Ultimate magazine theme for WordPress.

হাওরে সড়ক সংকট : ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ কৃষক

0

এ আর হাবিব : সড়ক সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত হাওর অঞ্চলের লাখ লাখ কৃষক। বিশেষ করে হাওরবাসীর প্রধান ফসল বৈশাখে উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। সড়ক না থাকায় জমিতেই পাকা ধান মাড়াই করে ব্যাপারীদের কাছে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। যুগের পর যুগ এভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। এ পরিস্থিতিতে তারা হাওর এলাকায় আবাদ হওয়া ধান পরিবহনে সাবমার্জিবল (ডুবন্ত) রোড নির্মাণের দাবি করেছেন। ইতিমধ্যে সাবমার্জিবল রোড নির্মাণের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইকবাল আহমদ।

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি-সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর হাওরের দুই লাখ ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে।

হারাকান্দি গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ‘বৈশাখ মাসে কৃষকরা জমির পাশে ধান মাড়াই করে ধানের খলায় শুকানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু শুকনো ধান সড়ক বা নৌপথে নিয়ে বাড়ির গোলায় ওঠাতে পারি না। কমদামে বেপারীদের কাছে বিক্রি করে দিতে হয়।’

হাওর থেকে ছোট ছোট খাল দিয়ে নৌকার মাধ্যমে ধান পরিবহন করা হলেও এখন সেই সুযোগ নেই জানিয়ে দৌলতপুর গ্রামের বিশ্বরঞ্জন দাস বলেন, ‘অনেক আগে হাওরের মধ্যভাগে ছোট ছোট খাল ছিল। সেগুলো দিয়ে নৌকায় বোঝাই করে পাকা ধান বাড়িতে নিতে পারতেন কৃষকরা। এখন হাওরের বুকে কোনও খালের অস্তিত্ব নেই। এছাড়া জমির আইল দিয়ে ধানের বস্তা মাথায় করে নিয়ে যাওয়া যায় না। অন্যদিকে সরু আইল দিয়ে গরুর গাড়ি, ট্রলি, ঠেলাগাড়ি কোনও কিছু চলে না। তাই অসময়ে ধান বিক্রি করে ক্ষতির মুখে পড়েন হাজার হাজার কৃষক।’

আশারচর গ্রামের হিফজুর রহমান বলেন, ‘হাওরে যারা ধান চাষ করেন তাদের জমি বসতবাড়ি থেকে ৫ থেকে ১০ মাইল দূরে। এত দূরে ধান পরিহনের কোনও সুযোগ তাদের নেই।’

আবাদ হওয়া ধান পরিবহনে সাবমার্জিবল (ডুবন্ত) রোড নির্মাণের দাবি তুলেছেন কৃষকরা। মল্লিকপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন বলেন, ‘প্রতি বছর জমিতে ধান লাগানোর পর স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে হাওরের ধান পরিবহনে সড়কে মাটি ফেলা হয়। বর্ষাকালে সেই মাটি আবার ধুয়েমুছে পরিষ্কার হয়ে যায়। এজন্য হাওরের বুকে ধান পরিবহনের জন্য সাবমার্জিবল রোড নির্মাণ করা প্রয়োজন। এসব সড়ক দিয়ে শুষ্ক মওসুমে ধান পরিবহনের পাশাপাশি হাওরের লোকজন চলাচলও করতে পারবেন। আবার বর্ষাকালে পানির নীচে চলে যাবে। তবে এর মধ্যে হাওরবাসী পাকা ধান গোলায় তোলার সুযোগ পাবেন।’

সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইকবাল আহমদ বলেন, অনেক হাওরের সাবমার্জিবল সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। আবার কোনও কোনও হাওরে সাবমার্জিবল সড়ক চালু রয়েছে। তবে কৃষকদের সুবিধার জন্য এটি ব্যাপকভাবে করতে হবে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘কৃষকদের জমি থেকে পাকা ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য হাওরের বুকে ডুবন্ত সড়ক নির্মাণ এখন সময়ের দাবি। তাহিরপুর উপজেলার অন্যতম শনির হাওর ও মাটিয়ান হাওরের অবস্থান। এসব হাওরে হাজার হাজার কৃষক ধান চাষ করে থাকেন। হাওরের ডুবন্ত সড়ক নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরবো।’

সুনামগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, সুনামগঞ্জ-১ নির্বাচনি এলাকার প্রতিটি হাওরে কৃষকের ধান পরিবহনের জন্য ডুবন্ত সড়ক নির্মাণ করে দেওয়া হবে। তবে এর জন্য কিছুটা সময় লাগবে। কারণ হাওর এলাকায় মাত্র তিন মাস প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়। পর্যায়ক্রমে ডুবন্ত সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
//এআরএইচ//

Leave A Reply

Your email address will not be published.