব্যাংক।

বেসরকারি ব্যাংকের মোট ঋণের অন্তত ২ শতাংশ কৃষিতে বিতরণ বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোনো ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলে অনর্জিত অংশের পুরোটাই বিনা সুদে এক বছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখতে হতো। তবে গত অর্থবছর এ বিধানে শিথিলতা এনে অনর্জিত অংশের ৩ শতাংশ বিনা সুদে বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখার কথা বলা হয়েছে। এরপর থেকে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ কমিয়েছে। তথ্যে দেখা যায়, ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ছয়টি ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণ শুরুই করেনি। ৭ বাণিজ্যিক ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণ শুরু করলেও বিতরণের হার এক বা দুই শতাংশ। যে সব ব্যাংক এখনো কৃষিঋণ বিতরন শুরুই করেনি, সে সব ব্যাংক হলো- বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি সিটি ব্যাংক-এনএ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং উরি ব্যাংক। এছাড়া দেশি বেসরকারি মধুমতি ব্যাংক ও সীমান্ত ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ কমলেও আদায় বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ৮ হাজার ৪৭৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে আদায়ের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গত নভেম্বর শেষে কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩৯ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা।

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কৃষি খাতে মোট ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবারের এ লক্ষ্যমাত্রা গত অর্থবছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি। গত জুলাইয়ে ঘোষিত নতুন কৃষিঋণ নীতিমালায় মোট লক্ষ্যমাত্রার অন্তত ১০ শতাংশ মৎস্য খাতে বিতরণ বাধ্যতামূলক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া আগের মতোই কৃষি ঋণের ৬০ শতাংশ শস্য এবং ১০ শতাংশ পশু সম্পদ খাতে বিতরণ করতে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছর কৃষিখাতে মোট ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রার ৫২ শতাংশ বিতরণ করবে বেসরকারি খাতের ব্যাংক। সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক বিতরণ করবে ৩০ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংক বিতরণ করবে ১৫ শতাংশ এবং বিদেশি ব্যাংক বিতরণ করবে তিন শতাংশ ঋণ। প্রতিবেদনে আরো দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর জন্য নয় হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ সময়ে তারা বিতরণ করেছে তিন হাজার ৬৬৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা, যা পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রার ৩৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে তারা লক্ষ্যমাত্রার ৩৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছিল।

বেসরকারি ও বিদেশি মালিকানার ব্যাংকগুলোর জন্য চলতি অর্থবছরে নির্ধারিত ১১ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রথম পাঁচ মাসে তারা দিয়েছে তিন হাজার ৮০৭ কোটি টাকা যা লক্ষ্যমাত্রার ৩১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। সে হিসেবে আলোচ্য সময়ে সরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ বাড়লেও কমেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ।
//এআরএইচ//

Leave A Reply

Your email address will not be published.