Ultimate magazine theme for WordPress.

ঝুঁকিতে পুঁটি, ট্যাংরাসহ ৯১ প্রজাতির দেশি মাছ

গবেষণার তথ্য

0

কৃষিখবর প্রতিবেদক : জেলে ও চাষিদের ছোট ছোট উদ্যোগে দেশে বছরে ১৬ লাখ টন মাছ উৎপাদিত হয়। উন্মুক্ত জলাশয় থেকে আহরণ করা এসব মাছের বেশির ভাগই দেশি প্রজাতির। এদের পুষ্টিমানও বেশি। কিন্তু ধারাবাহিক দূষণ ও অতিরিক্ত আহরণসহ নানা কারণে দেশি মাছের অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

মৎস্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও মৎস্য অধিদপ্তরের পৃথক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দেশি প্রজাতির ৯১টি মাছ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে। এসব গবেষণায় প্রাকৃতিক উৎসের মাছের বেশ কিছু ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে। মাছের বিচরণ এলাকা নদী, হাওর–বাঁওড় ও বিল দূষিত হয়ে যাচ্ছে।

এতে বলা হয়েছে, রাজধানীর চারপাশের নদী বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, বালু, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলী প্রায় মাছশূন্য হতে চলেছে। এ ছাড়া দেশে এ পর্যন্ত ৩০টি আগ্রাসী প্রজাতির বিদেশি মাছ ঢুকে পড়েছে, যা দেশি ছোট মাছগুলো খেয়ে সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে। দেশের কৃষিকাজে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ টন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত হয়, যা মাটি চুইয়ে জলাভূমিতে যায়। এর কারণে মাছের উৎপাদন কমছে। এ ছাড়া ধারাবাহিক দূষণ ও পলি পড়ে নদী ভরাট হওয়ায় মাছের বিচরণ কমে আসছে।

প্রাকৃতিক উৎসের মাছের বৈচিত্র্য ও ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে গবেষণা করেছে ওয়ার্ল্ড ফিশ। সংস্থার গবেষক মোস্তফা এ আর হোসেন, মাহমুদুল ইসলাম ও মো. নাহিদুজ্জামান গবেষণায় নেতৃত্ব দেন। এই গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ১৩ লাখ জেলে সরাসরি ক্ষুদ্রায়তনে মৎস্যসম্পদ আহরণের (এসএসএফ) সঙ্গে জড়িত। সুন্দরবন, হাওর, বাঁওড়, নদী ও বিল থেকে তাঁরা এসব মাছ আহরণ করেন। এখন পর্যন্ত এসব উৎস থেকে ২৬৫ প্রজাতির মাছ পাওয়া গেলেও তা ধীরে ধীরে কমে আসছে। বর্তমানে ৯১ প্রজাতির মাছ এতই কমে আসছে যে এগুলো বিলুপ্তির দিকে এগোচ্ছে। এর মধ্যে পাঙাশের প্রজাতি ২টি, গুতুমের ২টি, চেলার ৭টি, ডানকিনার ২টি, ঘরপোইয়ার ২টি, মহাশীরের ৩টি, পুঁটির ১০টি, ভোলের ২টি ও ট্যাংরার ৬টি প্রজাতি রয়েছে।

গবেষকেরা বলছেন, সরকার ইলিশ রক্ষায় যেভাবে অভয়াশ্রম ঘোষণা ও প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ করাসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, দেশি প্রজাতির মাছকেও একইভাবে রক্ষা করতে হবে। ইলিশের ক্ষেত্রে সরকারের নেওয়া উদ্যোগের কারণে গত এক যুগে উৎপাদন বেড়েছে আড়াই গুণ। তাঁরা জানান, ২০১৪ সালে যেখানে একেকটি ইলিশের গড় ওজন ছিল ৪৪০ গ্রাম, ২০১৮ সালে এসে ৮৮০ গ্রামে দাঁড়িয়েছে।

জানতে চাইলে ওয়ার্ল্ড ফিশের ইকো ফিশ প্রকল্পের প্রধান অধ্যাপক আবদুল ওয়াহাব বলেন, ইলিশ রক্ষা ও উৎপাদন বাড়ানোতে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি মডেল বা আদর্শ কৌশল তৈরি করেছে। এতে একদিকে যেমন জেলেদের আয় বাড়ছে, অন্যদিকে দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে দাম কমছে। উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছের জাত রক্ষা ও উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রেও সরকার অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠাসহ নানা উদ্যোগ নিতে পারে।
//এআরএইচ//

Leave A Reply

Your email address will not be published.