কৃষিখবর ডেস্ক : পুরোনো পেঁয়াজের মতো নতুন পেঁয়াজেও ভালো দর মিলছে না। মৌসুমের শুরুতেই ঢাকার পাইকারি বাজারে দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজের দর নেমেছে কেজিতে ১২-১৫ টাকা। অন্যদিকে পুরোনো পেঁয়াজ ১৫-১৬ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। খবর প্রথম আলো।
প্রতিবছর মৌসুমের শেষ দিকে ও নতুন মৌসুমের শুরুতে সাধারণত দেশি পেঁয়াজের বাজারদর বেশ ভালো থাকে। এবার ঘটেছে বিপরীত ঘটনা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি পেঁয়াজের দাম কম হওয়ার কারণ ভারতীয় পেঁয়াজের বাড়তি সরবরাহ। ভারতে পেঁয়াজের দাম আরও কম। দেশটিতে পেঁয়াজের দর রাজনৈতিক বিতর্কে পরিণত হয়েছে।
দেশের বাজার নিয়ে জানতে চাইলে পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, এবার পেঁয়াজের খুবই করুণ দশা। যাঁরা ভালো দামের আশায় গত বছরের পেঁয়াজ রেখেছিলেন, তাঁদের ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। অন্যদিকে দেশীয় উৎপাদকেরা এখন লোকসানে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
দেশে প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসে। পুরোনো ছোট পেঁয়াজ মাটিতে রোপণ করে যে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়, তাকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বলেন ব্যবসায়ীরা। এ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায় না। বিপরীতে বীজ থেকে উৎপাদিত হালি পেঁয়াজ বছরজুড়ে রেখে দেওয়া যায়। হালি পেঁয়াজ সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসে সরবরাহ শুরু হয়।
মৌসুমের শুরুতে যখন হালি পেঁয়াজ ওঠে, তখন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তা সংরক্ষণ করেন। বছর শেষে ভালো দামে তাঁরা পেঁয়াজ বিক্রি করেন। নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, এ বছর পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। কিন্তু তখন তাঁরা বিক্রি করেননি। আরও দামের আশায় ছিলেন। এরপর দাম কমতে কমতে পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম ১২-১৩ টাকায় নেমে যায়।
তিনি বলেন, এসব পেঁয়াজ কেউ ২৫ টাকা কেজির নিচে কিনতে পারেনি। বছরজুড়ে রাখতে গিয়ে প্রতি মণে ১০ কেজি ঘাটতি হয়েছে। ফলে প্রতি কেজির পেছনে খরচ পড়েছে ৩৩ টাকা। কিন্তু বেচতে হয়েছে তিন ভাগের এক ভাগ দামে।
শ্যামবাজারে নতুন ভারতীয় পেঁয়াজ (মাঝারি আকার) ১৬-১৭ টাকা ও পুরোনো বড় পেঁয়াজ ১৩-১৪ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ওই ব্যবসায়ী। অন্যদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭১ শতাংশ কম।
কারওয়ান বাজারে গতকাল রোববার প্রতি ৫ কেজি দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ ২০ টাকায় বিক্রি করছিলেন বিক্রেতা মো. আনোয়ার। তিনি বলেন, বস্তা নিলে দাম আরও দুই টাকা কম। পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের পুরো বছরটাই খারাপ গেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে ২ লাখ ১২ হাজার হেক্টর জমিতে ২৩ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্য ছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চাহিদা ধরে ২৪ লাখ টনের মতো। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে ১৮ লাখ ৬৬ হাজার টন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে আলোচ্য সময়ে দেশে ১০ লাখ ৪১ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। সব মিলিয়ে ওই অর্থবছরে পেঁয়াজের জোগান আসে ২৯ লাখ টন।
শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন পেঁয়াজ ঢাকার পাইকারি বাজারে যদি ১২-১৫ টাকায় বিক্রি হয়, তাহলে কৃষক পান কেজিতে ১০ টাকার কম। এতে উৎপাদন খরচ ওঠে না।
ভারতের কৃষকেরাও পেঁয়াজের দাম পাচ্ছেন না। চলতি মাসের শুরুতে দেশটির মহারাষ্ট্র রাজ্যের একজন কৃষক ৭৫০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করে মাত্র ১ হাজার ৬৪ রুপি পান, যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পাঠিয়ে দেন তিনি। এরপর পেঁয়াজের দাম নিয়ে ভারতে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়। দেশটির তিনটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস যে ভালো করেছে, তার পেছনে কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম না পাওয়া কৃষকদের ক্ষোভ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হয়।
//এআরএইচ//