Ultimate magazine theme for WordPress.

কৃষি শিক্ষা ও গবেষণায় এগিয়ে মেয়েরা

ব্যানবেইস- এর জরিপ

0

কৃষিখবর প্রতিবেদক : বাংলাদেশে কৃষি শিক্ষা ও গবেষণায় এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। ‘বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস)-২০১৭ সালের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৬ হাজার ৭ শত ৬০ জন শিক্ষাথীর্র মধ্যে ২ হাজার ৮ শত ১৯ জন ছাত্রী অথার্ৎ (শতকরা প্রায় ৪২ ভাগ ছাত্রী), নারী শিক্ষক ১ শত ১৭ জন (শতকরা প্রায় ২০ ভাগ)। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৩ হাজার ৩ শত ১০ জন শিক্ষাথীর্র মধ্যে ১ হাজার ৪ শত ৫৯ জন ছাত্রী অথার্ৎ (শতকরা প্রায় ৪৪ ভাগ ছাত্রী), নারী শিক্ষক ৬৭ জন (শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ)। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১ হাজার ৩ শত ৬১ জন শিক্ষাথীর্র মধ্যে ৭ শত ১ জন ছাত্রী অথার্ৎ (শতকরা প্রায় ৫২ ভাগ ছাত্রী), নারী শিক্ষক ৪৬ জন (শতকরা প্রায় ২৪ ভাগ)। এ পরিসংখ্যান থেকেই বুঝা যাচ্ছেÑ কৃষি শিক্ষার নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েই চলছে।’

কৃষি শিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবন আর সময়োপযোগী প্রযুক্তির আবিষ্কারে ছেলেদের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ে শিক্ষাথীর্রা। ফসলের মাঠ বা কমের্ক্ষত্র কোথাও তারা এখন পিছিয়ে নেই। কৃষির নতুন জাত উদ্ভাবন, উৎপাদন বৃদ্ধি, পশু প্রজনন, ফসল ও মাছের জাত উন্নয়নে তারা সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে।

উপমহাদেশের কৃষি শিক্ষার অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ বাকৃবিতে ছাত্রদের অনুপাতে ও সাফল্যের ধারায় মুকুট পরে ছাত্রীদের দাপিয়ে বেড়ানই প্রমাণ করেছে কৃষি শিক্ষায় এখন কৃষি কন্যাদের রাজত্ব কায়েম হতে চলেছে। এখানকার প্রতিটি ছাত্রীই কৃষি শিক্ষায় তাদের মেধার স্বাক্ষর রাখছে। পশুপালন, পশু চিকিৎসা, কৃষি প্রকৌশল, মৎস্যবিজ্ঞান ও কৃষি অথর্নীতিসহ মোট ছয়টি অনুষদের ৪৩টি বিভাগের প্রতিটিতেই তারা কাজ করছে। প্রতিটি অনুষদেই ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা এখন প্রায় সমানে সমান।

শ্রেণি পরীক্ষার ( সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা) ফলাফলের দিকে তাকালে দেখা যায় মেধা তালিকার অধেের্কর বেশিই দখল করে আছে ছাত্রীরা। অনুষদের সেরা পঁাচের ফলাফলের দিক দিয়ে মেয়েরাই এগিয়ে। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষিকার সংখ্যাও বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে।

ভেটেরিনারি, কৃষি, ফিশারিজ, পশুপালন, কৃষি অথর্নীতি ও গ্রামীণ সমাজ বিজ্ঞান, কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদ এবং ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে আনুপাতিক হারে বেড়েছে ছাত্রী সংখ্যা।

ভালো ফলাফল করা জন্য মেয়েরা আজ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী পদক থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে সফল হচ্ছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশা থেকে শুরু করে বিসিএস, বিএডিসি, বিআরআরআই, বিএআরআই, এসআরডিআইসহ বিভিন্ন সরকারি কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সরকারি- বেসরকারি ব্যাংক, এনজিও, কোম্পানি, চা-বাগান, আখ, পাট গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে।

স¤প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ছয় অনুষদের মোট ছয় শিক্ষাথীের্ক প্রধানমন্ত্রী স্বণর্ পদক-২০১৭ প্রদান করা হয়েছে। স্বণর্পদক পাওয়া ৬ জনই ছিলেন ছাত্রী। পদকপ্রাপ্ত কৃতী শিক্ষাথীর্রা হলোÑ ভেটেরিনারি অনুষদের তানজিন তামান্না মুমু, কৃষি অনুষদের মোছা. আফসানা হান্নান, পশু-পালন অনুষদের জামিয়া ইসমিতা, কৃষি অথর্নীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ইসরাত জাহান মাহফুজা, কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদের নিলিমা দাস এবং মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ইসরাত জাহান টুম্পা।

বাকৃবি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠার পর দেশের একমাত্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পথচলা শুরু। কিন্তু ১৯৭৩ সালের আগে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েরা উচ্চ কৃষি শিক্ষার সুযোগ পায়নি। দেশের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী ভতির্ শুরু হয়। কিন্তু এক কথার মতো সহজ ছিল না ছাত্রী ভতির্। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। একপযাের্য় ছাত্র নেতৃবৃন্দকে আন্দোলনে নামতে হয়েছিল। বাকৃবির তৎকালীন উপাচাযর্ অধ্যাপক ড. এম আমিরুল ইসলাম ছাত্রী ভতির্র প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।

