কৃষিখবর ডেস্ক : শীত কালীন সব্জির মধ্যে ফুলকপি ও বাধাকপি অন্যতম সদস্য। সারা দেশ ব্যাপি চাষ হয়ে থাকে পুষ্টি ও স্বাদে অনন্য এ সব সবজি। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হলে। অনেকের প্রশ্ন থাকে কিভাবে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। তাই এবারে ফুলকপি ও বাধাকপির রোগবালাই নিয়ে সবিস্তার আলোকপাত করা হয়েছে।
শিকড় পঁচা রোগঃ
পিথিয়াম, ফাইটোপথোরা, রাইজোকটোনা সোলানী, স্কেলোরিসিয়াম প্রজাতির ছএাক দ্বারা ফুলকপি ও বাধাকপির গোড়া বা শিকড় পঁচা রোগ হয়ে থাকে। ফুলকপি, বাধাকপি, মুলা, ব্রোকলি, শালগম প্রভৃতি সব্জিতে এ রোগ ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে থাকে।
রোগের লক্ষণঃ
(১) চারার গোড়া বা শিকড় পঁচে ঢলে পড়ার মাধ্যমে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
(২) অঙ্কুরোদগমের বীজ পঁচে যায় বা গজালেও হঠাৎ করে চারা মরে যায়।
(৩) চারার গোড়ায় বাদামী বর্ণের পানি ভেজা দাগ দেখা যায়।
(৪) আক্রমনের দুই দিনের মধ্যে চারা গাছটি ঢলে পড়ে ও আক্রান্ত অংশে তুলারমত সাদা মা সেলিয়াম দেখা যায়।
(৫) চারা টান দিলে সহজে মাটি থেকে উঠে আসে।
প্রতিকারঃ
(১) বীজতলায় পরিত্যাক্ত অংশসহ শুকনো খড় পোড়াতে হবে।
(২) দীর্ঘ সময় ছায়া পায় এমন স্থানে বীজতলা করা যাবে না।
(৩) পরিমিত সেচ প্রয়োগ ও পর্যাপ্ত জৈব সার ব্যবহার করতে হবে।
(৪) পানি নিকাশ ব্যবস্থা ভাল থাকতে হবে যাতে জমি স্যাঁতস্যাতে না হয়।
(৫) প্রোভ্যাক্স বা কার্বেন্ডাজিম প্রতি কেজি বীজে ২-৩ গ্রাম হারে মিশে বীজ শোধন করতে হবে।
(৬) রৌদ্র তাপ, গরম পানি, কাঠের গুড়া, মুরগির বিষ্টা প্রভৃতি দিয়ে মাটি শোধন করতে হবে।
(৭) ম্যানকোজেব ছএাক নাশক ২ গ্রাম হারে মিশে গাছের গোড়া ভিজে দিতে হবে।
(৮) প্রতি লিটার পানিতে কপার অক্সিক্লোরাইড ২.৫ গ্রাম অথবা কার্বেন্ডাজিম ১ গ্রাম হারে ৭ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
ফুলকপির কার্ড রট রোগঃ
এ রোগটি ফিউজেরিয়াম ইকোইজিটি ও অলটারনেরিয়া প্রজাতির ছএাক এবং আরউইনিয়া কেরোটোভোরা নামক ব্যাকটেরিয়া সম্মিলিত ভাবে এ রোগ সৃস্টি করে। এ রোগের কারনে ফুলকপির সমস্ত ফুল নষ্ট হয়ে যায় বা খাওয়ার অনউপযোগী হয়ে যায়।
রোগের লক্ষণঃ
(১) ফুলকপির কার্ডে প্রথমে বাদামী রং এর গোলাকৃতি দাগ দেখা যায় পরে একাধিক দাগ মিশে বড় দাগ সৃষ্টি করে।
(২) ব্যাকটেরিয়া আক্রমণে কার্ডে দ্রুত পঁচন ধরে নষ্ট হয়ে যায়।
(৩) আক্রান্ত কার্ড বা মাথা থেকে খুব কম পুষ্প মঞ্জরী বের হয় এবং উহা খাওয়ার অযোগ্য হয়ে যায়।
প্রতিকারঃ
(১) সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্র করতে হবে ।
(২) প্রোভ্যাক্্র বা কার্বেণ্ডাজিম প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে বীজ শোধন করতে হবে।
(৩) ইপ্রোডিয়ন এবং কার্বেণ্ডাজিম ছত্রাক নাশক প্রতিটি আলাদা ভাবে ০.২ % হারে মিশে ১২-১৫ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে। তবে ঔষধ প্রয়োগের ৫ দিন পর্যন্ত ফসল তোলা যাবে না।
অলটারনারিয়া স্পট বা ব্লাইটঃ এ রোগ অল্টারনারিয়া ব্রাসিসি ও ব্রাসিসিকোলা ফুলকপি ও বাঁধাকপিতে আক্রমণ করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে থাকে।
রোগের লক্ষণঃ
(১) সবজি ফসলে অল্টারনারিয়া ব্রাসিসি পাতায় ছোট ছোট গোলাকার দাগ সৃষ্টি করে।
(২) দাগগুলি ধীরে ধীরে বড় হয়ে বড় আকার ধারন করে।
(৩) দাগগুলো পর পর সাজানো বা গোলাকার বলয় সৃষ্টি করে।
(৪) অল্টারনারিয়া ব্রাসিসিকোলা ছোট ছোট গাঢ় বাদামী বা কালচে রং এর দাগ সৃষ্টি করে।
(৫) পরে অংসখ্য কাল গোলকৃতির দাগ সৃষ্টি হয় ও বীজ চিটা হয়ে যায়।
(৬) বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা কমে যায়।
প্রতিকারঃ
(১) রোগ মুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
(২) কার্বে-জিম প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে বীজ শোধন করতে হবে।
//এআরএইচ//