Ultimate magazine theme for WordPress.

বাহারী ফুল লিলিয়াম চাষে বারি বিজ্ঞানীদের সাফল্য

0


গাজীপুর প্রতিনিধি : নজরকাড়া রং, সৌন্দর্য আর ঘ্রাণের কারণে বিশ্বজোড়া চাহিদার শীর্ষে যে লিলিয়াম ফুল, তা এখন বাংলাদেশেই উৎপাদন হবে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে বাংলাদেশে লিলিয়াম চাষে সফল হয়েছেন। তারা ১৫ বর্ণের লিলিয়াম ফুল ফোটাতে পেরেছেন। এ ফুল প্রচণ্ড ঠাণ্ডার দেশ নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, কানাডা, আমেরিকা, চীনে জন্মে। লিলিয়াম লিলিয়েসি পরিবারের ফুল।

বিজ্ঞানীরা জানান, বিশ্বে দুই ধরনের লিলিয়ামের বাণিজ্যিক চাষ হয়। একটি ওরিয়েন্টাল, অন্যটি এশিয়াটিক লিলিয়াম। ওরিয়েন্টাল সুগন্ধযুক্ত, কিছুটা দেরিতে ফোটে। অন্যদিকে এশিয়াটিক লিলিয়ামে সাধারণত গন্ধ হয় না, কম সময়ে ফোটে। এর দুই শতাধিক প্রজাতি বা রং আছে। লিলিয়ামের চাহিদা একেক দেশে একেক ধরনের। উজ্জ্বল আকর্ষণীয় রং এবং ফোটার পর দীর্ঘস্থায়িত্বের কারণে বাংলাদেশের ফুলপ্রেমীদের কাছে লিলিয়াম ব্যাপক সমাদৃত।

চাহিদার কারণে আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রচুর লিলিয়াম আমদানি হয়। বারির ফুল বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফারজানা নাসরীন খান জানান, বাংলাদেশের আবহাওয়া উষ্ণ প্রকৃতির। উষ্ণ অঞ্চলে এ ফুলের চাষ হয় না। ব্যাপক চাহিদার কথা চিন্তা করে ২০১৫ সালে তার তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বারি) প্রথম সীমিত আকারে এশিয়াটিক লিলিয়াম চাষের ওপর গবেষণা শুরু হয়।

প্রাথমিক সফলতা পেয়ে ২০১৭ সালে ইউএসএআইডি ও বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন জাত সংগ্রহ ও বংশ বিস্তারে কন্দ সংগ্রহের কাজ চলে। বিদেশ থেকে গত নভেম্বরের শুরুতে লাগানো কন্দ পূর্ণাঙ্গ গাছে পরিণত হওয়ার পর জানুয়ারির শেষের দিকে ফুল ফুটতে শুরু করে। সরাসরি সূর্যের তাপ সহ্য হয় না বলে শেড দিয়ে কন্দ লাগানো হয়। এখন বেডজুড়ে ঝলমল করছে কমপক্ষে ১৫ রঙের লিলিয়াম ফুল।

বাহারি ফুল দেখে তিনিসহ উচ্ছ্বসিত বারির মহাপরিচালক, বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তিনি আরও জানান, লিলিয়াম চাষ করতে হলে প্রয়োজন বেলে দো-আঁশ মাটির। সাধারণত কন্দ লাগানোর ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফুল ফুটতে শুরু করে। পূর্ণবয়সী লিলিয়াম গাছ দেড় থেকে পৌনে দুই ফুট লম্বা, রজনীগন্ধার মতো এর স্টিক হয়।

আদিকাল থেকে যেসব দেশে এ ফুলের চাষ হয়, সেসব দেশের আবহাওয়া প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থাকায় কন্দ সংরক্ষণ তেমন কঠিন নয়। কিন্তু বাংলাদেশের মতো উষ্ণ দেশে লিলিয়ামের বংশ বিস্তারের জন্য কন্দ সংগ্রহ ও সংগ্রহ করা অত্যন্ত কঠিন। কন্দ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা না গেলে প্রতি বছর নতুন করে বিদেশ থেকে কন্দ আমদানি করতে হবে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। তাই তারা এখন কন্দ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের টেকনোলজি নিয়ে কাজ করছেন। কন্দ, বীজ ও কলম পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনের কাজ করছেন। ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আযাদ লিলিয়াম ফুলের চাষ সম্পর্কে জানান, ‘আন্তর্জাতিক ফুলবাণিজ্যে লিলিয়াম চতুর্থ স্থানে। সারা বিশ্বে এখন প্রায় ৯০ ধরনের লিলিয়ামের চাষ হয়।
আমাদের দেশে এ ফুল প্রতিটি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায় বিক্রি হয়। সঠিক সময়ে সংগ্রহ করা গেলে (কুঁড়িতে রং আসার সময়) টবে এ ফুল ১৪-১৫ দিন সতেজ থাকে।’

বাংলাদেশের আবহাওয়ায় শীতকালে এ ফুল চাষে তারা সফল হয়েছেন। এখন চলছে জাত নির্বাচন, সহজে উৎপাদন ও কন্দ সংগ্রহ এবং রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রতিরোধবিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা। আনুষ্ঠানিকতা শেষে এ ফুল চাষিদের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে।
//এআরএইচ//

Leave A Reply

Your email address will not be published.