কৃষিখবর ডেস্ক : ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিন চব্বিশ পরগনা জেলার ঝড়খালির মাছ চাষি বিশ্বজিৎ মাহাতো, উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বাদুড়িয়ার মাছ চাষি মনিরুল ইসলাম বা নদীয়ার নবদ্বীপের মাছ চাষি হরিলাল দাস এরা সকলেই দীর্ঘ দিন ধরেই মাছ চাষ করছেন, সম্প্রতি তাদের মাছ চাষে লাভের পরিমান কমে আসছিল। তাই তারা দ্বারস্ত হলেন মৎস্য বিজ্ঞানীদের। মাছ চাষে প্রশিক্ষন নিয়ে মৎস্য আধিকারিকদের পরামর্শ মতো নতুনভাবে বিশেষ এক ধরনের মাছ চাষ শুরু করলেন। মাছটির নাম জয়ন্তী রুই।
এই জয়ন্তী রুই প্রথম উৎপাদন করেন ভুবনেশ্বরের সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্রেশ ওয়াটার অ্যাকোয়া কালচার (আই,সি,এ,আর) এর বিজ্ঞানীরা। গত বছরের ৪ আগষ্ট কল্যানী ফ্রেশ ওয়াটার ফিশারীজ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং সেন্টারে এসেছিলেন রাজ্যের ৬টি জেলা থেকে (নদীয়া, হুগলী, উত্তর ও দক্ষিন চব্বিশ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর) ২৪ জন মাছ চাষি, যারা সাড়ে ৪২ লক্ষ জয়ন্তী মাছের ডিম পোনা নিয়ে যান, যে ডিম পোনার বয়স মাত্র ৩ দিন।
ফ্রেশ ওয়াটার ফিশারীজ রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং সেন্টারের উপ মৎস্য অধিকর্তা ড. অনিন্দ্য সুন্দর ঘোষ বলেন উড়িষ্যার ভুবনেশ্বরের মৎস্য বিজ্ঞানী কান্তা দাস মহাপাত্র এই জয়ন্তী রুই মাছের আবিস্কার করেন। ভারতবর্ষে পাঁচটি বড় নদীর (গঙ্গা, শতদ্রু, ব্রন্মপুত্র, গোমতী, যমুনা) এই পাঁচটি নদী থেকে বিভিন্ন প্রজাতির রুই মাছের ওয়াইল্ড সংগ্রহ করে ও আই,সি,এ.আর এর নিজস্ব উৎপাদিত এক প্রকার রুই এর মধ্যে প্রজন্মের মিলন ঘটানো হয়েছে। এইভাবে জন্ম দেওয়া হয়েছে জয়ন্তী রুই মাছের।
এর পর দীর্ঘ দিন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর রাজ্যে এই প্রথম জয়ন্তী রুই এর ১৭ তম প্রজন্ম মাছ চাষিদের হাতে তুলে দেওয়া হল। জয়ন্তী রুই মাছ চাষের সুবিধা অনেক। সাধারন মাছের মতো চাষ পদ্ধতি হলেও এর বৃদ্ধি প্রায় ৩৩ থেকে ৪১ শতাংশ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশী, দেখতে লালছে কালার, সাধারন রুই মাছের থেকে এই জযন্তী রুই এর মৃত্যুর হার অনেক কম এবং পচনশীলতা অনেক কম।
পরীক্ষা করে দেখা গেছে এক বছরে দেড় কেজি পর্যন্ত ওজন হতে পারে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়া ব্লকের বড়বাড়ি গ্রামের মাছ চাষি দীপক কুমার বাগ, এবং দ্বারিবেড়িয়া গ্রামের নারায়ন বর্মন কল্যাণীতে মাছের ডিম পোনা নিতে এসেছিলেন তারা নতুন এই মাছ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করলেন।
হলদিয়া ব্লকের মৎস্য সম্প্রসারন আধিকারিক সুমন কুমার সাউ জানান হলদিয়া ব্লকে ৯ লক্ষ জয়ন্তী রুই এর ডিম পোনা আনা হয়েছে আগামী দিনে মাছ চাষিদের সমস্ত রকমের সহযোগিতা করা হবে।
//এআরএইচ//