১৯৭২ সালে তৎকালীন উপাচাযর্ অধ্যাপক ড. মোছলেহ উদ্দিনের সময় ১৯৭১-১৯৭২ শিক্ষাবষের্ ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীদের ভতির্ শুরু হয়। সে সময় ছাত্রী সংখ্যা ছিল হাতেগোনা কয়েকজন মাত্র। ১৯৭৩-৭৪ সালে বাকৃবিতে মাত্র ১৭ জন মেয়ে শিক্ষাথীর্ থাকলেও সময় পরিক্রমায় আজ তা বেড়ে প্রায় ৩ সহস্রাধিক। আগে মেয়েদের জন্য মাত্র একটি হল থাকলেও বতর্মানে ৪টি পূণার্ঙ্গ হল রয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় মেয়েদের হলের সংখ্যা এখনো অপ্রতুল।

অনুষদের ডিনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুদূর বগুড়া, দিনাজপুর, ঠাকুরগঁাও, রংপুর, খুলনা, পিরোজপুর, নোয়াখালী, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, পাবনা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সিলেট, রাজশাহী, ভোলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত কৃষিকন্যাদের পদচারণায় মুখরিত এ ক্যাম্পাস। এ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেও মেয়েরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে শিক্ষালাভের জন্য। ছাত্রীরা প্রযুক্তি নিয়ে মাঠ পযাের্য়ও তারা কৃষান-কৃষানিদের সঙ্গে মতবিনিময় করছে। পযের্বক্ষণ করছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষি, মৎস্য ও পশুসম্পদের বতর্মান অবস্থা। তাদের এ উদ্যম কৃষকদের কমর্স্পৃহা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার এ চিত্রটি শুধু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেমনÑ শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়সহ কৃষির উচ্চ প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষিবিদ তৈরি করার গুরু দায়িত্ব পালন করছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর বের হয়ে আসছে হাজার হাজার নারী কৃষিবিদ।

বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস)-২০১৭ সালের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৬ হাজার ৭ শত ৬০ জন শিক্ষাথীর্র মধ্যে ২ হাজার ৮ শত ১৯ জন ছাত্রী অথার্ৎ (শতকরা প্রায় ৪২ ভাগ ছাত্রী), নারী শিক্ষক ১ শত ১৭ জন (শতকরা প্রায় ২০ ভাগ)। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৩ হাজার ৩ শত ১০ জন শিক্ষাথীর্র মধ্যে ১ হাজার ৪ শত ৫৯ জন ছাত্রী অথার্ৎ (শতকরা প্রায় ৪৪ ভাগ ছাত্রী), নারী শিক্ষক ৬৭ জন (শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ)। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১ হাজার ৩ শত ৬১ জন শিক্ষাথীর্র মধ্যে ৭ শত ১ জন ছাত্রী অথার্ৎ (শতকরা প্রায় ৫২ ভাগ ছাত্রী), নারী শিক্ষক ৪৬ জন (শতকরা প্রায় ২৪ ভাগ)। এ পরিসংখ্যান থেকেই বুঝা যাচ্ছেÑ কৃষি শিক্ষার নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েই চলছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী শিক্ষক নিয়োগে অনিহার কথা শোনা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শতের্ এ বিষয়ে তারা বলেন, কতৃর্পক্ষের অনীহার কারণে অনেক সময়ই তারা বাদ পড়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

সংস্কৃতি জগতেও পিছিয়ে নেই কৃষিতে পড়ুয়া মেয়েরা। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, পদচিহ্ন, উদীচী, অঙ্কুর, ত্রিভুজ, নাট্য সংঘ, কম্পাস নাট্য স¤প্রদায়, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, খেলাধুলা, স্কাউটিং সবখানেই তাদের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ প্রশংসার যোগ্য।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সচ্চিদানন্দ দাস চেীধুরী বলেন, ‘কৃষি শিক্ষার পাশাপাশি কৃষিকন্যারা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পযাের্য়র সাংস্কৃতিক কমর্কাÐ, খেলাধুলা, স্কাউটিং, বিএনসিসি, বঁাধনে স্বেচ্ছাসেবক ও অন্যান্য কমর্কাÐে ব্যাপক অবদান রাখছে।’ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা বিভিন্ন খেলায় বেশ কয়েকবার বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। স্কাউটিংয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। কৃষি বিষয়ে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রেও রয়েছে তাদের সাফল্য।

বাকৃবির কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদের তৃতীয় বষের্র ছাত্রী চিত্রা রাণী পাল বলেন, ‘কৃষি শিক্ষায় মেয়েদের অনেক বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু তা সত্তে¡ও আমরা যথেষ্ট পারদশির্তার সঙ্গে শিক্ষা অজর্ন করে যাচ্ছি। শুধু তাই নয়, বতর্মানে মেয়েরা কৃষি ক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সফলতার সঙ্গে কাজ করছে।’ উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশেও মেয়েরা এনজিও থেকে শুরু করে মাকেির্টং পযর্ন্ত বিভিন্ন স্তরের সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচাযর্ অধ্যাপক ড. আলী আকবর বলেন, কিন্তু একটা সময় ছিল যখন লোকে মনে করত, কৃষি শিক্ষা পড়বে ছেলেরা, মেয়েরা পড়বে গাহর্স্থ্য বিজ্ঞান। বতর্মানে এ ধারণার পরিবতর্ন এসেছে। কৃষি ক্ষেত্রে এবং কৃষি শিক্ষার ক্ষেত্রে এখন ছাত্রীদের জয়জয়কার। তিনি আরো বলেন, ‘কৃষির সূচনা মেয়েরাই করেছিল। গবেষণা ও নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনে কৃষিকন্যাদের অংশগ্রহণ তারই প্রতিফলন। তাদের মাধ্যমে দেশের কৃষির সাফল্য আরো ত্বরান্বিত হবে এটাই প্রত্যাশা তার।

//এআরএইচ//

Leave A Reply

Your email address will not be published.