সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ‘আমের রাজ্য’ খ্যাত সাতক্ষীরা জেলার গাছ থেকে আম সংগ্রহের সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের যৌথ উদ্যোগে নিরাপদ আম বাজারজাতকরণ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এ ক্যালেন্ডার প্রকাশ হয়।
সাতক্ষীরায় এ বছর প্রণয়ন করা আম ক্যালেন্ডারে গোবিন্দভোগ আম ১২ মে থেকে বাজারজাত করতে পারবে জেলার আমচাষিরা। গোপাল ভোগ আম ১৫ মে, হিমসাগর ২২ মে, ল্যাংড়া ২৯ মে এবং আম্রপলি আম ১৮ জুন গাছ থেকে পেড়ে বাজারবাত করণের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে সাতক্ষীরার আম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপের বাজার দখল করেছে। এই অর্জন ধরে রাখতে হলে এবং দেশের মাটিতেও সাতক্ষীরার আমের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে আম পাড়ার ১৫ দিন আগে যে কোনও ধরনের স্প্রে বন্ধ করতে হবে। আম সংগ্রহের স্থান ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে। আম গাছে থাকা অবস্থায় বা পেড়ে কার্বাইট ব্যবহার করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আম মৌসুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত দিনে দুই বার বাজার মনিটরিং করা হবে। আম পরিপক্ক হওয়ার আগে আম গাছ থেকে পাড়া যাবে না। প্রকাশিত ক্যালেন্ডারের বাইরে আম পরিপক্ক হলে কৃষি কর্মকতাদের লিখিত অনুমোদন সাপেক্ষে আম পাড়া যাবে। আম বাজারজাত ও বিদেশে রফতানির স্বার্থ পরিপন্থী কোনও কাজ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারধণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ অরবিন্দ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার কৃষিবিদ মো. নুরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার আমজাদ হোসেন, কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার শেখ ফজলুল হক মনি, কলারোয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মহসীন আলী, তালা উপজেলা কৃষি অফিসার সুধাংশু শেখর দাশ, বড় বাজার কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রওশন আলী, আমচাষি জাহাঙ্গীর হোসেন, মোকসেদ মোড়লসহ জেলার আম ব্যবসায়ী, চাষিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস প্রতিনিধি।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এ লক্ষ্যে জেলার প্রায় ৪ হাজার ১০০ হেক্টর জমির ৩ হাজার ৯৮৯টি বাগানে আম গাছ পরিচর্যা করা হচ্ছে।
এর মধ্যে সদর উপজেলার ১ হাজার ২৩০ হেক্টর জমির ১ হাজার ৫৪০টি বাগানে ১২ হাজার ৫১০ মেট্রিক টন, কলারোয়ার ৬৫০ হেক্টর জমির ১ হাজার ৩৫০টি বাগানে ৬ হাজার ৩৫ মেট্রিক টন, তালায় ৭১৫ হেক্টর জমির ১ হাজার ৪৫০টি বাগানে ৭ হাজার ৬০ মেট্রিক টন, দেবহাটায় ৩৮০ হেক্টর জমির ৪৭৭টি বাগানে ৩ হাজার ৬৮৫ মেট্রিক টন, কালিগঞ্জে ৮২৫ হেক্টর জমির ১৪২টি বাগানে ৮ হাজার ৮২০ মেট্রিক টন, আশাশুনিতে ১৪০ হেক্টর জমির ১৯০টি বাগানে ১ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন ও শ্যামনগরে ১৬০ হেক্টর জমির ১৫০টি বাগানে ১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
এদিকে, সাতক্ষীরা জেলা থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩১.৮৩ মেট্রিক টন এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৭ মেট্রিক টন নিরাপদ ও বালাইমুক্ত আম রফতানি করা হয়। চলতি মৌসুমেও আম রফতানির লক্ষ্যে জেলার ৫০০ কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
//এআরএইচ//