Ultimate magazine theme for WordPress.

শীতে কার্প জাতীয় মাছ চাষের পরামর্শ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের

0

কৃষি খবর ডেস্ক : মাছ চাষ লাভজনক। নানা মৌসুমে মাছ চাষের জন্য ভিন্ন পদ্ধতিও রয়েছে। শীত মৌসুমে কোন মাছ চাষ করলে চাষিরা লাভ পাবেন-তার জন্য এ বার প্রচার শুরু করল জেলা মৎস্য দপ্তর। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উপ-মৎস্য অধিকর্তা (পশ্চিমাঞ্চল) উপল সর বলেন, প্রতি ব্লকে দপ্তরের অফিসারদের গ্রামে গ্রামে বৈঠক করে প্রচার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পঞ্চায়েতে এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেও প্রচার চলছে। ইচ্ছুক চাষিরা মৎস্য দপ্তরে যোগাযোগ করলেই চাষের পদ্ধতি-সহ সবরকম সাহায্য করা হবে। খবর আনন্দবাজার।

মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা-সহ রাজ্যের একাধিক জেলায় রুই, কাতলা, মৃগেল, বাগদা-চিংড়ি এই সব প্রজাতির মাছ চাষই বেশি হয়। কিন্তু এই জাতীয় মাছ সাধারণত শীতকালে খুব কম হয়। কারণ, এই জাতীয় মাছ ১৪-১৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। কিন্তু তাপমাত্রা ওই ডিগ্রির নীচে বা উপরে ওঠানামা করলে মাছেরা পুকুরের বা জলাশয়ের গভীরে চলে যায়। অনেক সময় মাছ মারা যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। ফলে শীতের মরসুমে ওই সব প্রজাতির মাছের বৃদ্ধি হয় না বললেই চলে। কিন্তু এই সময় সাইপ্রিনাস কার্প, রুপোলি রুই বা সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প বা ঘেসো রুই-প্রভৃতি প্রজাতির মাছ চাষের উপযুক্ত সময়। এই সব প্রজাতির মাছ ৪-৫ ডিগ্রি তাপমাত্রাতেও খাবার খেয়ে দ্রুত বাড়তে সক্ষম।

তবে রুই-কাতলা মাছের যেমন স্বাদ তার চেয়ে এই সব মাছের স্বাদ একটু কম। তবে চাহিদা কম নয়। এই সব মাছের এক লক্ষ ডিম পোনার দাম মাত্র চারশো টাকা। তবে এক লক্ষ ডিম ছাড়লে মাত্র ৭-৮ হাজার ডিম পোনা বাঁচবে। বাদ বাকি মারা যাবে। তাতেও লাভ পাবেন চাষিরা। সেপ্টেম্বর মাসের গোড়া থেকে অক্টোবর মাসেই চারা পোনা ছাড়ার সময়।
নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসেও এই মাছের চাষ করা যায়। ৬-৭ মাসের মধ্যে মাছ বিক্রির উপযুক্ত হয়ে পড়ে। ধানের গুঁড়ো, সরষের খোল, গমের আটাই মাছেদের খাবার।

দপ্তর সূত্রের খবর, জেলায় ২২ হাজার হেক্টর জলাশয় মাছ চাষের উপযুক্ত। শীতের মরসুমে যদি মোট জলাশয়ের অর্ধেক জলাশয়েও চাষ হয়-তাহলে ছোট-বড় সব রকম মাছ চাষিরই এই সময় একটা লাভ পাবে। পরে ফের শীত কেটে গেলে ওই মাছ তুলে বাজারে বিক্রি করে রুই, কাতলা-সহ অনান্য মাছ চাষও করতে পারবেন। শীতকালে যে সব মাছ চাষ করলে চাষিরা লাভবান হবেন-তার জন্য প্রচার করে চাষিদের সম্যক ধারণা দেওয়ায় উদ্যোগী মৎস্য দফতর। এমনিতেই প্রতি ব্লকে এক জন করে দফতরের অফিসার থাকেন। এ ছাড়াও জেলা সদর থেকে চাষিদের বিষয়টি জানানো শুরু হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের সহ মৎস্য আধিকর্তা কানাইলাল পতি বলেন, জেলায় যে মাছ চাষির তালিকা আছে তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যাঁদের জলাশয়ে শীতে মাছ চাষ হয় না। তাঁদের তালিকা ধরে শীতকালীন মাছ চাষের বিষয়ে বোঝানো হচ্ছে।

ঘাটালের মাছ চাষি অগ্নি ঘোষ, কেশপুরের মুক্তার আলি, দাসপুরের রবি পাখিরা বলেন, আমরা ফি বছর শীতের মরসুমে এই মাছ চাষ করি। লাভও ভাল থাকে। এই চাষের জন্য সরকারি ভাবে প্রচার প্রয়োজন। এই সব মাছের যে বাজারে চাহিদা রয়েছে, তা মানছেন হোটেল ব্যবসায়ীরাও। যেমন চন্দ্রকোনা রোডের ধাবা মালিক ধনঞ্জয় মালিক, ঘাটাল শহরের হোটেল ব্যবসায়ী মন্টু সাঁতরার কথায়, সিলভার কার্প-সহ এই সব মাছের বাজারে ভাল কাটতি রয়েছে। এখন বাইরে থেকে এই সব মাছ আনাতে হয়। যদি স্থানীয়ভাবে এই মাছ চাষ হয় তাহলে তার স্বাদ যেমন বাড়বে, তেমনই বাড়বে চাহিদাও। দফতরের উপ-মত্‌স্য অধিকর্তা উপল সর বলেন, আমরা চাই চাষিরা সারা বছরই মাছ চাষ করে লাভ পান। তা হলে বাজারে মরসুমি মাছ যেমন ক্রেতারা পাবেন, তেমনি চাষিরা তাঁদের জলাশয় ব্যবহার করে লাভের মুখ দেখতে পাবেন।
//এআরএইচ//

Leave A Reply

Your email address will not be published.